বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫০ পূর্বাহ্ন
অধ্যক্ষ সৈয়দ রেজওয়ান আহমদ
প্রকৃতিগতভাবে মানুষ স্বাধীন। তাই মানুষ স্বাভাবিকভাবে এবং সঙ্গত কারণে স্বাধীনচেতা। ব্যক্তি অধিকার বঞ্চিত পরাধীন মানুষের জন্য মানবতাবাদ আর স্বাধীনতার বাণী নিয়ে জাহেলিয়াতের যুগে আগমন ঘটেছিল সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সা.-এর। আরবের মানুষ যখন পরাধীনতার কালো যুগের অধিবাসী, আমাদের শেষ নবী সা. তখন এসেছিলেন স্বাধীনতা আদায়ের বাণী নিয়ে। ইসলাম মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৈৗমত্ব রক্ষার জোরালো তাগিদ দিয়েছে। দেশতথা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিয়োজিত লোকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন সম্পর্কে নবীজী সা. বলেছেন, রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা দেয়া পৃথিবী ও তার মধ্যকার সবকিছুর চেয়ে উত্তম। অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, মৃত ব্যক্তির সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, ফলে তার আমল আর বাড়তে পারে না। তবে ওই ব্যক্তির কথা ভিন্ন, যে কোনো রাষ্ট্রের সীমান্তপ্রহরায় নিয়োজিত থাকাবস্থায় মারা যায়। তার আমল কিয়ামত পর্যন্তবাড়তে থাকবে আর কবরের প্রশ্নোত্তর থেকেও সে মুক্ত থাকবে। মহানবী সা. হিজরতের পর মদিনাকে নিজের প্রধান আশ্রয়স্থল হিসেবে গণ্য করেন এবং মদীনার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তাঁর জীবনের অনেক প্রতিরোধ যুদ্ধ ছিল মদিনা রাষ্ট্রের সুরক্ষার জন্যে।
১৯৭১ সালে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মাতৃভূমি রক্ষার জন্যে নয় মাস রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জিত হয়। ১৯৭১ সালে যারা আমাদের এ অমূল্য স্বাধীনতা অর্জনে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ অবদান রেখেছেনতাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। গোটা জাতি তাঁদের কাছে ঋণী। আমাদেও মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্যে যাঁরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁরা মহান। তাঁরা দেশ ও জাতির গৌরব।
ভারতবর্ষের ইংরেজ বিরোধী সব সংগ্রাম,পাকিস্তান আমলে ভাষা আন্দোলন আর সে পথ ধরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, এরপর স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ কী স্বৈরশাসন বা জঙ্গিবাদের উত্থান, সবসময় আলেম সমাজ ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন এবং সাধারণ জনগণসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন দীনি দায়িত্ববোধ থেকে। বিশেষ করে, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে এদেশের আলেমদের ইতিবাচক ভূমিকা ঐতিহাসিকভাবেই প্রমাণিত।
স্বাধীনতা সংগ্রামে যাঁরা শহীদ হয়েছিলেন, যাঁদের শ্রম ও মেধা কাজে লাগিয়ে ইংরেজ বেনিয়াদেও এদেশ থেকে বিতাড়িত করেছিলেন, যাঁরা শত্রুর হাত থেকে এদেশকে রক্ষা করেছিলেন; তাদের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরাই প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্য।
উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ সকল সশস্ত্র সংগ্রামে আলেম সমাজের ভূমিকা:
