বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:১৯ পূর্বাহ্ন
বিশেষ সংবাদদাতা: সবকিছু ঠিক ঠাক থাকলে আর মাত্র ৪ দিন পর ১১ মার্চ সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তবে অতীতে কয়েক দফা তারিখ ঘোষণা করার পরও যথাসময়ে সম্মেলল না হওয়ায় জেলা ও ১১টি উপজেলার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সম্মেলন হবে কী না এ নিয়ে সংশয় ও সন্দেহ কাটছেই না। জেলা কমিটির দায়িত্বশীল ক’জন নেতা সম্মেলন নিয়ে তেমন একটা সরব ভূমিকায় না থাকলেও সরব হয়ে উঠেছেন পদ-প্রত্যাশী কয়েক ডজন নেতাকর্মীরা। সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে কেন্দ্রে থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও জোর লবিংয়ে তারা সক্রিয় হয়েছেন। বর্তমান কমিটিতে থাকা কিছু বিতর্কিত ও ছাত্রলীগের ইমেজ ক্ষুন্নকারী পদবীধারী নেতা নতুন কমিটি থেকে ছিটকে পড়তে পারেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন গণমাধ্যমেকে জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ১১ মার্চ সম্মেলনের তারিখ ঠিক আছে। যথাসময়ে সম্মেলন করতে জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বলা হয়েছে। যদি তারা সম্মেলন করতে ব্যর্থ হন তাহলে ১১ তারিখ-ই নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ ফেব্র“য়ারি সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত পত্রে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ স¤পাদককে ১১ মার্চ সম্মেলন করার নির্দেশ দেয়া হয়। অপরদিকে সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলেও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক ও কর্মীসভাই ডাকা হয়নি।
জেলা ছাত্রলীগের দুর্যোগ ও ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক ইশতিয়াক আলম পিয়াল বলেন, কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যে নির্ধারিত তারিখ দিয়েছেন সেই তারিখেই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
ছাত্রলীগ নেতা দেওয়ান সিজান এনায়েত রেজা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন হচ্ছেনা, অনেক উপজেলায় কমিটি হচ্ছেনা। ছাত্রলীগের সম্মেলনের মাধ্যমে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সাংগঠনিক তৎপরতা ও প্রাণ ফিরে আসবে। ছাত্রলীগ নেতা দীপঙ্কর কান্তি দে বলেন, আমরা চাই নির্ধারিত তারিখে সম্মেলন হোক। এই সম্মেলনের মাধ্যমেই প্রকৃত ছাত্র নেতৃত্ব বেরিয়ে আসুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আরিফ-উল-আলম বলেন, কিন্তু হতাশার বিষয় হল এর আগে দু’বার কেন্দ্র থেকে সম্মেলনের নির্দেশ দেয়া হলেও জেলা ছাত্রলীগ সম্মেলনের আয়োজন না করায় সাধারণ নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, সম্মেলনের সফল করতে আমরা সব ধরণের প্রস্তুতি চলছে। কেন্দ্র থেকে আগামি ১১ মার্চ জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন নির্ধারিত হওয়ায় তৃণমূলে আনন্দের জোয়ার বইছে। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফজলে রাব্বী স্মরণ বলেন, জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, সুনামগঞ্জ-২ আসনে উপনির্বাচন নিয়ে আমরা ব্যস্ত সময় পার করছি। তবে শত ব্যস্ততার মধ্যেও কেন্দ্র নির্ধারিত তারিখে সম্মেলন সম্পন্ন করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক দারুস সালাম শাকিল জানান, ১১ মার্চ সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত থাকবেন। সম্মেলনের আগেই প্রস্তুতিসভা অনুষ্ঠিত হবে। নেতৃত্বে আসতে ইচ্ছুক নেতাদের কাছ থেকে সিভি গ্রহণ করা হবে। যোগ্যদের খুঁজে আনা হবে নতুন কমিটিতে।
দলের অপর একটি সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে থাকা ছাত্রলীগের ইমেজ ক্ষুন্ন হয়েছে এমন ক’জনকে এবারের কমিটি থেকে ছিটকে পড়তে পারেন। অভিযোগ রয়েছে, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি দাবিদার তাহিরপুরের পৈলনপুর গ্রামের জীবন কৃষ্ণ তালুকদারের ছেলে ঝুমুর কৃঞ্চ তালুকদার জেলা ও উপজেলা, ইউনিয়ন ও বাদাঘাট সরকারি কলেজ কমিটিতে পদ পাইয়ে দেবার কথা বলে স্থানীয় ছাত্রলীগের বেশ ক’জন নেতাকর্মীর নিকট থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পদ দেয়ার কথা বলে সুজন নামের এক ছাত্রলীগ কর্মীর নিকট থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে সালিসে ২০ হাজার টাকাও ফেরত দিয়েছেন ওই সহ-সভাপতি। শুধু এখাইে শেষ নয়, বহুল আলোচিত মানিক হত্যাকাণ্ডের আসামিদের রক্ষায় লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ছাত্রলীগের নামকে ব্যবহার করে তদবীর, মানববন্ধন ও মিছিল সমাবেশ এমনকি স্থানীয় বাদাঘাট বাজারের বাদাম পট্টিতে তার নেতৃত্বে একটি জুয়ার আসর পরিচালনা ছাড়াও তরুণ ও ছাত্রদের মধ্যে গাজা ও ইয়াবা আসক্তি ছড়িয়েছেন ঝুমুর কৃঞ্চ তালুকদার ওরফে কলকি ঝুমুর। অপরদিকে কলাগাঁও সীমান্তের আরেক ছাত্রলীগে সহ-সভাপতি দাবিদার সীমান্তে চোরাচালান, ইয়াবা ব্যবসায় পুঁজি বিনিয়োগ ও মামলা মোকদ্দমায় ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে ইমেজ ক্ষুন্ন করেছেন বলে তৃণমূলে থাকা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের পক্ষ্য থেকে অভিযোগ উঠেছে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ফজলে রাব্বী স্মরণকে সভাপতি ও রফিক আহমেদ চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক মনোনিত করে ১০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন করে কেন্দ্র। পরবর্তীতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ঠিক রেখে ২০১৪ সালে ১২১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়।