মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:২৬ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : রঙিন পোশাকে নতুন আপনি অথচ সাজহীন হাত থাকবে- তাকি হয়? ঈদের কেনাকাটা প্রায় শেষ হল, তাই এখন মেহেদির রঙে হাত রাঙানোর পালা। সুদূর অতীত থেকেই যেকোনো উৎসব বা বিয়েতে মেহেদি পাতার লাল রঙে হাত রাঙানোর প্রচলন ছিল। কিন্তু বর্তমানে টিউবে ভরা মিহি মেহেদি আমাদের কষ্টকে কমিয়ে দিয়েছে অনেক খানি। মেহেদি পাতা বাটার ঝামেলা তো নেই-ই বরং অল্প সময়ে হাত রাঙাতে এসব মেহেদি দারুণ পারদর্শী। টিউবের চিকোন নজেল দিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে হাতের কারুকাজে হয়ে ওঠে মনোহারিনী সব নকশা।
ঈদ এলে সৌন্দর্য সচেতন রমণীরা নিজেদের হাত রাঙাতে একদম ভুলে যান না। তবে প্রত্যেকের আলাদা রুচিবোধের কাছে মেহেদির নকশা পায় ভিন্নতা। কারো হাত জুড়ে থাকে কলকা, পাতা, ফুল, লতা বা আলপনা। কারো হাতের কিছু অংশ ফাঁকা রেখে চিকোন ডিজাইন ওঠে কনুই থেকে হাতের লম্বা আঙুল পর্যন্ত। কেউ শুধু দুই হাতের পিঠের অংশ সাজিয়ে ক্ষান্ত থাকেন। কোনো রমণীর আবার দুই হাতের তালু, পিঠ এবং পায়ের পাতায় থাকা চায় পছন্দের ডিজাইন।
দিন বদলের সঙ্গে মেহেদির ডিজাইনে এসেছে আমূল পরিবর্তন। মেহেদি এখন শুধু হাতের নখ বা তালু-পিঠ সাজানোর উপকরণ নয়। পাশ্চাত্য স্টাইলে শরীরে স্থায়ী ট্যাটু না দিলেও তার আদলে হচ্ছে মেহেদির বিশেষ ডিজাইন। বিশেষ করে নবদম্পতির আবেগঘন মুহূর্তকে আরও একটু বিশিষ্টতা দিতে পাজরের এক পাশে, কাঁধে, নাভির পাশে, কোমরের ওপর এবং গোড়ালির ওপর থেকে হাটুর দিকে উঠতে থাকে সেসব ডিজাইন। তবে মেহেদির যে ডিজাইন-ই বলুন না কেন, আপনার ভাবনা, রুচির আর প্রদর্শণের প্রয়োজনেই নান্দনিকতা ফুটে ওঠে।
মেহেদীকে ঘিরে কত আনন্দ, কত স্মরনীয় ঘটনা প্রায় সবার আছে। প্রিয় এই মেহেদির নিখুত ডিজাইন পেতে থাকতে হবে কিছু প্রস্তুতি। কারণ, সামান্য ভুলের জন্য প্রিয় রঙের সাজে কোনো খুত কারোই কাম্য নয়। তাই আসুন একটু জেনে নেয়া যাক।
– প্রথমেই ভালো মানের মেহেদি বাছাই করা জরুরি। প্রাকৃতিক রঙ এবং রঙের স্থায়ীত্ব থাকবে এমন মেহেদি বেছে নেয়া ভালো।
– মেহেদী দেওয়ার আগে খুব ভারি কোনো খাবার কিংবা পানীয় পান থেকে বিরত থাকুন। এতে হাতের মেহেদি শুকানোর আগে ওয়াসরুমে যাওয়ার ঝামেলা থাকবে না।
– ঈদের পোশাক এবং সাজের ধরণটা এরই মধ্যে আপনার কল্পনাতে চলে এসেছে। তাই সবকিছুর সঙ্গে মানানসই ডিজাইনটা বেছে রাখতে পারেন। আজকাল মেহেদির নকশা বই বা ইন্টারনেটে অনেক ডিজাইন পাওয়া যায়। আপনার পছন্দের ক্যাটাগরি বাছাই করেও হাতে নকশা করতে পারেন।
– মেহেদি লাগানোর আগে ভালোমতো হাত-পা ধুয়ে শুকিয়ে নিন। কোনরকমের মলম কিংবা ক্রীম ব্যবহার করা ঠিক নয়।
– মেহেদি লাগানোর সময় টিস্যু পেপার, হালকা সুতি কাপড়, একটি টুথপিক সঙ্গে রাখুন। নকশার সুক্ষ্ম কোণগুলো তুলতে এগুলো কাজে দেবে।
– এসময় ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে। পোশাকের রঙ গাঢ় হলে ভালো হয়। যাতে মেহেদির রঙ লেগে গেলেও পরবর্তীতে দাগ বোঝা না যায়।
– ঈদের আগের সন্ধ্যায় সময় নিয়ে মেহেদি লাগানো ভালো। তাহলে সাজের সঙ্গে মেহেদির টকটকে রঙ থাকবে।
– যারা পাতা মেহেদি বেটে হাতে লাগাতে চান তারা গাঢ় রঙ পেতে কয়েকটি লবঙ্গ চুলায় হালকা পানি দিয়ে গরম করে নিন। ধোঁয়া উঠতে শুরু করলে মেহেদি দেয়া হাত পানির ভাপের ওপর রাখুন। হালকা ভাপে মেহেদির রঙ ভালো হয়।
– মেহেদী কিছুটা শুকিয়ে আসলে এতে চিনি ও লেবুর রসের মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন। তবে চিনি ও লেবুর রসের মিশ্রণ হাতে বেশি পড়ে ডিজাইন যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
– শুকিয়ে গেলে মেহেদি ঝরিয়ে টিস্যু দিতে হাত মুছে ঘুমাতে যেতে পারেন। হাত না ধোয়া ভালো। সকালে উঠে মেহেদির মনকাড়া নকশা আর রঙ দেখে নিজেই আপ্লুত হয়ে যাবেন। ঈদ আনন্দের শুরু হতে পারে এই ভালো লাগা থেকেই।