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্দ্ধে বাংলায় ব্যাপক অরাজকতা সৃষ্টি হয়। ১৭৫৭ খ্রি. পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পর কার্যত ইংরেজরা বাংলার রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হয়। ইংরেজদের শোষণযুক্ত রাজস্ব-নীতি, চিরাচরিত রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন, দেশীয় বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপসহ নানান কার্যকলাপে স্বাধীনতাকামী মুসলিম সমাজ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মাঝে মাঝে নানা জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রেƒাহ দেখা দেয়। আবার অনেক সময় দেশের স্থানীয় প্রভাবশালীরা অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ইংরেজদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে।
ওয়ারেন হেস্টিংসের এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ১৭৬৩ খ্রি. ফকিরগণ বরিশালে ইংরেজ কোম্পানীর কুঠির উপর হামলা করে। রবার্ট ক্লাইভের এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ১৭৬৩ খ্রি. ফকিরেরা ইংরেজদের ঢাকা কুঠি আক্রমণ করে এবং তারা কুঠি দখল করে। এতে ইংরেজগণ পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করে। একই বছর রাজশাহীতে কোম্পানির কারখানা আক্রমণ করে। তারা কারখানার অধিকর্তা মিঃ বেনেটকে ধরে নিয়ে যায় এবং পাটনায় নিয়ে পরে হত্যা করে। ফকির সন্ন্যাসীরা উত্তর বাংলা ছেয়ে ফেলে। ফকির সন্ন্যাসীদের কার্যকলাপে আতঙ্কিত হয়ে ওয়ারেন হেস্টিংস তাদের দমনের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং এর ফলশ্র“তিতে মজনু শাহের সঙ্গে ১৭৬৭ ও ১৭৬৯ খ্রি. কোম্পানির সৈন্যদের কয়েকটি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ইংরেজ সৈন্যধ্যক্ষ মার্টল ও ল্যাফটেনেন্ট কিথসহ বহু সৈন্য নিহত হয়। এই সাফল্যে ফকির সন্ন্যাসীদের সাহস আরও বেড়ে যায়।
ওয়ারেন হেস্টিং ১৭৬৫ খ্রি. ফকির-সন্ন্যাসীদের দমনের জন্য বিষেশ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। কিন্তু তাঁকে চুড়ান্ত ভাবে পরাজিত করা কোম্পানির পক্ষে সম্ভব হয়নি। মজনু শাহের রণকৌশল ছিল অতর্কিত আক্রমন ও নিরাপদে পলায়ন। ফকির মজনূ শাহ’র সাহসে উৎসাহিত হয়ে মুসাশাহ, চেরাগ আলীশাহ, সোবহানশাহ এবং করিমশাহ প্রমুখ আরও অনেকেই ইংরেজ বিরোধী আন্দোলন জোরদার করে তুলতে সচেষ্ট ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৭৮৭ খ্রি. রংপুরের কৃষকরা বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল। এই বিদ্রোহের কারণ ছিল কোম্পানি সরকারের রাজস্ব-নীতি। এভাবে ১৭৯১-১৭৯২ খ্রি. কৃষকরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে বাকেরগঞ্জ জেলার দক্ষিণ অঞ্চলের কৃষকগণ ইংরেজ শাসক ও জমিদার শ্রেণীর বিরুদ্ধে এক বিদ্রোহ করে। বলাকী শাহ এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন বলে এই বিদ্রোহকে ‘বলাকী শাহের বিদ্রোহ’ বলা হয়ে থাকে।
