মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:০৩ পূর্বাহ্ন
সামিউল কবির: মানুষের মন আর দৈহিক বিকাশ ঘটানোর জন্য খেলাধুলার বিকল্প নেই, অথচ আজ গ্রাম-গঞ্জে খেলাধুলা নাই বললেই চলে! এক সময় শীত আসলে গ্রামে গ্রামে ক্রিকেট খেলার ধুম পড়তো! বিষয় এমনটা ছিলো হাওরপাড়ের সুনামগঞ্জ জেলার সবগুলো উপজেলার যেকোনো একটি গ্রামের ক্রিকেট ক্লাব ইউনিয়নের অন্য গ্রামের সাথে ক্রিকেট খেলতে যেতো, সাধারনত ইহাকে দাওয়াতী ক্রিকেট খেলা বলতো, যেখানে হার জিত বড় ছিল না, ছিল মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক বা বন্ধুত্ব বড় করার একটা প্রক্রিয়া। এমনি শীত আর জৈষ্ট্য মাসে কাদা ভরা মাঠেও জমতো অনেক বড় বড় ফুটবল টুর্নামেন্ট, বাহারী ক্লাব নামীদামী ফুটবলারের পদচারণে ভরে উঠতো স্থানীয় এলাকা, এসব ফুটবলারের নান্দনিক আধুনিক ড্রিবলিং মুগ্ধ হতো স্থানীয় দর্শকরা!
কিন্তু যুগের আজ পরিবর্তন হয়েছে মানুষের হাতে পৌছেছে ইন্টারনেট আরও আধুনিক প্রযুক্তি সম্মৃদ্ধ স্মার্টফোন। যা সার্চ মেরেই মানুষ নিয়ে আসতো পারে অনেকটা ঠিক মানুষের আকৃতি সংবলিত দারুন সব ফুটবল ক্রিকেট আরও নানাবিধ গেইম, মানুষ এখন আর মাঠে যায়না, দিনদিন একাকী ও অসামাজিক হয়ে উঠছে, সর্বশেষ প্রযুক্তির সংযোজন সবচেয়ে জননপ্রিয় হয়ে উঠা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক! যা কাছে থেকেও একটা কাছের বন্ধুকে মানসিকভাবে দুরে সরে দেয়। দুনিয়ার সব ব্রডকাস্টিং স্যালেব্রিটি ও ফ্রাঞ্চাজিভিত্তিক ফুটবল ক্রিকেটলীগ তো আছেই। বাড়ির ছোট ছেলেটিও আজ ড্রয়িং রুমে বসে ডব্লিও ডব্লিও দেখতে উন্মুখ, তবুও সে মাঠে যাবেনা। আর খেলাধুলার প্রতি বাবা-মায়েরও অত আর আগ্রহ নেই, তবু জিপিএ-৫ এর প্রতি আগ্রহের যেনো শেষ নেই। ছেলে-মেয়ের বইয়ের চাপ ইন্টারনেট সামলে কত সামনে এগুবে..? অথচ স্বাস্থ্যের সঠিক নীতি গঠনে যেকোনো ছেলে-মেয়ের উচিত অর্থেক সময় লেখাপড়া বাকি অর্থেক খেলাধুলা, অথচ ঘটছে ঠিক তার উল্টো। তা কেনো হচ্ছে?
একটি অনুসন্ধানে দেখা যায়, মানুষের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা অনেকটা আগের চেয়ে নিম্নগামী; পাশাপাশি রয়েছে ক্রীড়ামোদি মানুষের অভাব। একটি উপজেলা ক্রীড়াসংস্থার দায়ভারও কিছুটা বর্তে, আন্ত: ইউনিয়ন ফুটবল ও ক্রিকেট তো গত পনের বছর থেকেই হচ্ছেনা! প্রাইমারী লেভেলে শিশু-কিশোরদের সাতার প্রতিযোগীতা আগের মতো আর দেখা যায়না। আশার কথা হলো, কিছু সামাজিক সংগঠন ও স্পোর্টস ক্লাবের উদ্যেগে কিছুু ইভেন্ট হচ্ছে তবে তা যথেষ্ট নয়! এতে এলাকার অনেক ধনকুবেরদের গ্রামীন স্পোর্টস বাঁচাতে এগিয়ে আসা উচিত। উপজেলা ক্রীড়াসংস্থাকে গতিশীলতো করতেই হবে এবং পুরো উপজেলা থেকে একাধিক ক্রীড়ামোদী মানুষদের নিয়ে বেসরকারিভাবে আলাদা আলাদা ফুটবল ক্রিকেট এসোসিয়েশনস গঠন করা উচিত বলে আমি মনে করি, তবেই গ্রামীন খেলাধুলার জৌলুশ ফিরিয়ে আনা যাবে। পাশাপাশি শিক্ষকরা বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে শিশু-কিশোরদের ইন্টারনেট আসুক্তি কমানোর এয়ারনেস করে খেলাধুলা যে পাঠের একটি অংশ সেটি তাদের মাথায় ঢুকিয়ে দিতে হবে। লেখক: উন্নয়নকর্মী ও সাংবাদিক।