শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩০ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার বিচার হলেও ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের নেপথ্যের ব্যক্তিদের বিচার হয়নি বলে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। সেদিন যারা সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ বাহিনী, বিডিআর, রক্ষীবাহিনীর প্রধান ছিলেন তাদের ‘ভূমিকা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এমনকি আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন ঘটনার আগে গোয়েন্দা বাহিনী কিছু জানলো না, তাদের অফিসের ৩শ’ গজের ভিতর দিয়ে ঘাতকরা ট্র্যাঙ্ক নিয়ে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলো? শুধু তিনি নন, হত্যাকা-ের পিছনে যারা ছিলেন তদন্তের মাধ্যমে তাদের মুখোশ খুলে দেয়ার দাবি উঠেছে। টিভির টকশোতে অনেক বক্তাই কমিশন গঠনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। সে সময়ের চৌকস সেনা-কর্মকর্তা কর্নেল (অব.) জাফর ইমাম দাবি করেছেন, ‘জুনিয়র কর্মকর্তা শফিউল্লাহকে সেনাপ্রধান করার সিদ্ধান্ত ছিল ভুল। সে সময় বঙ্গবন্ধু যদি জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করতেন তাহলে হয়তো ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটতো না।’ দেরিতে হলেও বিচারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের ফাঁসি দেয়া হলেও হত্যাকা-নিয়ে এখনো বিতর্ক হচ্ছে। এমনকি সেনাবাহিনীর প্রধান শফিউল্লাহর ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক আছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর পরই সেনাপ্রধান হিসেবে ‘নীরব’ দর্শকের ভূমিকা পালন করা শফিউল্লাহ আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং অষ্টম জাতীয় সংসদে আওয়ামীলীগের এমপি ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার ৪০ বছর তথা ৪০তম জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ১৫ আগস্ট ইন্ডেপেন্ডেন টিভি এক খবরে আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও সাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অব.) শফিউল্লাহকে মুখোমুখি করা হয়। তারা ১৫ আগস্টের ঘটনায় একে অপরকে দায়ী করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন।
শেখ সেলিম : আক্রান্ত হওয়ার পর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু প্রথমে সেনাপ্রধান শফিউল্লাহকে টেলিফোন করেছেন। বলেছেন আমার বাসায় আক্রমণ হয়েছে। তুমি দেখ।
শফিউল্লাহ : আমাকে বঙ্গবন্ধু ফোন করেননি। আমি জানতে পারি তখন সকাল সোয়া ৫টা সাড়ে ৫টার মধ্যে কোনো সময় হবে।
শেখ সেলিম : সেনাপ্রধান হিসেবে ৩২ নম্বরে সে (শফিউল্লাহ) আসার চেষ্টা করেনি। ৩২ নম্বরে কি হয়েছে জানার চেষ্টা করেনি। খবর শুনে উনি সেনাবাহিনীর কাউকে বলেননি আসেন ৫টা ট্যাঙ্ক নিয়ে যাই; দেখি বঙ্গবন্ধুর বাসায় কি হয়েছে।
শফিউল্লাহ : ট্যাঙ্ক মাসে দুইবার নাইট ট্রেনিং করে। ১৫ আগস্ট তারিখে ট্রেনিং ছিল। ওটাকে দেখিয়ে তারা ট্রাঙ্ক বের করেছে। যাতে কেউ বুঝতে না পারে।
শেখ সেলিম : এটা সত্য নয়। ট্যাঙ্ক সব সময় বের হয় না। উনি সব মিথ্যা কথা বলছেন।
শফিউল্লাহ : আমি যখন জানতে পারি নো বডি এলাউ। আমি গিয়ে (৩১ নম্বরে) ডেডবডি দেখলে কি লাভ হতো?
শেখ সেলিম : শফিউল্লাহ কেন নীরবতা পালন করলো? সেদিন উনি বাসা থেকে বের হননি। মারাটারা যাওয়ার পর উনি মিটিং-এ বসেছে। শুধু রশিদ-ফারুক নয়; হত্যার পেছনে আরো শক্তি জড়িত ছিল। ক্ষমতার লোভে এই কাজগুলো করেছে।
শফিউল্লাহ : সেলিম কি বললো আই ডোন্ট কেয়ার। আমিতো মনে করবো খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে শেখ সেলিমের আঁতাত ছিল। সে তাহলে ১৫ তারিখে কেন আমেরিকান অ্যাম্বেসিতে গিয়েছিল সাহায্যের জন্য?
শেখ সেলিম : না না আমি মার্কিন অ্যাম্বেসিতে যাইনি। উনি (শফিউল্লাহ) যে অপকর্ম করেছে। ওনাকে একটা কিছুতো বলতে হবে। উনি আমাকে অ্যাম্বেসিতে দেখছিলেন না! তাহলে উনি গিয়েছিলেন?
শফিউল্লাহ : ১৫ আগস্ট (সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনে) আমার কোনো ভুল ছিল না। যা হয়েছে আমার কিছু করণীয় ছিল না।
শেখ সেলিম : সে (সেনাপ্রধান হিসেবে শফিউল্লাহ) যদি অবস্থা জেনে সময়মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করতো। তাহলে বঙ্গবন্ধুকে বাঁচানো যেত। এটা আমি মনে করি।
শফিউল্লাহ : ওই সময় আওয়ামীলীগের লোকজন যদি ধাওয়া করে সেনানিবাসের দিকে ঢুকতো। তাহলে প্রতিরোধ করতে পারতো কেউ?
শেখ সেলিম : গোটা জাতি হতভম্ব হয়েছিল।
শফিউল্লাহ : কথা বলা যায়। কাজের কাজ হতো না। কাজও করেনি কেউ।
শেখ সেলিম : যে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির জন্য সারাজীবন কষ্ট করেছেন; সেই নেতা কীভাবে বিশ্বাস করে বাঙালি জাতি তাকে মারবে?