মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৮ পূর্বাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার:
বর্তমান সরকারের রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পিছিয়ে রয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে এখন পর্যন্ত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা ও ব্যবহার শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে শতভাগ বাস্তবায়ন হয়নি। বিশেষ করে সুনামগঞ্জ জেলার মাধ্যমিক স্তরের অবস্থা করুণ। গত ১৯ সেপ্টেম্বর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ থেকে এতথ্য জানা গেছে। যার স্মারক নং-৩৭.০২.৯০০০.০০০.২৬.০০১.১৭-৪৪৮।
কারণ দর্শানোর এই নোটিশটি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশ-এর মহাপরিচালক, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব), একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব), সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক উপ-পরিচালক, জেলার সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের বরাবরে সদয় অবগতি ও কার্যার্থে অনুলিপি প্রেরণ করা হয়েছে।
জেলার ৯১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের বরাবরে পাঠানো এই কারণ দর্শানো নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ‘সরকারের রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্বারোপ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১২ সালের ২০ মে শিক্ষা প্রতষ্ঠিানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম উদ্বোধন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় আপনার প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম সামগ্রী প্রদান করা হয়। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য আপানর প্রতিষ্ঠানে ন্যুনতম ৬/৭ জন শিক্ষককে ১৪ দিনব্যাপি ‘সিডিপি ফর আইসিটি ডিজিটাল কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট’, ‘৫ দিনব্যাপি আইসিটি ডিজিটাল কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট ফলোআপ’ এবং ৩ দিনব্যাপি ‘কম্পিউটার হার্ডওয়ার এন্ড ট্রাবলশুটিং’ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস অ্যাপসের মাধ্যমে ড্যাশবোর্ডে এন্ট্রি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়’।
কারণ দর্শানো নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘বিগত ২.৯.২০১৯ ইং তারিখ মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ড্যাশবোর্ড পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ১.১.২০১৯ তারিখ হতে ২.৯.২০১৯ তারিখ পর্যন্ত বিগত ৯ মাসে আপনার প্রতিষ্ঠানে একটিও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম পরিচালনা করা হয়নি। সে কারণে সুনামগঞ্জ জেলার মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের অগ্রগতির শতকরা হার ৬৪ জেলার মধ্যে সর্বনি¤œ পর্যায়ে রয়েছে। আপনার এরূপ কার্যক্রম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অসহযোগিতা হিসেবে পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে দায়িত্ব অবহেলার শামিল। এমতাবস্থায় উল্লেখিত কারণে কেন আপনার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার যথাযথ জবাব আগামি ৫ কর্ম দিবসের মধ্যে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে নি¤œ স্বাক্ষরকারীর দপ্তরে প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো’।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৯ মাসে নোটিশকৃত ৯১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বোচ্চ এমএমসির সংখ্যা ধর্মপাশা উপজেলার জনতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮টি রয়েছে। এছাড়া দোয়ারা বাজার উপজেলার নরসিংহপুর আদর্শ দাখিল মাদরাসা ৩টি, জগন্নাথপুর উপজেলার স্বরূপচন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ২টি এমএমসি করেছে। আর বাকিগুলো মাত্র ১টি করে এমএমসি করলেও বিগত ৯ মাসে এন্ট্রিকৃত ক্লাস সংখ্যা ‘জিরো’।
সূত্র মতে, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দক্ষিণ সুনামগঞ্জের ৯টি, শাল্লার ৪টি, বিশ্বম্ভরপুরের ৪টি, ধর্মপাশার ৪টি, ছাতকের ২০টি, দিরাইয়ের ১০টি, জামালগঞ্জের ৩টি, জগন্নাথপুরের ২০টি, দোয়ারা বাজারের ৭টি ও তাহিরপুরের ৫টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদরাসা সমূহের প্রধানকে উক্ত কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।
শ্যামারচর দাখিল মাদরাসার সুপার কে এম সুলতান মাহমুদ নোটিশ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, যথাসময়ে আমি নোটিশের জবাব দিয়েছি। সরকার প্রদত্ব ল্যাপটপটি নষ্ট থাকায় আমরা এতোদিন মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নিতে পারিনি। এখন থেকে আমাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত মাল্টিমিডিয়া ক্লাস চলছে।
মাতারগাঁও মোহাম্মদীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ জাকির হোসেন বলেন, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস এন্ট্রি করার যে সার্ভার ছিল, সেটিতে আগে আপডেট দেয়া যেতো না। আমি নোটিশের জবাব দিয়েছি এবং এখন থেকে নিয়মিত মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নিয়ে এন্ট্রি দেয়া হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, এখন পর্যন্ত সবকটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জবাব আসেনি। পরীক্ষার ঝামেলাসহ বিভিন্ন কারণে জবাব আসতে দেরি হলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই জবাব দিয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে যে, এই নোটিশের ফলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেয়া আগের চেয়ে বেড়েছে। আগামি জানুয়ারি থেকে শতভাগ মাল্টিমিডিয়ার ক্লাস শুরু হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।