মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:১২ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেক্স: নেইমার-নাটকের পর বার্সেলোনায় শুরু হয়েছে নতুন নাটকের মঞ্চায়ন। এখনো চুক্তি নবায়ন করেননি লিওনেল মেসি। ফুটবল দুনিয়ায় জোর গুজব, তিনি নাকি খেলতে যাচ্ছেন ম্যানচেস্টার সিটিতে, পুরোনো গুরু পেপ গার্দিওলার অধীনে। বিশেষজ্ঞেরা এখনো দুই ভাগে বিভক্ত, এক দল বলছে মেসির বার্সায় থাকা উচিত, অন্যরা বলছে বার্সা ছাড়ার এটাই সবচেয়ে সেরা সময় আর্জেন্টাইন তারকার। মেসির বার্সায় থাকার পক্ষে যুক্তি খুবই জোরালো—যে ক্লাব মেসিকে এত কিছু দিয়েছে, ওপরে তুলে এনেছে, দলবদল করাটা হবে তাদের সঙ্গে একধরনের বেইমানি। অপর পক্ষের যুক্তি, বার্সেলোনা ছাড়লে মেসি নিজের খেলাকে অন্য উচ্চতায় তুলে ধরার একটা নতুন চ্যালেঞ্জ খুঁজে পাবেন। মেসির দলবদলের পক্ষের যুক্তিগুলো কিন্তু যথেষ্টই কৌতূহলোদ্দীপক
নতুন চ্যালেঞ্জের খোঁজ: স্প্যানিশ লিগে বার্সেলোনার জার্সিতে সম্ভব সবকিছুই পেয়ে গেছেন মেসি। বার্সেলোনার ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন। লা লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি—৩৪৯ গোল। লিগ শিরোপা জিতেছেন আটটি, চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন চারটি। এক মৌসুমেও সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন। মোট কথা স্পেনে আর কিছুই পাওয়ার নেই মেসির। এবার নতুন কোনো চ্যালেঞ্জর কথা মেসি ভাবতেই পারেন। সেই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য খুব ভালো জায়গা হতে পারে ইংল্যান্ড। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো খেলেছেন ইংল্যান্ডে। সেখানে যাওয়াটা মেসির জন্য ভালোই হওয়ার কথা।
আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের স্বার্থ: নেইমার পিএসজিতে গিয়ে আখেরে ব্রাজিলকেই লাভবান করেছেন। প্যারিসে কিন্তু নেইমারই আক্রমণের কেন্দ্রীয় চরিত্র। যেমনটা জাতীয় দলের জার্সিতে। বার্সেলোনায় ব্যাপারটি এমন ছিল না। জাতীয় দলে এসে তাই তাঁকে অন্য একটি ধারার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হতো। অনেকে চাচ্ছেন মেসির ব্যাপারটিও এমন হোক। এখানে অবশ্য একটা কথা বলা যেতেই পারে, বার্সাতেই তো আক্রমণের কেন্দ্রীয় চরিত্র মেসি। তবে তিনি কেন দল পাল্টাবেন। এখানে মেসির কথা ভেবেই কৌশল নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বার্সায় মেসিকে নিয়ে যে কৌশলগুলো আছে, সেগুলো ব্যবহার করা হয়ে গেছে। এই কৌশলের মেসি আর্জেন্টাইন দলের গিয়ে কী ধরনের সমস্যায় পড়েন, সেটা তো সবাই জানে। এখন পর্যন্ত মেসির বার্সায় খেলার কোনো সুফল জাতীয় দল হিসেবে আর্জেন্টিনা পায়নি। মেসিকে এখন নতুন কিছুর সন্ধান করতে হবে। এমন একটা ক্লাব বেছে নিতে হবে, যেখানে খেললে আর্জেন্টিনার লাভ হয়।
নতুন ফুটবল কৌশলের সন্ধানে: বার্সেলোনা ক্লাবের কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। টিকিটাকা কিংবা বল পায়ে নিয়ে খেলা নিয়ন্ত্রণ করার কৌশলটা এই ক্লাবের ফুটবলের চরিত্র। এসব কৌশলে একরকম সিদ্ধহস্ত মেসি। কিন্তু ইংলিশ বা জার্মান ফুটবল-দর্শনে এখনো দুর্বলতা আছে তাঁর। বিশ্বকাপে সর্বশেষ তিন আসরে জার্মানদের কাছে হেরেছে আর্জেন্টিনা। পাওয়ার ফুটবলের বিপক্ষে সফল হওয়ার কৌশল এখন বের করতে হবে তাঁকে। সে জন্য দলবদল যদি করতেও হয়, সে পথেই হাঁটতে হবে তাঁকে।
রং হারিয়েছে বার্সেলোনা: সাম্রাজ্য পতনই দেখছে বার্সেলোনা। একসময় একাদশের সবাই ছিলেন লা মাসিয়ার খেলোয়াড়। সৃষ্টিশীলতার মূলমন্ত্রে, ঐতিহ্য আর দর্শনের মিশেলে অপরাজেয় দল হয়ে উঠেছিল তারা। কিন্তু সেই বার্সেলোনায় এখন নিয়মিত একাদশে লা মাসিয়ার খেলোয়াড়দের খুঁজে পাওয়া যায় না। দর্শন বদলে বার্সা এখন খেলোয়াড় কিনতে বেশি আগ্রহী। মেসিও অন্য দলে একটা চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
নতুন করে নিজেকে চেনাতে: হয়তো অস্বাভাবিক মনে হতে পারে, কিন্তু মেসি রং হারিয়েছেন—এই ধুয়া তোলা লোকের সংখ্যা নেহাত কম নয়। নেইমার চলে যাওয়ার পর তো অনেকেই বলছেন, এবারই বড় পরীক্ষা দিতে হবে আর্জেন্টাইন তারকাকে। এসব আলোচনার জবাব হয়তো মেসি দেবেনও। কিন্তু সেটি ন্যু ক্যাম্পের বাইরে থেকে এই সমালোচনার জবাব দেওয়া উচিত তাঁর। ন্যু ক্যাম্প কিংবা লা লিগার অলিগলি তো তাঁর চেনাই। ইতালীয়, জার্মান বা ইংলিশ লিগে গিয়েই নিজের শ্রেষ্ঠত্বের তকমাটা নতুন করে গায়ে নিতে পারেন তিনি।
আগেই বলা হয়েছে দলবদলের পক্ষে যেমন যুক্তি আছে, বিপক্ষেও যুক্তি যথেষ্টই। তবে শেষ সিদ্ধান্তটা কিন্তু নেবেন মেসিই। তিনি যে ক্যারিয়ারের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়ে দাঁড়িয়ে আছেন, সেটা না বললেও চলে। আগামী দিনগুলোতেই হয়তোবা নির্ধারিত হয়ে যাবে, তিনি হাঁটবেন কোন পথে!