বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৯ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম:
বিদায়ের ঘণ্টা বাজছে ২০১৯ সালের। দরজায় কড়া নাড়ছে নতুন বছর। নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি কেউ কেউ নতুন বছরের পরিকল্পনাও সাজাতে বসে গেছেন। আনন্দ-বেদনা, আশা-নিরাশার ভেলায় চড়ে সবাই ২০১৯ সালকে বিদায় জানানোর প্রস্তুতির মাঝে মনে উঁকি দিচ্ছে নতুন ২০২০ কে নিয়ে নানা স্বপ্ন।
অনেক স্বপ্ন, অর্জনের পাশাপাশি ২০১৯ আমাদের দিয়েছে কিছু হারানোর ক্ষত। এ বছর সিলেটের বেশ কয়েকজন আলেম পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। যাদের মাধ্যমে মানুষ পেয়েছে সত্য সুন্দরের শিক্ষা।
মাওলানা খলীলুর রহমান (২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯): সিলেটের খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া কাসিমুল উলুম দরগাহ মাদ্রাসার প্রবীণ মুহাদ্দিস মাওলানা খলীলুর রহমান ২৪ ফেব্রুয়ারি বুধবার বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে সিলেটের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তিনি দরগাহ মাদরাসায় হাদিসের খেদমতের পাশাপাশি হজরত শাহ পরান রহ. মাজার মসজিদের খতিবও ছিলেন।
মুফতি আবুল কালাম যাকারিয়া (১১ মার্চ, ২০১৯): হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ১১ মার্চ ইন্তেকাল করেন দেশের অন্যতম ফিকহ বিশারদ আলেম ও সিলেটের জামিয়া দরগাহে হজরত শাহজালালের মোহতামিম মুফতি আবুল কালাম যাকারিয়া।
মুফতি যাকারিয়া ছিলেন ইসলামি আইন শাস্ত্রে সমকালীন সিলেটের তুলনাহীন ব্যক্তিত্ব। যে-কেউ যেকোনো সময় তার কাছ থেকে যেকোনো ধরনের মাসআলা, সরাসরি হোক কিংবা মোবাইল ফোন, জেনে নিতে পারত।
দরগাহ মাদরাসার মুহতামিমের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বেশ কিছু বছর ধরে দরগাহ মসজিদের ইমাম ও খতিবও ছিলেন তিনি। ছিলেন দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের সিলেট জেলার আমির।
শফিকুল হক আমকুনী (২০ এপ্রিল, ২০১৯ ): জামিয়া মাহমুদিয়া ইসলামিয়া সোবহানীঘাট সিলেটের প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম মাওলানা শফিকুল হক আমকুনী ২০ এপ্রিল ২০১৯ ইন্তেকাল করেছেন।মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি স্ত্রী, ৩ ছেলে ৫ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
মাওলানা আমকুনী নিজ গ্রাম সুন্দিশাইল মসজিদ থেকে শিক্ষাজীবনের সূচনা করেন। এরপর জামিয়া হুসাইনিয়া রানাপিং, জামিয়া দেউলগ্রাম, জামিয়া ঢাকা দক্ষিণ মাদ্রাসায় প্রাথমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা শেষ করেন। পরবর্তীতে তিনি মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা ও পাকিস্তানের জামিয়া বিন্নুরী নিউ টাউন থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন।
বরেণ্য এ আলেম সিলেট নগরীর সোবাহানীঘাট জামিয়া মাহমুদিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম, সোবহানীঘাট মসজিদের মুতাওয়াল্লী ও খতিব হিসেবে আজীবন দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
আল্লামা শিহাব উদ্দীন (১ জুন, ২০১৯): সিলেটের প্রাচীনতম দীনি বিদ্যাপীঠ জামিয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গার শায়খুল হাদিস মাওলানা শিহাবুদ্দীন ১ জুন ইন্তেকাল করেন।
