প্রথম ইনিংসে বড় সংগ্রহ গড়েছে
ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশের টপ অর্ডারদের পারফরম্যান্স ছিল ছন্নছাড়া। মুশফিক, লিটন ও মিরাজ তিনজনই ফিফটি তুলে নিলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। আউট হয়েছেন বাজে শটে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেমেছে ২৯৬ রানে।
একটা সময় জেঁকে বসেছিল ফলো-অনে পড়ার শঙ্কা। লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজের কল্যাণে সেটা থেকে উদ্ধার হয়
বাংলাদেশ। দারুণ ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন তারা। দুজনের জুটিতে এসেছে ১২৬ রান। দুজনেই বড় স্কোরের দিকে এগুচ্ছিলেন। এমন সময় রাহকিমের ঘূর্ণিতে ব্লাকউডের তালুবন্দী হয়ে সাজঘরে ফেরেন লিটন। ১৩৩ বল খেলে নিজের ঝুলিতে পুরেছনে ৭১ রান। লিটনের বিদায়ের রেশ না কাটতেই একই ওভারে রাহকিমের শিকার হন নাঈম।
প্রথম ইনিংসে ৪০৯ রানের বড় সংগ্রহ গড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাব দিতে নেমে ১১ রানেই বাংলাদেশ হারিয়েছিল দুই উইকেট, ৭১ রানে নেই চারটি। বাংলাদেশ ছিল বিপদে। ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় দিনশেষে চার উইকেট হারিয়ে ১০৫ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করেছে বাংলাদেশ।
যেখানে টিকে থাকাই মূল লক্ষ্য, সেখানে মুশফিক দেখাতে গেলেন বিশেষ কিছু। যেটি সচরাচর সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দেখা যায়, সেই রিভার্স সুইপ মুশফিক করলেন এমন দেয়ালে পিঠ থাকা অবস্থায়। কর্নওয়ালের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় হয়ে কাইল মেয়ার্সের তালুবন্দী হল তাতে বিপদ আরও বাড়লো বাংলাদেশের।
এর আগে ২২তম টেস্ট ফিফটির দেখা পেলেন মুশফিকুর রহিম। দৃঢ় ব্যাটিংয়ে দলের রানের চাকা সচল রাখছেন এ ব্যাটসম্যান। ৮৯ বলে ফিফটি পেয়েছেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ফিফটির ইনিংসে ছিল ৬ বাউন্ডারি।
মুশফিকের সঙ্গে ৭১ রানের জুটি গড়ে সাজঘরে ফিরলেন মোহাম্মদ মিঠুন। কর্নওয়ালের বলে তালুবন্দী করেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক। মিথুনের ব্যাট থেকে আসে ১৫ রান। তবে এ ইনিংসটি খেলেছেন ৮৬ বলে।
চট্টগ্রাম টেস্টে হারের পর মিরপুরে তিন পরিবর্তন নিয়ে নামে বাংলাদেশ দল। কুঁচকির ইনজুরিতে ছিটকে যাওয়া সাকিব আল হাসানের জায়গায় আসেন সৌম্য সরকার। বাদ পড়েছেন সাদমান ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান। তাদের বদলে আসেন মোহাম্মদ মিঠুন ও আবু জায়েদ রাহি। একাদশে এক পেসার আর তিন স্পিনার অর্থাৎ ঘুরেফিরে সেই স্পিন নির্ভর দল নিয়েই লড়াইয়ে নামে স্বাগতিকরা।
শুরুতে ফিল্ডিংয়ে নামা বাংলাদেশের জন্য দিনের প্রথম সেশনটা ছিল হতাশার। দুই ক্যারিবীয় ওপেনার ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট এবং জন ক্যাম্পবেল মিলে তুলে ফেলেন ৬৬ রান। উইকেটে জেঁকে বসা জুটি ভেঙে ব্রেক থ্রু এনে দেন তাইজুল ইসলাম। এলবির ফাঁদে ফেলে ক্যাম্পবেলকে ফেরান তাইজুল। ৩৬ রান করে ফেরেন ক্যাম্পবেল। এরপর ওই এক উইকেট হারিয়েই ৮৪ রান নিয়ে লাঞ্চে যায় উইন্ডিজ।
দ্বিতীয় সেশনটা বাংলাদেশের বোলারদের জন্য হয়ে দাঁড়ায় টার্নিং পয়েন্ট। কারণ এই সেশনের প্রথম ২১ ওভারে ৩৪ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। লাঞ্চের পর শাইনে মোসলের উইকেট তুলে নেন আবু জায়েদ রাহি। স্ট্যাম্পের অনেকটা বাইরের বলে শট খেলতে চেয়েছিলেন মোসলে (৭), কিন্তু বল তার ব্যাটে লেগে স্ট্যাম্প ভেঙে দেয়। ওদিকে অন্যপ্রান্ত আগলে ছিলেন ব্র্যাথওয়েট। ক্যারিবীয় অধিনায়ক ছুটছিলেন ফিফটির পথে। কিন্তু ৪৭ রান করেই সৌম্য সরকারের বলে বিদায় নেন তিনি।
