শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:০৫ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম:
কুরবানির পশুর চামড়ার বাজারে ধস নামায় কওমী মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষা কার্যক্রমে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বুধবার বিকালে পাইকারী বাজারে পশুর চামড়ার দাম হঠাৎ করেই কমে যায়। এতে অনুদান হিসেবে পাওয়া চামড়ার দাম না পেলে আর্থিক সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের।
চামড়ার পাইকারী বাজারে একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা এবছর কুরবানির গরুর চামড়া প্রতিটি ৮শ’ টাকা থেকে ৯শ’ টাকার মধ্যে কিনছেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বছর ঈদুল আযহায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া দাম (ঢাকায়) ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, খাসি ১৮ থেকে ২০ টাকা, বকরি ১৩ থেকে ১৫ টাকা নির্ধারণ করে।
গত বছরের চেয়ে দাম কম উল্লেখ করে সরকারের চামড়ার দাম কমানোর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ঈদের আগেই এক সংবাদ সম্মেলন করেছিল কওমী মাদ্রাসাগুলোর সংগঠন কওমী ফোরাম।
তখন সংগঠনটির সমন্বয়ক মুফতি সাখাওয়াত হুসাইন বলেন, ‘সাধারণ মানুষের দানের পাশাপাশি যাকাত, ফিতরা ও কুরবানির সময় দান করা চামড়া বিক্রির আয়ের ওপরই নির্ভরশীল অধিকাংশ মাদ্রাসার পরিচালনা ব্যয়। কিছু মাদ্রাসা আছে যারা দানের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। চামড়ার দাম কমালে তাদের ক্ষতি হবে সবচেয়ে বেশি।’
তিনি আরও বলেন, ‘চামড়ার দাম প্রতিবছর কমতে থাকায় এরই মধ্যে বহু ছোট মাদ্রাসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চামড়ার দাম কমার কারণে অনেক কওমী মাদ্রাসার আয় কমে যাবে। যার ফলে সেসব মাদ্রাসায় পড়ালেখা করা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে।’
এদিকে সরকারের দাম কমানোর পরেও সেই হিসাবে প্রতিটা গরুর চামড়ার দাম ১২শ’ থেকে ১৩শ’ টাকা করে আসার কথা বলে মনে করেন মাদরাসা শিক্ষকরা। কিন্তু পাইকাররা ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকার বেশি দামে কিনতে রাজি নন। ফলে সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি করতে না পেরে কওমী মাদরাসা শিক্ষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বিকালে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় চামড়ার পাইকারী বাজারে একাধিক কওমী ও এতিমখানা মাদরাসা শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, চামড়ার বাজার ধসের কারণে তাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
সাভার এলাকার জায়গির দারুল আমিন কওমী মাদরাসার শিক্ষক মো. রেজাউল করিম প্রতিষ্ঠানের অনুদানের ৫৫টি চামড়া নিয়ে এসেছেন। তিনি পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আমাদের মাদরাসা এলাকাবাসীর অনুদানে চলে থাকে। আর অনুদানের বড় অংশ পেয়ে থাকি চামড়ার দান থেকে। কিন্তু চামড়ার দামের যে অবস্থা, তাতে করে প্রতিষ্ঠান চালানো আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে।’
একইভাবে বাজারে চামড়া বিক্রি করতে এসে দাম না পেয়ে ক্ষোভের কথা জানালেন জিগাতলা ধুমাপাড়া মাদরাসার শিক্ষক তৈয়েবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের মাদরাসায় প্রায় ২০০টা চামড়া আসার কথা। বাজারে ৫০টা চামড়া নিয়ে এসেছি। কিন্তু বাজারের অবস্থা দেখছি খুবই খারাপ।’
এমন অবস্থা চলতে থাকলে মানুষের অনুদানে চলা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়বে মনে করেন এই মাদরাসা শিক্ষক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার এতিমখানা মাদরাসার এক শিক্ষক পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানে সব এতিম শিশুরা পড়াশোনা করে। প্রতি বছর কুরবানি ঈদ আসলে চামড়ার বড় একটা কালেকশন করে থাকি। এবারো মানুষ আমাদের চামড়া দিয়েছে, তবে বাজারের অবস্থা খুব খারাপ।’
জানতে চাইলে পাইকারী ব্যবসায়ী মুফতি মইনুদ্দিন পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘এখানে আমাদের কিছু করার নেই। কারণ ট্যানারি মালিকদেরর কাছ থেকে কোনো ধরনের সাড়া পাইনি। তাই আমরা ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকার মধ্যে কিনছি।’
মইনুদ্দিন আরও বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত ২২শ’ চামড়া কিনেছি। এখন যদি ট্যানারি মালিকরা চামড়া নিতে না চায়, সেক্ষেত্রে আমাদেরকেই বিপাকে পড়তে হবে। কারণ লবণ দিয়ে মজুদ করার মতো সক্ষমতা আমাদের নেই।’
এবিষয়ে বাজারে উপস্থিত এক ট্যানারি মালিক সেলিম মিয়া পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘সরকার দাম নির্ধারণ করেছে। কিন্তু আমরা কিনে আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করতে হবে। সেখানেই তো কোন চাহিদা নেই। তাই একটু সময় নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের অবস্থা পযর্যালোচনা করে চামড়া কিনতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘সরকারিভাবে যদি মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকতো এবং ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে আশ্বাস্ত হতে পারতাম তারা চামড়া কিনবে, তাহলে আমাদের চামড়া কিনতে কোনো আপত্তি ছিল না।’