মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪১ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : মানুষের ভাব প্রকাশের মাধ্যম কথা। অন্যের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম কথা। আবার অন্যের সাথে সম্পর্ক খারাপ হবার সূত্রপাতও কিন্তু এই কথা থেকেই। ভাবনা চিন্তা না করেই যারা কথা বলেন, তাঁরা অহরহ নানান রকম সামাজিক যন্ত্রণায় পড়ে থাকেন। আপনি বললেন হয়তো এক অর্থে, কিন্তু সামনের মানুষটি একেবারেই ভিন্ন একটা অর্থ ধরে নিল। ফলে সম্পর্ক তো খারাপ হলোই, শত্রুতার শুরু হতেও দেরি হয় না। সামাজিক জীবনে কথোপকথন একটি আর্ট। সুন্দর ভাবে কথা বলতে জানলেই সকলের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখা যায়। চলুন, আজ জেনে নিই কোন কথাগুলো অন্যের সামনে বলবেন না এবং তার বদলে আসলে কী বলতে পারেন।
১) তোমাকে আগের চাইতে সুন্দর দেখাচ্ছে : আপনার হয়তো মনে হবে যে আপনি প্রশংসা করছেন। কিন্তু যাকে বলবেন, তিনি কিন্তু খুবই অপমানিত বোধ করতে পারেন। কারণ এই কথার অর্থ তাঁকে আগে সুন্দর দেখাতো না বা আপনি আগে তাঁকে কুৎসিত মনে করতেন। বরং প্রশংসা করতে চাইলে বলুন, তোমাকে আজ একটু বেশিই সুন্দর দেখাচ্ছে।
২) ওজন সংক্রান্ত যে কোন কিছু : একজন মানুষের ওজন তাঁর পরিচয় নয়। মানুষটি অতিরিক্ত মোটা হোক বা অতিরিক্ত রোগা, ওজন নিয়ে সমস্যা যার আছে কেবল তিনিই জানেন এর কষ্ট। অহেতুক ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বা নিজের উপদেশ দিতে গিয়ে আরেকজনের মনে কষ্ট দিয়ে ফেলবেন না। ওজন সংক্রান্ত আলাপ বন্ধ করুন। বরং কেউ এই ব্যাপারে দুঃখপ্রকাশ করলে বলুন-তুমি যেমন আছো, তেমনই অনেক সুন্দর আছো। মন খারাপের কিচ্ছু নেই।
৩) দোষারোপ করা : কথা বলতে গিয়ে আমরা প্রায়ই বলি- “তুমি সবসময় এটা করো” বা “তুমি কখনোই এটা করো না/বলো না” ইত্যাদি। এই ধরণের কথা আসলে দোষারোপের পর্যায়ে পড়ে। সামাজিক জীবনে কাউকে সরাসরি দোষারোপ করে কথা বলতে গেলে উল্টো বিপদে আপনিই পড়বেন। তাই এমন কথা এড়িয়ে চলুন।
৪) আমি আগেই বলেছিলাম : কাউকে আপনি একটা উপদেশ দিলেন, সে সেটা পালন না করে একটি বিপদে পড়লো। সেই বিপদের মাঝে গিয়েই যদি আপনি বলেন যে “আমি আগেই বলেছিলাম!” বা এমন কোন কথা, তাহলে মানুষটার কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেবার মতই ব্যাপার হয়। বিপদের মুহূর্তে এমন কথা না বলে পাশে থাকুন, নিজেকে অহেতুক বড় সাজাবার চেষ্টা না কড়াই ভালো হবে।
৫) ভালো হয়েছে এটা হয়েছে বা যা হয় ভালোর জন্য হয় : অন্যকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে এমন কথা আমরা প্রায়ই বলি। ধরুন, কারো আপনজন মারা গিয়েছে বা কারো বিয়ে/প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছে। এমন স্থানে ভালোটা কী বলুন? তাই এমন মন্তব্য না করে বলুন-” যা হয়েছে সেটা তো বদল করা যাবে না, এটা মেনে নিয়েই জীবন চালাতে হবে।”
৬) তোমাকে বয়সের তুলনায় সুন্দর লাগছে বা বয়স জনিত যে কোন কিছু : এই কথাটি সরাসরি অপমান সূচক। সরাসরি কাউকে বৃদ্ধ বলে কটাক্ষ করা। ওজনের মতইবয়স নিয়ে আলোচনা করাও বেশিভাগ মানুষ অপছন্দ করেন।
৭) নিজের সাথে তুলনা : আমরা প্রায়ই কথোপকথনের সময় নিজের ভালোর সাথে অন্যের খারাপটা তুলনা করি। যেমন বলি- “আমি এমন ভুল কখনো করিনি” বা “আমি তোমার স্থানে হলে এমন ভুলেও করতাম না” ইত্যাদি। এই কাজটি মোটেও করবেন না। এটা করার মাধ্যমে অন্যকে ইচ্ছাকৃত ভাবে ছোট করা হয়।
৮) অন্যের গোপন কথা ফাঁস করে দেয়া বা গীবত করা : এই কথা যখন আপনি বলবেন, সামনের মানুষটি কিন্ত বেশ আগ্রহ করেই শুনবে। আপনাকে উল্টো উৎসাহ দেবে আরও কিছু বলার। কিন্তু মনে মনে সে নিজেই ধরে নেবে যে আপনি একজন মন্দ মানুষ, যার কাছ থেকে সাবধান থাকতে হয়।
নিজের দৈনন্দিন জীবনে, বিশেষ করে কর্মক্ষেত্র বা সোশ্যাল মিডিয়ার কথোপকথনে এই টিপস গুলো মেনে চলতে পারেন। আর কিছদিনের মাঝেই লক্ষ্য করুন, ভুল বোঝাবুঝির মাত্রা কী দারুণ ভাবে কমে গিয়েছে।