এ ছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন ধরে সিলেটের আঞ্চলিক শিক্ষাবোর্ড আযাদ দ্বীনী এদারার নাজিমে ইমতেহান হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। তাসাউফের লাইনে ছিলেন খলিফায়ে মাদানি হজরত শায়খে কৌড়িয়া রহ.-এর উচ্চ পর্যায়ের খলিফা। হজরত শায়খে রেঙ্গা ও কৌড়িয়ার স্নেহধন্য ও অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজনও ছিলেন তিনি।
মাওলানা ফখরুদ্দীন (২০ জুন, ২০১৯): সিলেটের বরেণ্য আলেম সদর উপজেলার জামেয়া আরাবিয়া ইসলামিয়া দনুকান্দি মাদরাসার শায়খুল হাদিস মাওলানা ফখরুদ্দীন সাদিক সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হার্ট অ্যাটাক করে ২০ জুন মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বিয়ানীবাজার উপজেলার সহ সভাপতি দায়িত্বে ছিলেন। সিলেট বিভাগের ঐতিহ্যবাহী ইসলামী বিদ্যাপীট জামেয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর থেকে প্রথম দাওরায়ে হাদিস কৃতিত্বের সাথে পাস করেন।
তিনি ঢাকা উত্তর রানাপিং আরাবিয়া হোসাইনিয়া জামেয়া কাসিমূল উলুম মেওয়া মাদরাসাসহ সিলেটের বিভিন্ন মাদরাসার শায়খুল হাদিস ও মুহাদ্দিস হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন। মাওলানা ফখরুদ্দীন সাদিকের বাড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলার ১১নং লাউতা ইউনিয়নের বাহাদুরপু টিকরপাড়া গ্রামে।
আল্লামা বালাউটি: আল্লামা ফুলতলী (রহ.)-এর খলিফা আল্লামা শুয়াইবুর রহমান বালাউটি হুজুর ৩ অক্টোবর ইন্তেকাল করেন। কর্মজীবনে তিনি ১৯৬২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বাদেদেওরাইল ফুলতলী দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট ছিলেন। আটগ্রামের আমজাদিয়া দাখিল মাদ্রাসায়ও তিনি সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি জালালপুর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। নিজ বাড়ি জকিগঞ্জের রতনগঞ্জের বালাউটে তিনি দারুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি ৮ ছেলে ও ৩ মেয়েসহ অসংখ্য ভক্ত, মুরিদান ও শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।
নুরুল ইসলাম বিশ্বনাথী: ১৫ ডিসেম্বর শনিবার বৃহত্তর সিলেটের বিশিষ্ট আলেম গহরপুরী র. এর খলিফায় মাওলানা নুরুল ইসলাম বিশ্বনাথী নগরীর একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।
নুরুল ইসলাম বিশ্বনাথী আতাপুর মাদরাসা, কালিগঞ্জ মহিলা মাদরাসা, বাগিচা বাজার মাদরাসা বিশ্বনাথ এর মোহতামিম ছিলেন। এছাড়াও তিনি খেলাফত মজলিস বিশ্বনাথ উপজেলার সাবেক সভাপতি ছিলেন।
মাওলানা আবদুল খালিক (কিয়ামপুরী হুজুর): ওসমানী নগর থানাধীন জামেয়া দারুসসুন্নাহ গলমুকাপন মাদরাসার প্রাক্তন নাজিমে তালিমাত (শিক্ষাসচিব) মাওলানা আবদুল খালিক (কিয়ামপুরী হুজুর) ইন্তেকাল করেন একই দিনে।
মুজিবুর রহমান: সিলেটের প্রখ্যাত আলেম নগরীর রেল গেইট জামে মসজিদের প্রধান খতিব মাওলানা শেখ মুজিবুর রহমান ইন্তেকাল করেন ২৫ ডিসেম্বর। নগরীর কুয়াপারস্থ নিজ বাস ভবনে ভোর সাড়ে ৪টায় অজু পড়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। তিনি ৬৬ বৎসর বয়সে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যূকালে ৫ ছেলে ও ২ মেয়ে সহ অসংখ্যা মুরিদান ভক্ত ও আশেকান রেখে গেছেন।
তিনি উপ মহাদেশে ওলীকুল শিরোমনি শামসুল উলামা আল্লামা ফুলতলী (র:) অন্যতম খলিফা ছিলেন।
বৃহত্তর সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় তার ভক্ত ও আশেকান রয়েছেন। তিনি জালালপুর আলীয়া মাদ্রাসার শিক্ষক, ওসমানীনগর গোয়ালাবাজার খাদিমপুর কাঠালখাইড় হাফিজিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্টসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন।