রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৪ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১

কারাগারে তুষারকে পাঁচ বছর ধরে একান্তে সঙ্গ দিয়ে আসছিলেন সুইটি

amarsurma.com

আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:

গত পাঁচ বছর ধরে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি হলমার্ক গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তুষার আহমদকে দফায় দফায় সাক্ষাৎ করে সঙ্গ দিয়ে আসছিলেন ওই নারী। তার পুরো নাম আসমা শেখ সুইটি। হঠাৎ করে তাদের একান্ত ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ্যে আসায় অনেকটা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন ওই নারী। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীর সবুজবাগের নিজ বাসায় মা এবং ছেলেকে নিয়ে বসবাস করেন সুইটি। তার গ্রামের বাড়ি ফেনীর ছাগলনাইয়ায়। সুইটির বাবা গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মাঝে মধ্যে ঢাকায় এসে বেড়িয়ে যান। সূত্র জানায়, মুঠোফোনে তুষারের সঙ্গে তার পরিচয়।

পরবর্তীতে তারা গোপনে বিয়ে করেন। কারা বন্দি তুষারের প্রথম পক্ষের স্ত্রী এবং দুই সন্তান রয়েছে। ২০১২ সালে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর তুষার আহমেদ কারাগারে থাকায় তার প্রথম স্ত্রী নাজনিন সুলতানা মিষ্টি দুই সন্তানকে নিয়ে মালয়েশিয়ায় চলে যান। প্রথম স্ত্রী এবং তার পরিবারের সদস্যরা তুষারের সঙ্গে সুইটির বিয়ের বিষয়টি জানেন না। সূত্র জানায়, কারাগারের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তার সহযোগিতা নিয়ে কারাগারেই তারা একান্তে বহুবার মিলিত হওয়ার সুযোগ পেতেন। বিনিময়ে আর্থিক সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি মিলতো বড় অঙ্কের উপঢৌকন।

সূত্র জানায়, এর আগে সুইটি একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে চাকরি ছেড়ে টাকা জমিয়ে অনলাইন ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। হাতিরঝিল সংলগ্ন পুলিশ প্লাজা কনকর্ড শপিং সেন্টারের ৪র্থ তলায় রয়েছে তার একটি ফ্যাশন হাউজ। বিউটি বাজ নামের এই ফ্যাশন হাউসটি ২০১৯ সালে চালু করেন তিনি। বর্তমানে সেখানে তিনজন কর্মী কর্মরত আছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কারা কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটির কাছে সুইটিকে নিজের স্ত্রী বলে দাবি করেছেন তুষার। তুষারের দাবি, বিয়ের আগে সুইটির সঙ্গে কারাগার থেকে মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলতেন দু’জনে। ফোনেই সুইটির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তুষারের। পরবর্তীতে মুঠোফোনে তাদের বিয়ে হয়। তাদের বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হতে একাধিক কারাবন্দির সাক্ষাৎকার নিয়েছে তদন্ত কমিটি। সূত্র জানায়, তুষারের সঙ্গে আগে নিয়মিত কাশিমপুর কারাগারে সাক্ষাতে যেতেন সুইটি। করোনার কারণে সম্প্রতি তুলনামূলকভাবে কম যেতেন।

সূত্র জানায়, এই ঘটনার পর সুইটি মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েছেন। কারো সঙ্গে ঠিকমতো কথা বলেন না। ভিডিও ফুটেজ ও টেলিভিশনে যখন দেখায় তখন সে কাছের মানুষদের সঙ্গে ফোনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সুইটির ঘনিষ্ঠজন জানায়, ওইদিন তিনি ফোন দিয়ে বলেন, আমাকে টিভিতে দেখাচ্ছে। গত পাঁচ বছর ধরে স্বামী তুষারের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করছি। কিন্তু হঠাৎ করে কেন ওই দিনের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ পেলো। গত পাঁচ বছরের ভিডিও ফুটেজ এবং নথি কেন প্রকাশ করা হচ্ছে না। নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে।

এদিকে, গাজীপুরের কাশিমপুরে গত ৬ই জানুয়ারি কারাগারে প্রবেশপথে কর্মকর্তাদের কার্যালয় সংলগ্ন এলাকায় কালো রঙের জামা পরে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় হলমার্কের মহাব্যবস্থাপক ঋণ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত (জিএম) তুষারকে। কিছু সময় পর বাইরে থেকে বেগুনি রঙের সালোয়ার কামিজ পরে সেখানে প্রবেশ করেন সুইটি। দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে সে কারাগার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কারা কর্মকর্তাদের সবাই কারাগারেই অবস্থান করছিলেন।

কারা সূত্র জানায়, মহিলাসহ তিনজন কারাগারের অফিস কক্ষে প্রবেশ করেন ৬ই জানুয়ারি ১টা ৫৬ মিনিটে। কারা সেল থেকে হলমার্ক কেলেঙ্কারির অন্যতম হোতা তুষার কারা অফিস কক্ষে আসেন ২টা ৪ মিনিটে। এরপর জেল সুপার রত্না রায় অফিস কক্ষ থেকে বের হয়ে যান ২টা ১৫ মিনিটে। কারা অফিসের একটি কক্ষে টানা ৪৫ মিনিট অবস্থান করেন তুষার ও সুইটি। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার-১ এর তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

কাশিমপুর কারাগারের সুপার ও জেলার প্রত্যাহার: স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর থেকে জানান, সাজাপ্রাপ্ত আসামির সঙ্গে কারাগারে নারীর সময় কাটানোর ঘটনায় সিনিয়র জেল সুপার ও জেলারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর আগে ডেপুটি জেলারসহ তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল।

কারাগারে নারীর সঙ্গে হলমার্ক কেলেঙ্কারির সাজাপ্রাপ্ত বন্দি তুষারের সঙ্গে সময় কাটানোর ঘটনায় কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের পার্ট-১-এর সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায় ও জেলার নুর মোহাম্মদকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় এই নিয়ে মোট ৫ জনকে প্রত্যাহার করা হলো।

গতকাল দুপুরে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, প্রত্যাহার হওয়া সুপার ও জেলার এরইমধ্যে তাদের দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন। এ ছাড়াও এই বিষয়ে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি তদন্ত শেষে তাদের সুপারিশমালা দ্রুত সময়ের মধ্যে জমা দিবেন।

সূত্র: দৈনিক মানবজমিন

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com