রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৩ পূর্বাহ্ন
কাজী জমিরুল ইসলাম মমতাজ, স্টাফ রিপোর্টার (সুনামগঞ্জ): সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের দূরত্ব ৬৮ কিলোমিটার। সুনামগঞ্জ জেলার মানুষের ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় যোগাযোগের প্রধান সড়ক এটি। কিন্তু সড়কটি সরু হওয়ায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এই আশঙ্কায় যানবাহন চলে ধীরগতিতে। ঝুঁকিতে চলাচল করে যাত্রী এতে সময় লাগে বেশি। সিলেট যেতে যেখানে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লাগার কথা সেখানে লাগছে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সুনামগঞ্জ শহর থেকে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পাগলাবাজার পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার সড়ক গেছে দেখার হাওরের পাশ দিয়ে। বিভিন্নস্থানে সড়কের দুই পাশের মাটি সরে সড়ক আরও সরু হয়ে গেছে। প্রতিবছর সড়কের পাশে যেনতেনভাবে মাটি ফেলা হয়। বৃষ্টি হলেই ওই মাটি আবার সরে যায়। একটি বাস আরেকটিকে সাইড দিতে হয় ঝুঁকি নিয়ে। কোনো কোনো স্থানে একটি বাস দাঁড়িয়ে আরেকটিকে যাওয়ার সুযোগ দিতে হয়। সড়কের পাগলা বাজার, ছাতক উপজেলার জাউয়া বাজার ও গোবিন্দগঞ্জ বাজার এলাকায় দুই পাশে অবৈধ দোকানপাট গড়ে ওঠায় এসব স্থানে যানজট লেগে থাকে। এক তো সরু সড়ক তার ওপর যানজটে পড়ে ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের। যাত্রীবাহী বাস এসব বাজার এলাকায় আটকে থাকে। জাউয়াবাজার এলাকার বাসিন্দা রাজ উদ্দিন বলেন, সড়কের প্রশস্ত কম, একটি বাস বা ট্রাক আরেকটিকে ক্রস করতে গিয়েই দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। জাউয়াবাজার, চেচান, রাউলি, কৈতক এলাকায় সড়ক সরু হওয়ায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়কের সদর উপজেলার নীলপুর বাজার এলাকার বাসিন্দা মহিনুর ইসলাম বলেন, দুই বছর ধরি হুনরাম সড়কের পাশ (প্রশস্ত) বাড়ব। এইটাই এখন বড় সমস্যা। এর কারণে অ্যাক্সিডেন্ট হয় বেশি। কিন্তু কাজ তো আর অর না। সুনামগঞ্জ শহরে ওয়েজখালী এলাকায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে কয়েকজন বাস চালক জানান, এক সময় এই সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। ভাঙাচোরা সড়কে যানবাহন চলত হেলে-দুলে। সড়কে ১২টি সেতু ছিল জরাজীর্ণ। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর জরাজীর্ণ সেতুগুলোর স্থানে নতুন ১১টি সেতুর করেছে। গত বছরের ২৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতুগুলোর উদ্বোধন করেছেন। এখন এই সড়কের বড় সমস্যা হচ্ছে প্রশস্ততা কম। এটা বাড়ানো জরুরি। বাস চালক কাউসার মিয়া বলেন, সড়ক প্রশস্ত হলে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো যেত। এতে সময় বাঁচত। কিন্তু এখন ঝুঁকি নিয়ে ধীরগতিতে গাড়ি চালাতে হয়। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের মধ্যবাজার এলাকার বাসিন্দা কবির আহমদকে ব্যবসার কাজে প্রায়ই সিলেট যাওয়া-আসা করতে হয়। কবির আহমদ বলেন, আগে মনে হতো জরাজীর্ণ সেতুর কারণে সিলেট যেতে সময় বেশি লাগে। সেতু হওয়ার পর এখন বুঝতে পারছি সড়ক প্রশস্ত কম হওয়ায় চালকেরা গাড়ি জোরে চালাতে পারেনা। এছাড়া সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে যেসব বাস চলে দেশের আর কোনো সড়কে এমন লক্করঝক্কর বাস আমি দেখিনি। বাসের শ্রমিক মুমিন মিয়া বলেন, এই সড়কে আরেক ভোগান্তির নাম হচ্ছে অটোরিকশা। শত শত অটোরিকশা চলে। এতে বড় গাড়ি বাধ্য হয়ে ধীরে চলতে হয়। এখন অটোরিকশার সঙ্গে ইজিবাইকও সড়কে উঠে গেছে। সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক বর্তমানে ১৮ফুট প্রশস্ত (পাকা)। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে সড়কের দুই পাশে আরও তিনফুট করে পাকা করার জন্য ১৪০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। চার বছর মেয়াদের এই প্রকল্পের কাজ ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেড় বছর সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো কাজ শুরু হয়নি। সওজও সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় থেকে এই কাজের দরপত্র আহ্বানসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া চলছে। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুনামগঞ্জ সফরে এসে এই সড়ককে জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করার ঘোষণা দেন। কিন্তু এখনো সড়কটি মহাসড়কে উন্নীত হয়নি। সুনামগঞ্জ জেলা বাস, মিনিবাস ও মাইক্রোবাস মালিক গ্র“প সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, ছাতক ও দিরাই উপজেলা শহর থেকে প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে প্রায় চারশ বাস সিলেটে যাওয়া-আসা করে। এর বাইরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের আরও শতাধিক বাস চলাচল করে। এর সঙ্গে রয়েছে ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন। সংগঠনের জেলা শাখার মহাসচিব মোহাম্মদ জুয়েল মিয়া বলেন, সরু সড়কের দুই পাশে হাওর, খাল। যানবাহন চলে মারাত্বক ঝুঁকি নিয়ে। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে মালিকেরা নতুন বাস নামাতে ভয় পান। সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের কাজ দেড় বছরেও শুরু না হওয়ায় আমরা হতাশ। কি কারণে কাজ আটকে আছে বুঝতে পারছি না। সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, বিভাগীয় কার্যালয় থেকে এই প্রকল্পের কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান ও গ্রহণ করা হয়েছে, দরপত্র মূল্যায়নের কাজ চলছে। সব প্রক্রিয়া শেষ হলে কাজ শুরু হবে। সুনামগঞ্জ-৩ আসনের (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও জগন্নাথপুর) সংসদ সদস্য অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, এটি আমাদের প্রধান সড়ক। এটিকে মহাসড়কে উন্নীত করার বিষয়ে আমরা কাজ করছি। সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প গ্রহণ ও অনুমোদন হওয়ার পরও কেন কাজ শুরু হচ্ছে না বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।