তবে বাংলাদেশ দলের জন্য সবচেয়ে বড় স্বস্তি হয়ে আসে কাইল মেয়ার্সের উইকেট। চট্টগ্রাম টেস্টের ডাবল সেঞ্চুরিয়ানকে এদিন অল্পতেই বিদায় করেন আবু জায়েদ। শেষ বিকেলে এই দুই ব্যাটসম্যানকে তেমন কঠিন কোনো পরীক্ষার মুখেই ফেলতে পারেননি। সবমিলিয়ে ক্যারিবীয়দের পাশাপাশি নিজেদেরও অস্বস্তিতে রেখে প্রথম দিন পার করলো মুমিনুলবাহিনী।
শুক্রবার দ্বিতীয়দিনের শুরুতে ব্যাট করতে নামেন আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান বোনার এবং ডা সিলভা। ব্যাট হাতে দুর্দান্ত খেলতে থাকা এই দুই ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানের হাত ধরে বড় সংগ্রহের দিকেই এগোচ্ছিল উইন্ডিজ। দুজনে গড়েন ৮৮ রানের জুটি।
দ্বিতীয় দিনের ১২তম ওভারে মিরাজের করা দ্বিতীয় বলে মোহাম্মদ মিথুনের হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন বোনার। তার ৯০ রানের ইনিংসটি ৭টি চারে সাজানো।
এরপর সপ্তম উইকেট জুটিতে জোসেফকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস সেরা জুটি গড়েন সিলভা। যথাক্রমে ক্যারিয়ারে নিজেদের দ্বিতীয় টেস্ট হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন জশুয়া ডি সিলভা এবং জোসেফ। দলীয় ৩৮৪ রানে তাদের ১১৮ রানের জুটিটি থামে। ইনিংসের ১৩৭তম ওভারের তৃতীয় বলে ১৮৭ বলে ৯২ রান করা জশুয়াকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান তাইজুল ইসলাম।
পরের ওভারে জোসেফকে প্যাভিলিয়নে পাঠান টাইগার পেসার আবু জায়েদ রাহি। ১০৮ বলে ৮২ রান করা তার ওয়ানডে ধাঁচের ইনিংসটি ৮টি চার এবং ৫টি ছক্কায় সাজানো ছিল।
জোমেল ওয়ারিকানও ক্রিজে বেশিক্ষণ থাকতে দেননি রাহি। ২ বলে ২ রান করে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ওয়ারিকান। শেষ উইকেটে কর্নওয়ালকে নিয়ে ১১ রানে জুটি গড়েন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। তাইজুলের বলে মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ তুলে দেয়ার আগে ৮ রান করতে সক্ষম হন গ্যাব্রিয়েল। আর ২ রানে অপরাজিত থাকেন কর্নওয়াল। ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে তাদের সংগ্রহ ৪০৯ রান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেষ চার ব্যাটসম্যানকে ২৫ রানের ব্যবধানে আউট করে চা বিরতিতে যাওয়া বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নেমে মুখে চায়ের স্বাদ মোছার আগেই হারায় ওপেনার সৌম্য সরকার ও নাজমুল হোসেন শান্তর উইকেট। ২ উইকেট হারানোর পর সেখান থেকে দলকে টেনে তুলেছেন অধিনায়ক মুমিনুল হক ও তামিম ইকবাল। দুজনের জুটিতে উঠেছে ৫৮ রান। কিন্তু দলীয় ৬৯ রানে রাহকিমের ঘূর্ণিতে পরাস্ত হয়ে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক মুমিনুল। ৩৯ বলে অধিনায়কের রান ২১। এরপর তামিমকে সঙ্গ দিতে আসে মুশফিক। স্কোরকার্ডে ২ রান যোগ না হতেই উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হন তামিম ইকবাল। ৫২ বলে নিজের ঝুলিতে পুরেছেন ৪৪ রান।
সৌম্য, শান্ত, মুমিনুল ও তামিম ইকবালের উইকেট হারিয়ে ইনিংস পরাজয়ের শঙ্কায় টাইগাররা। দলকে খেলায় ফেরাতে চেষ্টা করেন মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিঠুন। পঞ্চম উইকেটে মুশফিক-মিঠুনের অবিচ্ছিন্ন ৩৪ রানের জুটিতে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করে বাংলাদেশ। এখনও ৩০৪ রানে পিছিয়ে টাইগাররা। ২৭ ও ৬ রানে ব্যাটিংয়ে আছেন মুশফিক-মিঠুন।