অন্যদিকে শাহ ওয়ালিউল্লাহ’র জ্যেষ্ঠপুত্র শাহ আবদুল আজীজ দেহলভী ফতওয়া প্রচার করে এই জাতিকে পথের দিশা দেন এবং তিনি তাদেরকে ইসলামের জেহাদী প্রেরণায় উদ্বুুদ্ধ হবার আহক্ষান করেন।এই নির্ভীক মোজাহিদ দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ফতোয়ার মাধ্যমে ঘোষণা করলেন যে, এখানে (ভারতে) অবাধে খৃষ্টান অফিসারদের শাসন চলছে, আর তাদের শাসন চলার অর্থই হলো, তারা দেশরক্ষা, জননিয়ন্ত্রণ বিধি, রাজস্ব, খেরাজ, ট্যাক্স ওশর, ব্যবসায়গণ্য, চোর-ডাকাত-দমনবিধি, মোকদ্দমার বিচার, অপরাধমূলক সাজা প্রভৃতিকে (যেমন সিভিল, ফৌজ, পুলিশ বিভাগ, দীওয়ানী ও ফৌজদারী, কাস্টমস ডিউটি ইত্যাদিতে) নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী। এ সকল ব্যাপারে ভারতীয়দের কোনই অধিকার নেই। অবশ্য এটা ঠিক যে, জুমার নামাজ, ঈদের নামাজ, আজান, গরু জবাই–এসব ক্ষেত্রে ইসলামের কতিপয় বিষয়ে তারা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে না। কিন্তু এগুলোতো হচ্ছে শাখা-প্রশাখা; যে সব বিষয় উল্লিখিত বিষয়সমূহ এবং স্বাধীনতার মূল (যেমন মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, নাগরিক অধিকার) তার প্রত্যেকটিই ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে এবং পদদলিত করা হয়েছে। মসজিদসমূহ বেপরোয়াভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে, জনগণের নাগরিক স্বাধীনতা খতম করে দেয়া হয়েছে। এমন কি মুসলমান হোক কি হিন্দু-পাসপোর্ট ও পারমিট ব্যতীত কাউকে শহরে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। সাধারণ প্রবাসী ও ব্যবসায়ীদেরকে শহরে আসা-যাওয়ার অনুমতি দানও দেশের স্বার্থে কিংবা জনগণের নাগরিক অধিকারের ভিত্তিতে না দিয়ে নিজেদের স্বার্থেই দেওয়া হচ্ছে। বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ যেমন সুজাউল-মুলক, বেলায়েতী বেগম প্রমুখ ইংরেজদের অনুমতি ছাড়া বাইর থেকে প্রবেশ করতে পারছেন না। দিল্লি থেকে কলকাতা পর্যন্ত তাদেরই অমলদারী চলছে। অবশ্য হায়দ্রাবাদ, লক্ষৌ ও রামপুরের শাসনকর্তাগণ ইংরেজদের অনুগত্য স্বীকার করে নেওয়ার সরাসরি নাছারাদের আইন সেখানে চালু নেই। কিন্তু এতেও গোটা দেশের উপরই দারুল হরবের-ই হুকুম বর্তায়।
শাহ আবদুল অজীজ দেহলভী অন্য একটি ফতওয়ার মাধ্যমে ভারতকে ‘দারুল হরব’ বলে ঘোষণা করেন। ফতওয়ার ভাষায় ‘দারুল হরব’ পরিভাষা ব্যবহারের মূল লক্ষ্য ছিলো রাজনৈতিক ও স্বাধীন সংগ্রামের আলো প্রজ্জ্বলিত করা। যার সারমর্ম দাঁড়ায় এই যে, -আইন রচনার যাবতীয় ক্ষমতা খৃষ্টানদের হাতে, তারা ধর্মীয় মূল্যবোধকে হরণ করেছে। কাজেই প্রতিটি দেশপ্রেমিকের কর্তব্য হলো বিদেশী ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধে এখন থেকে নানানভাবে সংগ্রাম করা এবং লক্ষ্য অর্জনের আগ পর্যন্ত এই সংগ্রাম অব্যাহত রাখা। এই ফতওয়া প্রদানের মধ্য দিয়ে ইংরেজবিরোধী আন্দোলনে একটি নতুন গতি দেখা দেয়। এই ফতোয়ায় শুধু মুসলমান নয়;বরং সারা ভারতবর্ষের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ইংরেজবিরোধী আন্দোলনে ফুঁসে ওঠে। এ আন্দোলনকে অনেকেই ‘ওহাবি আন্দোলন’ বলে অভিহিত করেন।
ঠিক এমনিভাবে ১৮০৮ সাল থেকে সাইয়েদ আহমদ শহীদ প্রথমে মুসলমানদের ভেতরের কুসংস্কার দূর করার জন্য ব্যাপক সংস্কার আন্দোলন পরিচালনা করেন। তিনি ১৮২৬ সালে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত বাহিনী নিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু করেন। ধারাবাহিক সংগ্রামে সাইয়েদ আহমদ শহীদ সারা ভারতবর্ষে বিশেষকরে উত্তর-পশ্চিম ভারতে জিহাদীকার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। অবশেষে ১৮৬৫ সালের ৬ মে বালাকোটময়দানে ইংরেজদের আক্রমণে তিনি শহীদ হন। এর মাধমে শেষ হয় দীর্ঘ জিহাদী আন্দোলনের এক অধ্যায়। সংগ্রামের বহমান ধারায় পরবর্তীতে সংঘটিত হয় সিপাহী বিপ্লব, তিতুমীরের আন্দোলন, ফরায়েজি আন্দোলন।এসবক’টি আন্দোলন সংগ্রাম ও বিপ্লবই ছিল বালাকোটের প্রেরণার ফসল।
