শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৪৫ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেক্স : ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে কয়েকজন খেলোয়াড় ইচ্ছে করে বাজে খেলার কারণে পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছে হেরেছিল বলে দাবি করেছেন পাকিস্তানের সাবেক কোচ জাভেদ মিয়াঁদাদ। পাকিস্তানের জং পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে তারই কোচ থাকার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরুর আগমুহূর্তে কয়েকজন খেলোয়াড় আপত্তি করায় তিনি পদত্যাগ করেন। খেলোয়াড়দের দুর্নীতি আর অনিয়ম নিয়ে কথা বলার কারণেই তারা আপত্তি করেছিল বলেই মিয়াঁদাদ দাবি করেন।
এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই তিনি বলেন, ১৯৯৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ এবং ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা ইচ্ছে করেই খারাপ খেলে হেরেছে। সম্প্রতি তখনকার পিসিবি প্রধান মাহমুদ দাবি করেন, মিয়াঁদাদ দল নির্বাচনে আরও বেশি ক্ষমতা চেয়েছিলেন বলেই তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু মাহমুদ সত্য লুকিয়েছেন দাবি করে মিয়াঁদাদ বলেন, আসলে আমি উনাকে কয়েকজন খেলোয়াড়ের ব্যাপারে সতর্ক করে বলেছিলাম, এরা ইচ্ছে করে খারাপ খেলছে, কিছু ম্যাচের ফল বদলে দিচ্ছে। কিন্তু উনি বিশ্বাস করেননি। এখন তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি পাকিস্তানের ক্রিকেটের কত বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। কয়েক বছর পরে সাঈদ আনোয়ার আমার সঙ্গে দেখা করে সেই ঘটনার জন্য ক্ষমা চায়। ও বলেছিল, কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটার দলের জুনিয়রদেরও আমার বিরুদ্ধে উসকে দিয়েছিল। সেবার বিশ্বকাপে এই খেলোয়াড়রাই কিন্তু বাংলাদেশের বিপক্ষে অপ্রত্যাশিত হারের জন্য দায়ী ছিল। তা ছাড়া সেই বিশ্বকাপের ফাইনালে কী হয়েছিল, সেটাও এখন ইতিহাস।’
তিনি বলেন, সেবার বিশ্বকাপে এই খেলোয়াড়রাই কিন্তু বাংলাদেশের বিপক্ষে অপ্রত্যাশিত হারের জন্য দায়ী ছিল। তাছাড়া সেই বিশ্বকাপের ফাইনালে কী হয়েছিল, তাও সবার জানা। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তান ছিল অন্যতম ফেভারিট। প্রথম চার ম্যাচ জিতে সুপার সিক্স নিশ্চিত করে ফেলা ওয়াসিম আকরামের দলের জন্য বাংলাদেশের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটির তেমন গুরুত্ব ছিল না। তবু বাংলাদেশ যে পাকিস্তানকে হারিয়ে দেবে, তা বোধহয় কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।
আগের চার ম্যাচের কোনোটিতে ২০০ রানও করতে পারেনি বাংলাদেশ। এমনকি স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেও না। কিন্তু নর্থহ্যাম্পটনে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে আকরাম-ওয়াকার-শোয়েব-সাকলায়েনদের নিয়ে গড়া দুর্দান্ত বোলিং আক্রমণের সামনে বুক চিতিয়ে লড়াই করে নয় উইকেটে ২২৩ রান করে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের জন্য ২২৪ রানের লক্ষ্য খুব কঠিন কিছু ছিল না। কিন্তু ১৯৯৯ সালের ৩১ মে সবকিছুই যে ছিল বাংলাদেশের পক্ষে! ৪২ রানের মধ্যে আফ্রিদি-ইজাজ-আনোয়ার-ইনজামাম-মালিককে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে যায় ‘৯২-এর বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। পাঁচজনের কেউই দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেননি।
ষষ্ঠ উইকেটে ৫৫ রানের জুটি গড়ে দলকে কক্ষপথে ফেরানোর চেষ্টা করেছিলেন আজহার মেহমুদ ও আকরাম। কিন্তু দলীয় ৯৭ রানে মেহমুদ ও ১০২ রানে আকরামের বিদায়ের পর হার এড়াতে পারেনি পাকিস্তান। ৪৫তম ওভারে সাকলায়েনের রান আউটে পাকিস্তানের ইনিংসের সমাপ্তি আনন্দে ভাসিয়ে দেয় বাংলাদেশের মানুষকে। ব্যাট হাতে ২৭ রানের পর আফ্রিদি, ইনজামাম ও সেলিম মালিকের উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার পান খালেদ মাহমুদ। সেদিন তাঁর বোলিং ফিগারও ছিল দেখার মতো, ১০-২-৩১-৩।
ম্যাচ শেষে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে ওয়াসিম আকরাম বলেছিলেন, ‘ছোটভাইয়েরা আমাদের হারিয়েছে বলে ভালো লাগছে।’ আর বাংলাদেশের অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেছিলেন, ‘আমরা আজ ইতিহাস গড়েছি। বিশ্বের অন্যতম সেরা দল পাকিস্তানের বিপক্ষে এই জয় আমাদের টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তি আর তরুণ খেলোয়াড়দের এগিয়ে যাওয়ার পথে সহায়ক হবে।