সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৩ অপরাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার:
‘রাজনীতিতে শেষ বলতে কোন কথা নেই’ তা আবারো প্রমাণ হলো দিরাইয়ে। মাত্র আড়াই মাস আগে দিরাইয়ের একটি সমাবেশে যাদেরকে ঘোষণা দিয়ে বহিষ্কার করা হয়েছিল, সেই বহিষ্কৃত নেতাদের আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হয়ে আগমন করার বিষয়টি ‘টক অব দ্যা টাউনে’ পরিণত হয়েছে। তবে এ ঘটনায় বহিষ্কৃত নেতাদের কর্মী-সমর্থকরা উজ্জীবিত হলেও হতাশ হয়েছেন এমপি বলয়ের নেতাকর্মীরা। গতকাল (শনিবার) দিরাই উপজেলা যুবলীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব এম মতিউর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হওয়ায় নতুন করে আলোচনাটি সামনে আসে। আভাস পাওয়া যাচ্ছে নতুন মেরুকরণেরও।
জানা যায়, গত বছরের ১৪ নভেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে মঞ্চে উঠা নিয়ে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের বিবদমান দু’গ্রুপের মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে একজন মারা যায় ও অর্ধশত আহত হয়। এ ঘটনায় পরবর্তীতে দু’পক্ষই পাল্টাপাল্টি মামলা করে। তবে আসামীরা সবাই জামিনে আছেন বলে জানা গেছে।
সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ মিয়া ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন কুমার রায়ের নেতৃত্বে মঞ্চে হামলার ঘটনা ঘটে। তাই মোশাররফ মিয়া ও রঞ্জন কুমার রায়কে দল থেকে বহিষ্কার ঘোষণা করেন। সাথে সাথে তিনি পরবর্তীতে নতুন কমিটি ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা করেন। এর কয়েকদিন পর কামাল হোসেনকে সভাপতি ও প্রদীপ রায়কে সাধারণ সম্পাদক করে দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের দীর্ঘদিনের আস্থাভাজন এডভোকেট সোহাইল আহমদ ছইল মিয়া ক্ষুদ্ধ হয়ে নতুন বলয় সৃষ্টি করেন। সম্প্রতি তিনি মোশাররফ মিয়া বলয়ে যোগদান করেন। পছন্দের কমিটি পেয়ে এমপি ড. জয়া সেনগুপ্তার বলয় উজ্জীবিত হলেও হতাশ হয় সাবেক পৌরসভার মেয়র মোঃ মোশাররফ মিয়ার বলয়।
এদিকে দশমবারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে গতকাল (শনিবার) দিরাই থানা পয়েন্টে সাবেক মেয়র মোঃ মোশাররফ মিয়ার বলয়ের দিরাই উপজেলা যুবলীগ সমাবেশের ডাক দিয়েছে। এ সমাবেশে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব এম মতিউর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন। এছাড়াও উপস্থিত হয়েছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুটসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। এতে করে সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনের সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তা বলয়ে হাতাশা দেখা দিলেও উজ্জীবিত হয়েছেন দিরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র মোঃ মোশাররফ মিয়ার বলয়।
দলীয় সূত্রে আরও জানা যায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা সুনামগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুর পর থেকে বিভিন্নভাবে দলীয় অর্ন্তদ্বন্দ্ব শুরু হয়। বিশেষ করে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর থেকেই প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের দুই প্রিয়ভাজন প্রদীপ রায় ও মোশাররফ মিয়ার মাঝে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ মিয়ার এই দলীয় দ্বন্দ্বের প্রভাবে অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েন। বিগত উপজেলা ও পৌরসভার নির্বাচনে প্রকাশ্যে আসে বিরোধিতার চাপ। এরপর থেকেই দিরাই-শাল্লা আসনের সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তাকে অবজ্ঞা করে বার বার দলীয় সভা সমাবেশ হচ্ছে তার নির্বাচনী এলাকায়। সভা সমাবেশগুলোতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হতে দেখা গেছে সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব এম মতিউর রহমান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট প্রমুখ। প্রতিবারই এসব সভা সমাবেশ ঘিরে দু’পক্ষের মাঝে উত্তেজনা বিরাজমান থাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বাড়তি সতর্ক অবস্থান নিতেও দেখা যায়।
শনিবারের সমাবেশকে সফল করতে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় একটি মিছিল বের হয় দিরাই পৌরসভার প্রাক্তন লঞ্চঘাটের মোশাররফ মিয়ার গ্রুপের অফিস থেকে। অপরদিকে সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্ত অনুসারীরাও দলীয় কার্যালয়ে এক কর্মী সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশকে ঘিরে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে দিরাই থানা পুলিশের নেতৃত্বে দুই প্লাটুন অতিরিক্ত পুলিশও মোতায়েন করা হয়। এছাড়া পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সাদা পোষাকে বিভিন্ন বাহিনীর লোকজনও রয়েছে।
অন্যদিকে দশমবারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে গতকাল (শনিবার) দিরাই থানা পয়েন্টে উপজেলা যুবলীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব এম মতিউর রহমান। যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন কুমার রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নূরুল হুদা মুকুট।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম শামীম, এডভোকেট অবণী মোহন দাস, সৈয়দ আবুল কাশেম, দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এডভোকেট সোহেল আহমদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র মোশাররফ মিয়া, শান্তিগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান হাজী আবুল কালাম, শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার, তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অমল কর, জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট আজাদুল ইসলাম রতন, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর চৌধুরী, সদস্য সবুজ কান্তি দাস, সৈয়দ তানজিল আহমদ, দিরাই উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোহন চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা আরিফুজ্জামান চৌধুরী এহিয়া, মকসদ আলম, ইউপি চেয়ারম্যান বদরুল ইসলাম চৌধুরী মিফতাহ, রফিনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, দিরাই উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি তাজুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত রায় বিশু, দিরাই পৌর যুবলীগের সভাপতি সারোয়ার আহমেদ, জেলা পরিষদের সদস্য রায়হান মিয়া, তাড়ল ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মহিত মিয়া, মুজিবুর রহমান, সাবেক পৌর কাউন্সিলর সুহেল চৌধুরী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল হাইয়ূম, যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমান, কাইয়ূম মিয়া, চান মিয়া চৌধুরী প্রমুখ।