রবিবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৪ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : সপরিবারে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার ৪০ তম বার্ষিকীতেও গভীর শোক, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করলো গোটা জাতি। বাঙালির হাজার বছরের অহংকার মহান এই নেতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শোকর্যালি, মিছিল, আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিলসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শনিবার সারা দেশে পালিত হলো জাতীয় শোক দিবস। এসব কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে শোককে শক্তিতে পরিণত করার শপথ নেওয়া হয়। কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করার দাবিও জানান বক্তারা। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ৪০তম বার্ষিকী উপলক্ষে শোকের মাস আগস্টের শুরু থেকেই আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে।
শনিবার রাষ্ট্রীয় আয়োজনের পাশাপাশি নানা দল-মত, সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ শোকের কর্মসূচিতে অংশ নেন। দিনটি ছিল সরকারি ছুটি। ভোরের আলো ফোটার পর থেকেই শ্রদ্ধার ফুলে ভরে ওঠে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও বনানী কবরস্থান। বঙ্গবন্ধু চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। সেখানেও রাষ্ট্রীয় এবং দলীয়ভাবে নানা আয়োজনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ঢাকাসহ সারা দেশে শোকের কর্মসূচির মধ্যে ছিল পতাকা অর্ধনমিত রাখা, কবর জিয়ারত, ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন, কালোব্যাজ ধারণ, রক্তদান কর্মসূচি, মিলাদ ও বিশেষ দোয়া। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়, পাড়া-মহল্লা, গুরুত্বপূর্ণ হাঁট-বাজারে মাইকে দেশাত্মবোধক গান ও বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বাজানো হয়। দরিদ্র মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত শোকের অনুষ্ঠানগুলোতে আওয়ামীলীগের নেতাসহ আগত ব্যক্তিরা বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে দ্রুত ফাঁসির রায় কার্যকরের দাবি জানান। দিনের শুরুতে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সারা দেশের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। টানানো হয় কালো পাতাকা। সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।
সকালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল সশস্ত্র সালাম জানায়। দলীয় প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা দলের নেতাদের নিয়ে আবার ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। কোরআন থেকে তিলাওয়াতের পর সেখানে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।
এরপর সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। আওয়ামীলীগের সহযোগী সংগঠন, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধি, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধি, সরকারদলীয় জোটের বিভিন্ন শরিকসহ সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সেখানে। এ উপলক্ষে ৩২ নম্বরের আশপাশের রাস্তাগুলো শোকের প্রতীক কালো পতাকার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ডে ছেয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার পর হেলিকপ্টারে করে বঙ্গবন্ধুর জন্মভূমি টুঙ্গিপাড়ায় যান। সেখানে তিনি এই মহান নেতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার পর প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্থপতির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছু সময় নিরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সদস্য বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ সময় তিন বাহিনীর একটি চৌকশ দল সামরিক অভিবাদন জানায়। এ সময় বিউগলে অন্তিম সুর বেজে ওঠে। তিন বাহিনীর প্রধান এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর মাজারে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু, তাঁর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করেন। এ সময় দেশ ও জাতির অব্যাহত শান্তি, উন্নয়ন ও অগ্রগতি কামনা করে দোয়া করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা পরে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে দলের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এছাড়া আওয়ামীলীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতারা সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এক মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, দলের নেতাকর্মীরা জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সমাধিতে আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেন।
বিভাগীয় প্রতিনিধি, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সংবাদদাতাগণ জানান, বাংলাদেশের অগ্রগতিকে স্তব্ধ করে দিতে কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রে নিহত হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর অকাল প্রয়াণের এই শোককে শক্তিতে পরিণত এবং দেশকে তাঁর দেখানো পথে পরিচালিত করতে তাঁরই আদর্শের সৈনিকেরা আজ কালো ব্যাজ ধারণ করে শোক র্যালি, তাঁর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করেন।
এছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দিবসটি স্মরণে সরকারের বিভিন্ন অধিদপ্তর প্রশিক্ষিত বেকার যুবক ও দরিদ্রদের মাঝে অর্থ সহায়তা প্রদান এবং বিভিন্ন সংগঠন স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, জাতির পিতাকে নিয়ে লেখা ছড়া, কবিতা, রচনা ও চিত্রাংঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করেছে। সূত্র : শীর্ষ নিউজ