শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৭ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : বাংলাদেশে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই স্থানীয় সরকার নির্বাচন। প্রার্থী এবং ভোটারদের মধ্যেও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন নিয়ে নানা মত রয়েছে। একইসাথে প্রশ্ন উঠেছে, স্থানীয় নির্বাচনে ভোটারদের ওপর জাতীয় রাজনীতির প্রভাব কতটা পড়বে? দীর্ঘ ৭ বছর পর মাঠের রাজনীতিতে বাংলাদেশের প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দলের প্রতীকের স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজপথ। নির্বাচনী প্রচারণার এই উত্তাপ এর আগে শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই দেখেছেন ভোটাররা। স্থানীয় নির্বাচনে এটি তাদের জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা।
মনোনয়ন নিয়ে নানা হিসেব-নিকেশ শেষে দুই দলের মনোনীত প্রার্থীরাও এখন নিজেদের মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদের জন্য মিছিল-পথসভা-জনসভা-মাইকিং শুরু করেছেন। যদিও কিছু কিছু এলাকায় নিজ দলেরই অন্য নেতা বা তথাকথিত বিদ্রোহী প্রার্থীদের সাথেও লড়তে হচ্ছে তাদের। কিন্তু দলের মার্কা যে তাদের জন্য একটি বড় সুবিধা, সেনিয়ে অবশ্য দ্বিমত নেই বড় দলের প্রার্থীদের।
“আগে ছিল ধরি মাছ না ছুঁই পানি, কিন্তু এখন যা হয়েছে তাতে প্রার্থীর সাথে দলেরও দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছে। গত ১৫ বছরে এখানে নৌকা আর ধানের শীষের যে পার্থক্য তৈরি হয়েছে তাতে নৌকা আমাকে অনেক এগিয়ে দিয়েছে।” বলেন মুন্সীগঞ্জ সদর পৌরসভার আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ফয়সাল বিপ্লব। দলীয় দায়বদ্ধতার জন্য দলের সিদ্ধান্ত তার পৌরসভার কাজের ক্ষেত্রে কোন সমস্যার তৈরি করবে না বলে মনে করছেন তিনি।
এই প্রতীকের হিসেবটি মাথায় আছে অপর বড় দল বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এবং বর্তমান পৌরসভা মেয়র একেএম ইরাদত মানুর মাথায়ও। বিএনপির জন্য দলীয় প্রতীকে এ নির্বাচনটির কিছুটা বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, ২০০৮ সালের পর এই প্রথম দলীয় প্রতীকে কোন নির্বাচনে মাঠে নামছে তারা। এর আগে গত সংসদ নির্বাচন বর্জন করায় ধানের শীষের স্লোগান মাঠে শোনা যায়নি দীর্ঘদিন যাবত। “এই প্রতীক নিয়ে কর্মীদের মধ্যে ভালবাসা আছে, উচ্ছ্বাস আছে। শুধু কর্মী নয়, ভোটারদের মাঝেও উচ্ছ্বাস আছে।” বলেন মি. ইরাদত।
তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে দলীয় প্রতীকের কারণে সরকার যদি তার কাজে বাঁধার সৃষ্টি না করে তাহলে তিনি সুষ্ঠুভাবেই কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। নির্বাচিত হলে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নিজ দলের ম্যান্ডেট পালনের ক্ষেত্রেও কিছুটা স্বাধীনতা পাবেন বলে মনে করছেন মি. ইরাদত। যদিও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অভিযোগ করছেন যে নির্বাচনী প্রচারণায় তার কর্মীরা সরকারী দলের কর্মীদের কাছে নানাভাবে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবী করছেন আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী।
এদিকে বয় দলের এসব প্রার্থীদের প্রচারণায় অনেকটা চাপা পড়ে গেছে ছোট দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। পৌরসভা নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নামের একটি দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন মহিউদ্দিন ব্যাপারী। তিনি বলছেন, রাজনৈতিক প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় তাদের প্রচারণার প্রতি গুরুত্ব আগের চেয়ে কমে গেছে। তার আশংকা, এর ফলে হয়তো তাদের নির্বাচনী কর্মকর্তারা বাঁধার সম্মুক্ষীন হতে পারেন। “আগের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি ভোটকেন্দ্র দখলের মতো কিছু অবস্থা তারা তৈরি করেছে। এজন্য একটু আশংকা হচ্ছে যেন তারা এই মার্কাটার ওপর কোন আঘাত না আনে। নির্বাচনটা নির্দলীয় হলে আমাদের জন্য ভালো হতো।” বলেন মি. মহিউদ্দিন। মেয়র পদে তিনি তাদের দলীয় প্রতীক হাতপাখা নিয়ে নির্বাচন করছেন।
কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর সরাসরি অংশগ্রহণে স্থানীয় নির্বাচন নির্বাচনী কর্মকর্তাদের জন্য কতটা চ্যালেঞ্জ? দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলগুলো এর আগেও অভিযোগ করেছিল যে, নির্বাচনী কর্মকর্তারা দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করছেন না এবং এক্ষেত্রে সরকারদলীয় প্রার্থীর প্রতি তাদের একটি প্রচ্ছন্ন সমর্থন কাজ করে। তবে মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো: সাইফুল হাসান বলছেন, তার ওপর কোন চাপ নেই এবং যেকোন অবস্থা সামাল দেয়ার মতো প্রস্তুতিও তাদের রয়েছে।
প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি-মিছিল-স্লোগান যেভাবেই তাদের নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাক না কেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি যাদের কাছ থেকে আসার কথা সেই ভোটারদের সামনে এখন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে এখন প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি এখন আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ হয়েছে আরেকটি বিবেচনা, জাতীয় রাজনীতি। ভোটারদের কাছে কোন বিবেচনাটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ?
“জাতীয় রাজনীতিটা দলীয়, উপযুক্ত হোক বা না হোক যার যার দলেরটা সে সে দেবে। কিন্তু যাকে ভোট দিলে এলাকা উন্নয়ন হবে তাকেই আমি ভোট দেবো” বলেন একজন ভোটার। কিন্তু কেউ কেউ এরই মধ্যে সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছেন। “জনম ভইরা নৌকায় ভোট দিয়া আইছি, এবারো দিমু” বলেন আরেকজন ভোটার। আরেকজন ভোটারের মন্তব্য, “মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত আছে, কিন্তু এখন সেটা প্রকাশ্যে বলাতো সমস্যা।”
পৌরসভা নির্বাচনটি যে রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তা নিরূপণের একটি পরীক্ষায় পরিণত হয়েছে তা বেশ স্পষ্ট। মুন্সীগঞ্জের স্থানীযয় সাংবাদিক মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল বলছেন, ভোটাররা প্রার্থীর যোগ্যতাই নির্বাচনের মূল বিবেচ্য হবে বললেও জাতীয় রাজনীতি যে নির্বাচনে একটি বড় প্রভাব ফেলবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, “পৌর নির্বাচন হলেও এলাকার বাইরের জেলা এবং নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতাদের আমরা প্রচারণায় অংশ নিতে দেখছি। এমপি ইলেকশনে যেমন হয় তেমনটিই কিন্তু আমরা দেখছি”।
রাজনৈতিক দলগুলোর সরাসরি অংশগ্রহণে স্থানীয় নির্বাচনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব কি হবে, সেটি বোঝার জন্য হয়তো আরো বেশ সময় লাগবে। কিন্তু এটি নিশ্চিত যে দলীয় প্রতীকে এই নির্বাচনটি হবে সম্পূর্ণ নতুন একটি অভিজ্ঞতা এবং নজর রাখার মতো একটি আয়োজন।