সংগ্রাম ও আন্দোলনের উদ্যোক্তা, সিপাহসালার আর কর্ণধাররা ছিলেন জগদ্বিখ্যাত আলেম। ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্ত্রযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন অসংখ্য আলেম-ওলামা। ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হয়েছে অনেককেই। ভারতবর্ষের এসব আলেমের জিহাদী আন্দোলনের ফলে ইংরেজরা এ দেশ থেকে বিতাড়িত হতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু আজ সেই স্বাধীনতার ধারক বাহক আলেমগণের কোনো নাম নেই। কোথাও নেই তাঁদের অবদানের উল্লেখ। বরং সুকৌশলে তাঁদের অবদান ও সংগ্রামী নানা অধ্যায়কে পাথরচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে।
১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ তথা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারতবাসীর পরাজয়ের পর এদেশের আলেমগণ যুদ্ধের কৌশল পরিবর্তন করে শিক্ষা আন্দোলন শুরু করেন। বাহুবলের পরিবর্তে কলমকে শক্তিশালী করার মানসে আলেম সমাজের পথপ্রদর্শক হযরত মাওলানা কাসিম নানৌতুভি (১৮৩৩-১৮৭৭) এবং অপরাপর আরো কয়েকজন আলেম ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম দূর্গ ‘দারুল উলুম দেওবন্দ’ প্রতিষ্ঠা করেন। এক সময় ‘এই দারুল উলুম দেওবন্দ’ ই হয়ে ওঠে উপমহাদেশের মুসলমানদের বিপ্লবের সূতিকাগার। এই দারুল উলুম দেওবন্দের প্রথম ছাত্র ছিলেন মাওলানা মাহমুদ হাসান দেওবন্দী (১৮৫১-১৯২০)। যাকে ‘শায়খুল হিন্দ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা হয় ‘জমিয়তুল আনসার’ এরই মাধ্যমে ভারতবর্ষের হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে একটি সমতা সৃষ্টি হয় এবং ইংরেজদের মোকাবেলায় মুসলমানগণ যৌথভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
মাওলানা মাহমুদ হাসান দেওবন্দীর চিন্থাধারায় ইংরেজদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আঘাতের জন্য হিন্দু-মুসলিমের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে একটি অস্থায়ী সরকার গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এই উদ্দেশ্যে রাজা মহেন্দ্র প্রতাপকে রাষ্ট্রপতি, অধ্যাপক বরকত উল্লাহকে প্রধানমন্ত্রী আর মাওলানা উবায়দুল্লাহ সিন্ধিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করে একটি প্রবাসী সরকার গঠন করা হয় এবং দেশের ভেতর ও বাইরের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এটিই ছিল ঐতিহাসিক রেশমি রুমাল আন্দোলন। যা ছিল ইংরেজদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ চল্লিশবছরের সাধনার একটি ফলপ্রসূ সম্ভাবনাময় দিক। এরপর ইংরেজরা তাঁকে বন্দী করে মাল্টায় পাঠিয়ে দেয়। দীর্ঘদিন পর মাল্টার কারাবন্দী থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি ‘খেলাফত আন্দোলন’ শুরু করেন। খেলাফত আন্দোলনের মাধ্যমে মওলানা মোহাম্মদ আলী, মওলানা শওকত আলী ও মওলানা আবুল কালাম আজাদের নেতৃতে ব্রিটিশ সরকারবিরোধী যে দুর্বার আন্দোলন গড়ে ওঠে, এর মাধ্যমে ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন আরো জোরদার হয়। অবশেষে ব্রিটিশরা এ দেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়। এভাবেই স্বাধীন হলো ‘পাক ভারত উপমহাদেশ! (অসমাপপ্ত)