সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:১১ অপরাহ্ন
সাইফ উল্লাহ, বিশেষ প্রতিবেদক (সুনামগঞ্জ):
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলাধীন হাওরাঞ্চল মধ্যনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নানান সমস্যায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠ্যদান করছেন শিক্ষকরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, মধ্যনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯২৯ সালে স্থাপিত হয়েছিল। এলাকার দানশীল ব্যক্তি বর্গের সহযোগীতায় মধ্যনগর মৌজা, খতিয়ান নং-২৮৭, জমির পরিমাণ ৩.৭৪ একরের মধ্য স্কুলটি গড়ে উছে। স্কুলে ১ম শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যায় মোট শিক্ষার্থী ১৫৬ জন এতে বালক ৮১ ও বালিকা ৭৫ জন রয়েছে। ৫ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন অত্র বিদ্যালয়ে। নদী ভাঙ্গণে ৬ শতাংশ ভূমি ভেঙ্গে যায় ও পুরাত ভবনটি ২০০৭ সালে স্কুল ভবণটি বিলীন হয়ে যাওয়ার পর থেকে ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে পিইডিপি-২ এর অর্থায়নে ৭০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৭ ফুট প্রস্থ নতুন ভবণ নির্মাণ করা হয়। এক বছর যেতে না যেতেই স্কুলের অফিস কক্ষে, ৫শ শ্রেণী ও ৩য় শ্রেণীর কক্ষে সাদ দিয়ে পানি পড়ে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে। যদি বৃষ্টি আসে তাহলে বারান্দায় ওই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এতে শিক্ষার মান দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে বলে জানা যায়। এছাড়া স্কুল খেলার মাঠ নেই, প্রতিরক্ষা দেওয়াল নেই, স্কুলের সামনে পানি পিছনেও পানি রয়েছে এ সকল ধরণের সমস্যায় জর্জরিত মধ্যনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
স্বুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. কামাল হোসেন জানান, ওই স্কুলে ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১শত ৫৬ জন রয়েছে, আমার নিয়মিত স্কুল পরিদর্শন করি এতে দেখতে পাই ৫ জন শিক্ষক খুব বেশী কষ্ট করে লেখা পড়া করান। স্কুলের অরক্ষিত পুরাতন ভবনটি ভেঙ্গে না ফেললে যে কোন সময় দূঃগঠনা হতে পাওে তাই কর্তপক্ষের কাছে শুদৃষ্টি কামনা করি, অত্র স্কুলে হাওরিয়া, পূর্বপাড়া, পশ্চিমপাড়া, পুরাতনপাড়া, ভদ্রপাড়া, বড় শেখপাড়া, সুনইপাড়াসহ ৭টি গ্রামের ছাত্র/ছাত্রীরা স্কুলে লেখাপড়া করে, বিনোদন করার মাঠ নাই, স্কুল ভবণের পাশে যদি মাটি ভরাট করা হয়, তাহলে সুন্দর একটি মাট হবে এবং ছেলে মেয়েরা বিনোদন করতে পারবে।
স্কুলের মাঠ ও প্রতিরক্ষা দেওয়াল না থাকায় অনেক ছেলে মেয়ে স্কুলে আসে না, যদি স্কুল মাঠ ও দেওয়াল তাকে তাহলে স্কুলে গ্রামে ৫শত শিক্ষার্থী দেখা পড়া করতে পারবে।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের সুদৃষ্টি কামনা করি। প্রায় ১০ বছর যাবৎ নানান সমস্যার মাঝে শিক্ষার্থীদের পাঠ্য দান করছেন।
বিদ্যুৎসাহী সম্ভু রায় বলেন, আমার হাওর পাড়ের বাসিন্দা তাই আমাদের খবর কেউ রাখেন না। অনেক ছাত্র রয়েছে মাঠ ও প্রতিরক্ষা দেওয়াল না থাকায় স্কুলে আসে না।
কাকলী হালদার বলেন, সরকারী কর্মকর্তারা যদি মাসে ১ বার আসেন তাহলে স্কুলের সমস্যাগুলো তুলে ধরা যেত।
৫র্থ শ্রেণীর স্কুল শিক্ষার্থী মেহেরিন আক্তার (১০), সুব্র রায় (১১) প্রতিবেদক জানায়, আমাদের মাঠ নাই, তাই খেলতে পারি না।
৪র্থ শ্রেনীর অয়ন রায় বিশাল (৯), বিনা পাল (৯) বলেন, আমাদের স্কুলে বৃষ্টি হলেই বসে পড়া লেখা করতে পারি না।
৩য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী নিলয় হাসান অপূর্ব (৮), অনন্যা পাল (৮) বলেন, আমরা বই পাইছি, নিয়মিত স্কুলে আসি কিন্তু খেলার জায়গা আমাদের নাই, লেখা পড়াকরা খুব কষ্ট হচ্ছে, দেখার কেউ নেই, আমাদের দেখে কেউ দেখে না।
মধ্যনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরবিন্ধু মালাকার বলেন, স্কুল ভবনে বৃষ্টির পানি, পুরাতন ভবন পরিত্যক্ষ ঘোষণা, প্রতিরক্ষা দেওয়াল, মাটি ভরাট করা একান্ত প্রয়োজন এ সকল সমস্যার কারণে শিক্ষা বিঘœ ঘটে। আমি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সু দৃষ্টি কামনা করি।
এ ব্যাপারে মধ্যনগর ইউপি চেয়ারম্যান প্রবির বিজয় তালুকদার বলেন, স্কুলে বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে, লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা প্রয়োজন কিন্তু স্কুলের মাঠ নেই, পাশাপাশি অরক্ষিত ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার জন্য, মাসিক সমন্বয় সভায় আলোচনা করেছি।
এ ব্যাপারে ধর্মপাশা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দিন সত্যতা স্বীকার করে বলেন, স্কুলে বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে অচিরেই স্কুলের সমস্যা সম্পন্ন হবে। আমি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিত ভাবে সমস্যার কথা জানাব, অচিরেই সমস্যা সমাধান করা হবে।