শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৯ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : সরকার ১৭ কোটি জনগণের কথা চিন্তা না করে মাত্র ২১ লাখ (সরকারি ও এমপিওভুক্ত) চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন করায় সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রায় ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধির প্রভাবে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। সোমবার মন্ত্রিসভায় সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় আজ এক বিবৃতিতে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও মহানগর কমিটি উপরোক্ত মতামত ব্যক্ত করে।
বিবৃতিতে বলা হয়-বেতন বৃদ্ধির কথা শুনলেই দেশে বাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্য, সেবা সার্ভিস সবকিছুর দাম হু হু করে বেড়ে যাবে। বর্ধিত বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে জীবনযাত্রার ব্যয়ও বাড়বে। আর এর পুরো দায় ভার গিয়ে পড়বে সাধারণ ও স্বল্প আয়ের লোকজনের উপর। যেহেতু সরকারি চাকরিজীবীরা মোট জনসংখ্যার একটি সামান্য অংশ, মূল্যস্ফীতির চাপে তাদের সমস্যা না হলেও সংখ্যাগরিষ্ট জনগণের জীবন যাপন ও দৈনন্দিন জীবন জীবিকা নির্বাহে দুর্দশা আরও বাড়বে।
প্রসঙ্গত, দেশের ২১ লাখ সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়িয়েছে সরকার। গ্রেড ভেদে ৯১ থেকে ১০১ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। সরকারের হিসাব অনুযায়ী বিগত অর্থ বছরে বেতন-ভাতা খাতে সরকারের খরচ হয়েছে ৪৪ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা যা মোট বাজেটের ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ এবং বেতন বৃদ্ধির ফলে চলতি (২০১৫-১৬) অর্থ বছরে সরকারের অতিরিক্ত লাগবে ১৫ হাজার ৯০৪ টাকা এবং বেতন-ভাতা খাতে মোট খরচ হবে ৬০ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা যা মোট বাজেটের ২০ দশমিক ১ শতাংশ। সরকারের এই অর্থ সংস্থানের জন্য আভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ের উপর নির্ভরশীলতা বাড়বে। এটা জনগণের উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের বোঝা বাড়বে। কারণ, অতীতেও বেতন বৃদ্ধি করে সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধ করা যায়নি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়- দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, সুশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা এবং বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ ব্যাহত হওয়ায় শিল্প কলকারখানায় বিনিয়োগ সেভাবে বাড়েনি। ফলে প্রতিদিন শিল্প কলকারখানায় শ্রমিক/কর্মচারী ছাটাই নিত্যদিনকার খবরে পরিণত হচ্ছে। দেশে-বিদেশে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকোচিত হচ্ছে। যার কারণে, মানুষ জীবনে ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পথে মালেশিয়াসহ অনেক উন্নত দেশে যাবার চেষ্টা করছে।
বেতন বৃদ্ধির এই ঘোষণায় সরকারি ২১ লাখ চাকরিজীবী লাভবান হলেও শিল্প, কলকারখানা, ব্যবসা, বাণিজ্য, গার্মেন্টস সেক্টরসহ অন্যান্য বেসরকারি খাতে কর্মরত বিপুল পরিমাণ চাকরিজীবীদের জন্য কোন সুবিধা আনবে না। অথচ এই বেতন বৃদ্ধির মুল্যস্ফীতির চাপ সকলকে ভোগতে হবে। অন্যদিকে সরকারি সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য ন্যায় পাল নিয়োগ বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। সরকারি দপ্তরে উপরি (ঘুষ) দেয়া ছাড়া ফাইল নড়ে না, সরকারি প্রশাসনে গতিশীলতা আনায়নে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়গুলির কোন সুরাহা না করে শুধুমাত্র বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা গ্রহণযোগ্য নয়।
ক্যাব নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে আরও বলেন- সরকার সব সময় অল্প সংখ্যাক স্বার্থন্বেষী মহলকে খুশি করার জন্য ১৭ কোটি জনগণের উপর করের বোঝা ও দুঃখ দুর্দশা বাড়িয়ে দেন। এটা খুবই দুঃখজনক। আর এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা নিত্য প্রয়োজনীয় সকল প্রকার সকল দ্রব্যসমাগ্রী ও সেবা সার্ভিসের আরেক দফা আগুন ধরাবে। গুটিকয়েক সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে হঠকারী ও দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করে ক্যাব।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও অভিযোগ করা হয়- অসৎ ব্যবসায়ী ও মুজদদাররা নানা টালবাহনায় ও অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়। বিনা নোটিশে সারা দেশে বাস ভাড়া বাড়ানো, গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি, সকল প্রকার ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি ও সাময়িক সংকট তৈরি করে। বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেন- ক্যাব কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসসিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু প্রমুখ। সূত্র : বিজ্ঞপ্তি