শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৯ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক: সানা: যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রচেষ্টার পর নভেম্বরের শুরুতে ইয়েমেনের সমুদ্র বন্দরসমূহে দেশটি অবরোধ আরোপ করেছে। চলমান গৃহযুদ্ধের অংশ হিসাবে সৌদি এই পদক্ষেপ নেয়। সৌদি আরবের কর্মকর্তারা বলছেন যে তারা ওই হামলা প্রচেষ্টার পর ইরান-সমর্থিত বিদ্রোহীদের অস্ত্র পাচার প্রতিরোধের জন্য এই অবরোধ আরোপ করেছেন। তবে, এই পদক্ষেপের কারণে লাখ লাখ ইয়েমেনী জনগণের প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে। সেভ দ্য চিলড্রেন, হিউম্যান আপিল ও ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি এক যৌথ বিবৃতিতে সতর্ক করে দিয়েছে যে, অবরোধ অব্যাহত থাকলে সেখানে ভয়াবহ সঙ্কট উপস্থিত হতে পারে।
অন্যদিকে, জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণ তহবিল কড়া ভাষার ব্যবহারসহ নজিরবিহীন পদক্ষেপ নিয়েছে। সংস্থাটির এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অবরোধকারীরা লাখ লাখ ইয়েমেনীকে আহত করছে। আহত এসব মানুষদের ক্ষুধা ও রোগ নির্মূল করতে জরুরি মানবিক সহায়তার প্রয়োজন।’ জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, দুই সপ্তাহ পর শুক্রবার অবরোধ স্থগিত করার পর প্রথমবারের মতো তাদের বিমান ইয়েমেনের রাজধানী সানাতে অবতরণ করেছে। যাই হোক, অবরুদ্ধ দেশটিতে ত্রান সামগ্রী নিয়ে আসার কোনো পথ না থাকায় এই সঙ্কটের মোকাবেলা করতে ইতোমধ্য সহায়তা-কর্মীরা প্রবল হিমশিম খাচ্ছেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একজন ইয়েমেনী গবেষক ক্রিসটিন বেকারলে এই সঙ্কট সম্পর্কে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক এক্সপ্রেস ডটকমকে জানান, দেশটিতে খাদ্য-সামগ্রী, জ্বালানি, ওষুধ ও সহায়তাকর্মীদের প্রবেশ করতে বাধা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই অবরোধ অব্যাহত থাকলে দেড় লাখ শিশু মারা যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে এবং ফের ‘প্রতিহিংসার সঙ্গে’ কলেরা মধ্যপ্রাচ্যে মহামারী আকার ধারণ করতে পারে।’ তিনি আরো বলেন, ‘যুদ্ধের আগে থেকেই ইয়েমেন মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ ছিল এবং যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় মানবিক পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে।’
ইয়েমেনী এই গবেষক বলেন, ‘মানবতার সঙ্কট সম্পর্কে আমরা প্রায় কথা বলে থাকি। যদিও এই সঙ্কটকে যুদ্ধ এবং সংঘর্ষের স্বাভাবিক ফলাফল হিসেবে বলা হয়ে থাকে এবং এটি একটি সত্য। কিন্তু ইয়েমেনের ক্ষেত্রে এটা সত্য নয়। কেবল যুদ্ধের কারণেই প্রায় এক মিলিয়ন লোক কলেরায় সংক্রামিত হতে পারে না। এখানে যুদ্ধরত গোষ্ঠীগুলোর আচরণের কারণে এটি ঘটছে।’
বেকারলে বলেন, ‘গৃহযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ ইয়েমেনের বেসামরিক নাগরিকদের সাহায্যের জন্য সহায়তাকর্মীদের কেবল সৌদিরাই বাধা দিচ্ছে না। হুথি-সালেহ বিদ্রোহী বাহিনীও এই অঞ্চলের ‘খারাপ অভিনেতা’ এবং ইয়েমেনে মানবিক সহায়তা প্রবেশে তারাও বাধা দেয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘যুদ্ধের আগে দেশটিতে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ খাদ্যদ্রব্য আমদানি করতে হতো। যুদ্ধ মানবিক পরিস্থিতির উপর বিশাল প্রভাব ফেলছে।’ এই নারী মানবাধিকার কর্মী বলেন, ‘মানবিক পরিস্থিতি অত্যন্ত চরম আকার ধারণ করেছে। এটি হচ্ছে নীতির সরাসরি ফলাফল।’
এদিকে, ব্রিটিশ সরকার ইয়েমেনের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং সমস্যাটির সমাধান খুঁজে বের করতে নিজেদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্য মন্ত্রী এলিসার বার্ট ২০ নভেম্বর হাউস অব কমন্সকে বলেন, ‘ইয়েমেনের মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে তার সরকার গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং সাম্প্রতিক অবরোধ আরোপ ইতোমধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সঙ্কটের সৃষ্টি করেছে এবং কলেরার প্রাদুর্ভাবও ব্যাপক আকার নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অবরোধ দ্রুত তুলে না নিলে সেখানে মানবিক পরিস্থিতি একটি গুরুতর রূপ নিতে পারে এবং ইয়েমেনের স্থলপথ, আকাশসীমা ও সমুদ্র বন্দরসমূহের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ও মানবিক সরবরাহের জন্য অবিলম্বে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে সকল পার্টিকে আহ্বান জানাচ্ছি।’ বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘হুথি-সালেহ বিদ্রোহীদের অস্ত্র হস্তান্তর প্রতিরোধ করার জন্য অবরোধ সৃষ্টি অনুমেয়, কিন্তু সরকার মানবিক প্রভাব সম্পর্কে উদ্বিগ্ন নয়।’ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সৌদি আরব কর্তৃক প্রতিবেশি দেশগুলোকে বারবার উত্তেজিত করা ও ক্রমবর্ধমান মানবিক পরিস্থিতি তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের শঙ্কা জাগিয়ে তুলছে।
সম্প্রতি, নতুন শাসক ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান, ইরানের নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে ‘নতুন হিটলার’ নামে অভিহিত করেছেন এবং মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে তিনি প্রভাব বিস্তার করেছেন বলে সালমান দাবি করেন। সূত্র: সানডে এক্সপ্রেস