শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৯ পূর্বাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার:
পর্নোগ্রাফী মামলায় বিবিয়ানা মডেল কলেজের প্রিন্সিপাল নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাশ তালুকদারকে ২০ দিন পর অবশেষে গভর্ণিং বডির সিদ্ধান্তে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল রোববার সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বিবিয়ানা মডেল কলেজে পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাহমুদুর রহমান মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভায় সিনিয়র শিক্ষক মোছাঃ ফয়জুন নাহারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য পবিত্র মোহন দাস, অভিভাবক সদস্য শাহনূর আলম শাবান, সুতলাল দাস, মোঃ আবুল কালাম, বিদ্যুৎসাহী সদস্য রাজিন্দ্র চন্দ্র বৈষ্ণব, শেখ সালাহ উদ্দিন, শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য মোহাম্মদ রুনেল আহমদ ও আশিষ কুমার দাস।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ি বর্তমান অধ্যক্ষকে পর্নোগ্রাফী মামলায় জেলে থাকার কারণে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে মোছাঃ ফয়জুন নাহারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়। এছাড়া বিগত মিটিংয়ের রেজুলেশন নিয়েও বিস্তর আলোচনা করা হয়।
এদিকে পর্নোগ্রাফী মামলায় বিবিয়ানা মডেল কলেজের প্রিন্সিপাল নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাশ তালুকদারকে ২০ দিন ধরে পদে রাখার কারণে এলাকার সাধারণ মানুষ, অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ বরাজ করছিল। উপজেলা নির্বাহী অফিসার কমিটির সভাপতি থাকার পরও কেন এতদিন কোন উদ্যোগ না নেয়ার কারণে সরকারি নীতিমালা ভঙ্গেরও অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে। গত ৩০ জানুয়ারি মোঃ জুয়েল মিয়া ও মোঃ ফজলে রাব্বি স্বাক্ষরিত ‘জেল হাজতে থাকা অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাশ তালুকদারকে বরখাস্ত করার আবেদন’ করেন বিবিয়ানা মডেল কলেজের সভাপতি ও দিরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবরে। এ অভিযোগের অনুলিপি দেয়া হয় সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা), জেলা শিক্ষা অফিসার, গভর্নিং বডির সদস্যবৃন্দ ও দিরাই প্রেসক্লাবের সকল সাংবাদিকবৃন্দকে। এছাড়া ৩১ জানুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি অভিযোগপত্র দেয়া হয়। এ অভিযোগের অনুলিপি প্রদান করা হয় সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা), জেলা শিক্ষা অফিসার, বিবিয়ানা মডেল কলেজের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সরকারী নীতিমালা অনুসারে ২৪ জানুয়ারি থেকে জেল হাজতে যাওয়ার সাথে সাথে অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র চন্দ্র তালুকদারকে বরখাস্ত করার কথা থাকলেও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ক্ষমতার অপব্যবহার করে নৈতিক স্খলনজনিত অভিযোগে প্রমাণিত একজন অপরাধীর পক্ষ অবলম্বন করে পুরো কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীকে জিম্মি করে রেখেছেন।
জানা যায়, গত ৩০ জানুয়ারি গভর্নিং বডির সভাপতি এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিরাই বরাবর অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাশ তালুকদারকে বরখাস্ত করার আবেদন করা হলেও কোন ধরনের ব্যবস্থা না নিয়ে তালবাহানা করছেন। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ) জনবল ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ এর ১৯ ধারা মোতাবেক “কোন ফৌজদারী/নেতিক স্খলন/দুর্নীতির মামলায় কোন শিক্ষক-কর্মচারী অভিযুক্ত হয়ে আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট শিক্ষক/কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করতে পারবে” মর্মে উল্লেখ আছে। অথচ কোন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ না করে একজন অপরাধীকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুর রহমান মামুন বিভিন্নভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আসছেন। একজন জেলহাজতে অন্তরীন লোককে সুবিধা প্রদানের জন্য কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন বিলের কোন ব্যবস্থা করছেন না।
ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা তদন্তে অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র চন্দ্র তালুকদারের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন এবং বিধি বহির্ভূতভাবে কলেজের ৭২টি গাছ কাটার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। এ বিষয়ে শিক্ষা সচিব বরাবরে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ পত্রও প্রেরণ করেন।
ইদানিং অডিট কমিটির রিপোর্টেও অধ্যক্ষের আত্মসাৎ করা মোটা অংকের টাকার বিষয়টি ধরা পড়ার পর কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুর রহমান মামুন বরারব অভিযোগ করলেও তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি। তিনি অধ্যক্ষের এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির দায় তিনি এড়াতে পারেন না বলে এলাকার লোকজন মনে করেন।
তারা মনে করেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুর রহমান অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র চন্দ্র তালুকদারকে জেলে থাকা অবস্থায়ও পদে রাখার জন্য মোটা অঙ্কের সুবিধা নিয়েছেন। তারা উক্ত অধ্যক্ষকে অনিতিবিলম্বে বরখাস্ত করে কলেজের শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান। তা না হলে সভাপতি হিসেবে পদ আঁকড়ে থাকার নৈতিক অধিকার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেই এবং দায়িত্ব অবহেলার শামীল বলেই সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
পর্নোগ্রাফি মামলায় জেল হাজতে থাকা প্রভাবশালী অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র চন্দ্র তালুকদারের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন বিবিয়ানা মডেল কলেজের পরিচালনা পর্ষদ। বার বার অনৈতিক কর্মকাণ্ড, কলেজের আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি, বিধি বহির্ভূতভাবে গাছ কাটার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রামাণিত হলেও গভর্ণিংবডি অদৃশ্য কারণে তার বিরুদ্ধে কোন ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, কারাগারের চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি থাকলেও থেমে নেই পর্নোগ্রাফি মামলায় জেলহাজতে থাকা সুনামগঞ্জ জেলাধীন দিরাই উপজেলার বিবিয়ানা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র চন্দ্র তালুকদারের কলেজ পরিচালনা। তিনি এখন পর্যন্ত দায়িত্বে বহাল থাকায় এলাকাবাসি ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা চরম বিক্ষুদ্ধ। চরিত্রহীন অধ্যাক্ষ কিভাবে দায়িত্ব পালনে বহাল এ নিয়ে সুশীল সমাজও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তাছাড়া মামলা-হামলার ভয়ে পর্নোগ্রাফি মামলায় জেল হাজতে থাকার পর কলেজ পরিচালনা কমিটিও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেনা। কলেজকে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য ভারপ্রাপ্ত কাউকে দায়িত্বও দিতে পারেনি গভর্ণিংবডি।
উল্লেখ্য, দিরাই উপজেলার ৯নং কুলঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক মহিলা সদস্য কর্তৃক করা পর্নোগ্রাফি মামলায় গত ২৪ জানুয়ারি আদালতে হাজিরা দিতে গেলে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বিবিয়ানা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র চন্দ্র তালুকদার ও তার ভাই নবীগঞ্জ উপজেলার ১নং বড়ভাকৈর পশ্চিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রঙ্গলাল দাশ সুনামগঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাদের জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
এ ব্যাপারে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, জানতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুর রহমান মামুনের কাছে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি তা রিসিভ করেন নি।