শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম:
দীর্ঘদিনের সমস্যা অবশেষে লাঘব হলো সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার তিন গ্রামের মানুষের। চলনবিলে নির্মিত হয়েছে দ্বি-তল বিশিষ্ট ঈদগাহ। এতে করে ঈদের নামাজ নৌকায় পড়তে হবে না গ্রামবাসীদের। আগামীকাল বুধবার (২২ আগস্ট) তিন গ্রামের মানুষ ভাসমান পাকা ওই ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করবেন।
বর্ষাকালে দু’চোখ যতদূর যায়, শুধু পানি আর পানি। পানির ওপর ভাসছে গ্রামগুলো। প্রবল বর্ষার পানির ঢেউ সজোরে আছড়ে ভেঙে ফেলতে চাইছে মানুষের ঘরবাড়িসহ সবকিছু। পানিমগ্ন এই জনপদে মানুষের চলাচলের জন্য নৌকাই একমাত্র ভরসা। বর্ষায় চারদিকে তলিয়ে যাওয়ায় এখানকার মানুষের দুঃখের কোনো শেষ নেই। এমনকি এখানকার কবরস্থানগুলো তলিয়ে যাওয়ায় মৃত মানুষকে পর্যন্ত দাফন করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। তাই এ জনপদের মানুষকে এতদিন পবিত্র ঈদের নামাজ পড়তে হতো কবরস্থানের পাশে সারি সারি নৌকা বেঁধে তার উপর। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলে আসছিল চলনবিল অঞ্চলের সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়নের নরসিংহপাড়া, শুকলাই ও শুকলহাট গ্রামের মানুষের। গ্রামগুলোর মানুষের এ সমস্যা সমাধানে নির্মিত হয়েছে অভিনব ভাসমান দ্বিতল পাকা ঈদগাহ মাঠ। জনহিতকর এই কাজের পরিকল্পনাকারী ও উদ্যোক্তা নরসিংহপাড়ার গ্রামের সাহিত্যিক সাংবাদিক মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলম। তিনি এ গ্রামের বিশিষ্ট আইনজীবী, সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মরহুম আলহাজ্ব ব্যারিস্টার রওশন আলি সাহেবের একমাত্র পুত্র।
জানা গেছে, গত দু’বছর আগে তিনটি গ্রামের কয়েকশ’ মানুষের উপস্থিতিতে মিলাদ মাহফিল ও মিষ্টি মুখ করে এ ঈদগাহ মাঠের মাটিকাটা কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করা হয়। এই প্রকল্পের মাটিকাটা কাজের উদ্বোধন করেন তিন গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক ৬ মুরুব্বিগণ।
ঈদগাহ মাঠের নির্মাণ পরিকল্পনাকারী সাংবাদিক মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলম নিজ গ্রামের মানুষের এই দুরাবস্থা নিরসনের জন্য প্রায় দু’বছর বছর আগে ঈদগাহের সমস্যা মিটানোর জন্য পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনার অবশেষে বাস্তবরূপ লাভ করে পানির মধ্যে পাকা পিলারে ছাদ দেয়া নির্মিত হয় দ্বি-তল ঈদগাহ মাঠ। এই ঈদগাহ নির্মাণ করা হয়েছে নরসিংহপাড়া, শুকলাই ও শুকলহাট তিন গ্রামের মাঝখানে ঈদগাহের মাঠের জন্য দান করা নিজস্ব জায়গায়। চলনবিলের ঘোরপল্লী এই তিন গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। পানির উপর দণ্ডায়মান সাইক্লোন শেল্টার আদলে তৈরি এই ঈদগাঁহে প্রায় তিন হাজার মুসল্লি এক সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারবেন।
স্থানীয় এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঈদগাহ নির্মাণের টাকার একটি অংশ ব্যারিস্টার রওশন-জাহান ফাউন্ডেশনের পক্ষে মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলম ও তার পরিবার দিয়েছেন। এছাড়া জাহাঙ্গীর আলম তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, ব্যবসায়ী, শিল্পপতিদের কাছ থেকেও অর্থ সংগ্রহ করে এক বিঘা জায়গার উপর ঈদগাহ মাঠটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। চলনবিল অঞ্চলের এই গ্রামে পানির মধ্যে পিলার দিয়ে ঈদের মাঠ নির্মাণ কাজটি যেমন অভিনব নির্মাণশৈলী তেমনি নতুন। পানির উপরে মসজিদ নির্মাণের কথা শোনা গেলেও ঈদগাহ নির্মাণের উদ্যোগ এটিই প্রথম।
ইতোমধ্যে এই পানির উপর অভিনব এ ঈদগাহ নির্মাণের ব্যাপারে বিপুল সাড়া পড়ে গেছে। প্রতিদিন লোকজনের সমাগম হচ্ছে এ ঈদগাঁহ মাঠ দেখার জন্য। দূর দূরান্ত থেকে সাধারণ মানুষ ঈদগাহ মাঠটি দেখতে আসছেন। বর্ষাকাল হওয়ায় পানির মধ্যে ভাসমান ঈদগাহ মাঠটির সৌন্দর্য যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।