শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেক্স : সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করে বাংলাদেশে অবস্থানরত ব্রিটিশ নাগরিকদের চলাচলের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাজ্য। সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশান কূটনৈতিক জোনে অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের গুলিতে একজন মার্কিন নাগরিক নিহত হওয়ার পর পরই ব্রিটেনের পক্ষ থেকে নাগরিকদের প্রতি এই সতর্কতা জারি করা হলো। যুক্তরাজ্যের দ্যা ফরেন এন্ড কমনওয়েলথ অফিসের (এফসিও) এক বিবৃতিতে এ সতর্কতা জারি করা হয়। ওই সতর্ক বার্তায় পশ্চিমা নাগরিকরা জঙ্গিদের লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দেশটির সরকারি ওয়েবসাইট গভ ডট ইউকেতে দেওয়া এক নির্দেশনায় বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হুমকির কথা বলা হয়েছে। বিদেশিদের যাতায়াতের স্থানসহ আরো বিভিন্ন স্থানে নির্বিচার হামলা হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে ওই বার্তায়।
নির্দেশনায় বলা হয়-যুক্তরাজ্যের কাছে খবর এসেছে, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষভাগে বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠী সম্ভবত পশ্চিমাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্থানকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার পরিকল্পনা করছে। এর প্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্য তার নাগরিকদের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত ও অংশগ্রহণ সীমাবদ্ধ করার পাশাপাশি বিভিন্ন হোটেল ও কনফারেন্স সেন্টারে একসঙ্গে বেশি নাগরিক জমায়েতে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছে।
ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের (এফসিও) ইস্যু করা বৈদেশিক ভ্রমণ উপদেশে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে যুক্তরাজ্যের নাগরিক ও দেশটির স্থাপনায় আক্রমণের হার বেড়েছে। বিশেষত ইরাক ও সিরিয়ায় বিভিন্ন সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর উত্থানের পর যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের আরো সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এর আগে গত জানুয়ারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন এবং ইউক্রেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশে ভ্রমণে না আসার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। সে সময় সারাদেশে সংগঠিত সহিংসতা, সংঘর্ষ, হত্যা, পেট্রলবোমা নিক্ষেপের প্রেক্ষিতে এ পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছিল ব্রিটিশ হাইকমিশন। হাইকমিশন সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর প্রায় ৭৫ হাজার ব্রিটিশ নাগরিক বাংলাদেশ ভ্রমণ করে।
এর আগে শনিবার বাংলাদেশে বসবাসরত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকদের চলাচলের ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছিলো দেশটির সরকার। বাংলাদেশে পশ্চিমা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর ওপর হামলার আশঙ্কা করে ওই সতর্কতা জারি করেছিলো অস্ট্রেলিয়া সরকার। শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিষয়ক বিভাগের (ডিফ্যাট) ওয়েবসাইটে এমন আশঙ্কার কথা জানানো হয়। প্রতিটি দেশের ব্যাপারে তথ্য মূল্যায়ন করে ওই ওয়েবসাইটে তথ্য প্রকাশ করে অস্ট্রেলিয়া। বিশেষ করে নিজ দেশের পর্যটকসহ অন্যান্য কর্মীদের নির্দিষ্ট ওই দেশে যাওয়া, না যাওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া হয় ওই সাইটের মাধ্যমে।
শুক্রবার প্রকাশিত তথ্যের বাংলাদেশ অধ্যায়ে জানানো হয়, ‘নির্ভরযোগ্য তথ্য রয়েছে যে জঙ্গিরা সম্ভবত বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে হামলার পরিকল্পনা করছে।’ এতে আরো বলা হয়, ‘আমরা অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের বাংলাদেশে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিচ্ছি।’
পার্বত্য চট্টগ্রামের নাম উল্লেখ করে ওই এলাকায় না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান সরকার। ওই এলাকায় সহিংসতা ও অপহরণকে অন্যতম ঝুঁকির কারণ হিসাবে বলা হয়েছে। নির্দেশনায় আরো বলা হয়, ‘বাংলাদেশে এর আগে সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এখনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আটক করছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আরো হামলার ঘটনা ঘটতে পারে; পশ্চিমা স্বার্থের বিরুদ্ধেও হামলা হতে পারে।’
চলতি বছর জানুয়ারি থেকেই রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়ে যায় বলে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিষয়ক বিভাগ জানিয়েছে। বলা হয়, এ কারণে আগুন-হামলাসহ বিভিন্ন সহিংসতা ঘটেছে যারা কারণে মানুষের প্রাণ গিয়েছে। ওই নির্দেশনার একটি জায়গায় বলা হয়েছে, ‘অপরাধমূলক সহিংসতা, সশস্ত্র ডাকাতি বাংলাদেশে বেশ সাধারণ ব্যাপার। এমনকি ঢাকার বনানি, বারিধারা ও গুলশানেও এসব ঘটে।’ শুক্রবার ডিফ্যাটের এ তথ্য প্রকাশের পরই বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দলের সফর পেছানোর ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ড।