সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪৬ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম :
গত বুধবার ১৫ জুলাই বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দল বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষকে দিয়েছে গৌরবময় এবং মধুর ঈদ উপহার। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট দল, যাকে ক্রিকেট প্রেমীরা বলেন প্রোটিয়াস, তাকে ২-১ ম্যাচে হারিয়ে টাইগাররা সিরিজ জয় করেছে। এই বিজয় নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট টীম বিশ্বের ইতিহাসে অন্যতম ক্রিকেট পরাশক্তি হিসেবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করলো। বিজয়ের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ হ্যাটট্রিক করলো। প্রথমে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানকে টাইগাররা হোয়াইট ওয়াশ করে। বাংলাদেশীরা এটির নাম দিয়েছে বাংলাওয়াশ। দ্বিতীয় দফায় আরেক সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারতকে ২/১ ম্যাচে পরাজিত করে বাংলাদেশ সিরিজ জয় করে। তৃতীয় দফায় আসে প্রোটিয়াসরা। টি-২০টি-এর দুটি ম্যাচে টাইগাররা হেরে যাওয়ায় সাময়িকভাবে বাংলাদেশীদের মধ্যে হতাশা নেমে আসে। এরপর প্রথম ওয়ানডেতেও অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে যাওয়ায় হতাশা ঘনীভূত হয়। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ায়। দ্বিতীয় এবং শেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশ শাব্দিক অর্থে দক্ষিণ আফ্রিকাকে তুলাধোনা করে। সঠিকভাবে বলতে গেলে পাকিস্তানকে পরাজিত করার আগে বাংলাদেশ টীম জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধেও সিরিজ বিজয় অর্জন করে। বাংলাদেশ যে ক্রিকেট পরাশক্তির ক্ষমতা অর্জন করেছে সেটির প্রথম প্রকাশ ঘটে বিগত বিশ্বকাপ ক্রিকেটে। সেই ক্রিকেটেই বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে উন্নীত হয়ে প্রমাণ করে যে তারা বিশ্বের যে কোনো পরাশক্তিকে মোকাবেলা করতে সক্ষম। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ভারতের কাছে পরাজিত হয়। এটি হলো অফিসিয়াল ভার্সন। কিন্তু ওই ম্যাচে ভারতের মুখ রক্ষার জন্য বাংলাদেশকে হারানো হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে এবং সেই অভিযোগ বেসরকারীভাবে প্রতিষ্ঠিতও হয়। একথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, আজ টাইগারদের কয়েকজন খেলোয়াড় বিশ্বের ক্রিকেট তারকারদের কাতারে শামিল হতে পেরেছেন। এরা হলেন মাশরাফী বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লা রিয়াদ, তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, মোস্তাফিজুর রহমান, মুশফিকুর রহিম, নাসের হোসেন, সাব্বির আহমেদ প্রমুখ। এরা এবং সেই সাথে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সমস্ত সদস্য আজ বাংলার বাঘ হিসেবে নিজেদের বিশ্ব সভায় পরিচিত করেছেন। তাদের গর্বে গর্বিত বাংলাদেশ। ১৬ কোটি বাংলাদেশীর তরফ থেকে আমরা এসব ব্যাঘ্র শাবককে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। একটি টীমের হারজিতের পেছনে থাকে একটি সমন্বিত টীম ওয়ার্ক। এই টীমে গুরু দায়িত্ব পালন করেন স্কীপার বা ক্যাপটেইন। বাংলাদেশের একের পর এক সিরিজ বিজয়ে ও হোয়াইট ওয়াশে নেতৃত্ব দিয়েছেন স্কীপার মাশরাফী বিন মুর্তজা। তাকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। সামগ্রিক বিজয়ে অবদান রয়েছে তাদের যারা ব্যবস্থাপনায় ছিলেন। এছাড়া অবদান রয়েছে কোচ এবং সিলেকটরদের। তাদের সকলকে জানাচ্ছি হৃদয় নিংড়ানো অভিনন্দন। একটি খেলা বা এক একটি সিরিজ নতুন নতুন তারকার জন্ম দেয়। ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ বিজয়ে ক্রিকেট জগতে উদিত হয়েছেন এক নতুন তারকা। মাত্র ১৭ বছর বয়স্ক এই বোলারের নাম মুস্তাফিজুর রহমান। একটি ইনিংসে ৬টি শক্তিশালী উইকেট নেয়ার পর ক্রিকেট জগতের সব শ্রেণীর মানুষ তাকে সস্নেহে অভিহিত করতে শুরু করেছেন ‘ওয়ান্ডার বয়’ বা ‘বিস্ময় বালক’ হিসেবে। এতো কম বয়সে ভারতের মতো একটি দুর্জয় এবং শক্তিশালী টীমের ৬টি উইকেটের পতন ঘটানোর নজির সচরাচর পাওয়া যায় না। মাহমুদুল্লা রিয়াদ বিশ্বকাপে ঝলসে উঠেছিলেন। এর আগে বিশ্বসভায় অলরাউন্ডার হিসেবে সাকিব আল হাসান বিশ্ব তারকাদের সারিতে নিজের আসন সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। নাসের হোসেনও এবার প্রমাণ করলেন যে তিনিও অলরাউন্ডার। ব্যাট হাতে এবং বল নিক্ষেপে তিনি সমান চৌকষ। তামিম ইকবালের ঝড়ে ব্যাটিং দর্শকরা শুধু উপভোগই করেন না, তার এক একটি মারের সাথে সাথে দশকরা উজ্জীবিতও হন। ক্রিকেট জগতে আগামী দিনে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অত্যুজ্জ্বল। বাংলাদেশ তার এই ক্রিকেট যাত্রায় অনেক দূর এগিয়েছে। তাকে পাড়ি দিতে হবে আরো অনেক পথ। আগামী দিনে বিশ্বকাপ জয় বাংলাদেশের জন্য আর ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখা নয়। এখন বরং বলা যায় যে, ঐ দূর আকাশে ক্রিকেটের বিশ্বকাপ বাংলাদেশকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। বিগত বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজ বিজয় পর্যন্ত বাংলাদেশ দল প্রমাণ করেছে যে, ক্রিকেট খেলার ৩টি বিভাগেই সে মুন্সীয়ানা অর্জন করেছে। মানুষ সাধারণত ব্যাটিং এবং বোলিংটাই বেশি করে দেখে। কিন্তু ফিল্ডিং এই দুটি বিভাগের চেয়ে কোন অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সাম্প্রতিক খেলাগুলোতে দেখা গেল, ফিল্ডিংয়েও টাইগাররা বিস্ময়কর উন্নতি সাধন করেছেন। শূন্যে উড়ে গিয়ে ক্যাচ ধরা অথবা জীবন বাজি রেখে বাউন্ডারী প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনন্য নজির স্থাপন করেছে। তারপরেও আমরা বলবো, বাংলাদেশের এখনো দরকার একাধিক জন্টি রডস। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, দক্ষিণ আফ্রিকার এই সাবেক প্লেয়ার ফিল্ডিংয়ের জগতে এক জীবন্ত কিংবদন্তী হয়ে আছেন। বিশ্বকাপ ছিনিয়ে আনতে হলে ক্রিকেটের এই তিনটি বিভাগেই অসাধারণ দক্ষতার প্রয়োজন। টাইগাররা ইতোমধ্যেই এই তিনটি বিভাগেই দক্ষতা দেখিয়েছেন। ক্রিকেট জগতে বিশ্বকাপ জিততে হলে এই তিনটি বিভাগেই মুন্সীয়ানা অর্জন করা প্রয়োজন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজ বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলো। এ জন্য আমরা বাংলাদেশ টীমকে অভিনন্দন জানাই। পর পর ৩টি সিরিজ বিজয় মানুষের প্রত্যাশাকে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই এখন মানুষ বিশ্বকাপ বিজয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
Copyright Daily Inqilab