রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫১ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১
সুনামগঞ্জে হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত: নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

সুনামগঞ্জে হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত: নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

আমার সুরমা ডটকম:
সুনামগঞ্জে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ার প্রতিবাদে সংসাদ সম্মেলন করেছে হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন। সংবাদ সম্মেলন থেকে তারা নির্ধারিত সময়ে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ সমাপ্ত না করার প্রতিবাদে আগামী ২ মার্চ শনিবার সকাল ১১টায় একযোগে জেলার সকল উপজেলা সদর ও ইউনিয়ন কমিটি পর্যায়ে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় শহরের শহীদ জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরী হলরুমে হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট স্বপন কুমার দাস রায়ের সভাপতিত্বে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়। পরে সভাপতি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তন দেন।
লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা আমাদের সকল উপজেলা কমিটি ও আপনাদের সংবাদ মাধ্যমে বুঝতে পারছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ হবে না। তাই প্রমানীত হলো কোন বাঁধের কাজ শেষ হয়নি। প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের আচরণেও তা প্রত্যক্ষ হচ্ছে। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক যোগদানের পরই আমরা উনার সাথে মত বিনিময় করেছিলাম। আমাদের দাবি ছিলো গণ-শুনানির মাধ্যমে পিআইসি গঠন করা। তিনি আমাদের দাবি মানলেন না। তাদের খেয়াল খুশি মতো পিআইসি গঠন করা হলো। সঠিক সময়ে কাজ শুরু হলো না। এখন জেলা প্রশাসক বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের জন্য কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। তাহিরপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলছেন ৬৬টি পিআইসির মধ্যে ১৫টি পিআইসির সভাপতি সদস্য সচিব অযোগ্য। গণ-শুনানির মাধ্যমে পিআইসি গঠিত হলে এসব প্রশ্ন উঠতো না। আমরা লক্ষ করছি কয়েকদিন যাবত বিভিন্ন উপজেলায় পিআইসি সভাপতি সদস্য সচিবকে আটক করে মুচলেকার মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হচ্ছে। কাজের শেষ সময়ে এসে এসব কেন? এখনতো প্রশাসনের উচিত আনুষ্ঠানিক ভাবে বাঁধের কাজ শেষ ঘোষণা করা। এগুলো কি সময় বাড়ানো এবং নিজেদের উপর থেকে দায় সড়ানোর পায়তারা কি না? আমরা তাদের জানাতে চাই ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় হাওর ডুবি হলে এর দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। পাউবোর অগ্রগতি প্রতিবেদনেও হাওরে কাজের কোন মিল নেই। তারা বলছেন কোথায় শত ভাগ আবার কোথাও ৭০ ভাগ কাজ হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কাজ হয়েছে ৫০-৬০ ভাগ। তবে কোথাও কোথাও ৩০ ভাগও হয়নি। গত ২১ ফেব্রুয়ারি একটি বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। এটা কবে শেষ হবে আমরা জানিনা। তবে এবার যদি বলা হয় উপজেলা নির্বাচনের জন্য কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা। হাওরে অনেক অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণ করে সরকারী অর্থ আত্মসাতের পায়তারাও চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে ১১টি উপজেলার হাওর বাাঁও সুনামগঞ্জ বাাঁচাও আন্দোলনের অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। তাতে তারা বলেন, এবার হাওর রক্ষা বাঁধে সবচেয়ে বেশী অনিয়ম ও দূর্নীতি হচ্ছে দিরাই-শাল্লায়। বিভিন্ন উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ১৫টি প্রকল্পের অবস্থা খুবই নাজুক বলে উল্লেখ করেছেন। এসব পিআইসর সভাপতি, সদস্য সচিবদের অযোগ্য বলেছেন। আমাদের মনে হচ্ছে প্রশাসন তাদের ওপর থেকে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন। আমরা বলে দিতে চাই হাওরের কোন বিপর্যয় এলে এর দায় প্রশাসনকে নিতে হবে। আমরা সুনামগঞ্জের কৃষকদের নিয়ে প্রয়োজনে পাউবো অফিস, ডিসি অফিস, ইউএনও অফিস ঘেরাও কর্মসূচি দেবো। কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
হাওরের বোর ফসল রক্ষায় প্রাক্কলন পূর্ব থেকেই আমরা কৃষকদের দাবি জানিয়ে আসছি যা আপনারা প্রচার ও প্রকাশ করেছেন। সময়ে সময়ে আমরা বিভিন্ন আশঙ্কা প্রকাশ করেছি। আমাদের আশঙ্কাকে গুরুত্ব না দেওয়ায় পরবর্তীতে দেখা গেছে আমরা যা বলেছিলামা তাই ঘটেছে। তাই আমরা আবার বলছি অনতি বিলম্বে হাওরের বোর ফসল রক্ষা বাঁধ নীতিমালা অনুযায়ী সমাপ্ত করতে হবে। অন্যথায় হাওরে বিপর্যয় ঘটলে এর দায় সংশ্লিষ্টদের নিতে হবে। নির্ধারিত সময়ে বাঁদের কাজ সমাপ্ত না করার প্রতিবাদে আগামী ২ মার্চ সকাল ১১টায় একযোগে জেলার সকল উপজেলা সদর ও ইউনিয়ন কমিটি পর্যায়ে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করছি। পরবর্তীতে আমরা আরো কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হবো। আশা করি আওরের কৃষকদের পক্ষে আপনাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন-এর উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, বিকাশ রঞ্জন চৌধুরী ভানু, রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টু, সহ-সভাপতি সুখেন্দু সেন, সদস্য অধ্যক্ষ মো. রবিউল ইসলাম, যুগ্ম-সম্পাদক সালেহীন চৌধুরী শুভ, সাংগঠনিক সম্পাদক একে কুদরত পাশা, মাসুম হেলাল, ইমরানুল হক চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ প্রদীপ কুমার পাল, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক মিলন, সদর উপজেলা আহব্বায়ক চন্দন রায়, সদস্য সচিব শহীদ নূর আহমদ।
উল্লেখ্য, সুনমগঞ্জের ১১টি উপজেলায় এবার ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ করবে ৫৫৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)। যার মধ্যে সদর উপজেলায় ৯টি, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ১৬টি, ধর্মপাশায় ৭৪টি, জামালগঞ্জে ৫৩টি, তাহিরপুরে ৬৩টি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ৪০টি, ছাতকে ৭টি, জগন্নাথপুরে ৫০টি, দোয়ারাবাজারে ২৩টি, দিরাইয়ে ১০১টি ও শাল্লা উপজেলায় ১১৪টি রয়েছে। তাতে খরচ হবে ৯৫ কোটি টাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com