শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৩ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম:
ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একই আইডি নাম্বারে জন্ম ও মৃত্যুসনদ প্রদান করে জালিয়াতির সহযোগিতা প্রমাণ পাওয়া গেছে ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ নজরুল ইসলাম এবং ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার সুকেশ বর্মণের বিরুদ্ধে। একই আইডি দিয়ে জন্ম-মৃত্যু সনদ প্রদান করা অসম্ভব বলে তারাও স্বীকার করেছেন। এমন অসম্ভব ঘটনাটি ঘটেছে সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার করিমপুর ইউনিয়ন পরিষদে।
জানা যায়, জেলার দিরাই উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের চান্দপুর গ্রামের বাসিন্দা মহাদেব দাসের পুত্র সুবেন্দু কুমার দাস একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেটভূক্ত মুক্তিযোদ্ধা, গেজেট নং-১৮৬১। মুক্তিযোদ্ধের পর তিনি ঢাকায় চলে গেলে দীর্ঘ ৪০ বছর এলাকায় না আসায় পরিবারের লোকজন তাকে মৃত ভেবে বড় ভাই জহরলাল দাস করিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মৃত্যুসনদ গ্রহণ করেন। একই সাথে জহরলাল দাস তার ভাইয়ের নামে জন্ম নিবন্ধনও করেন। এতে বড় ধরণের জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করা হয়।
জন্ম ও মৃত্যু সনদে দেখা যায়, ২০২১ সালে ৩০শে মে সুবেন্দু কুমার দাসের নামে ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম নিবন্ধন ও পরদিন ৩১শে মে মৃত্যু নিবন্ধনেরও আবেদন করা হয়। উভয় আবেদনের সনদ প্রদান করা হয় ৩১শে মে। এতে দেখা যায় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নাম্বার একই। এতে স্বাক্ষর করেছেন পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ নজরুল ইসলাম এবং ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার সুকেশ বর্মণ। একই নাম্বারে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কিভাবে সম্ভব-জানতে চাইলে তারা বিস্মিত হন। তারা উভয়েই জানান, এটি কোন ক্রমেই সম্ভব নয়। এতে কোন না কোন জালিয়াতি হয়েছে বলেও তারা স্বীকার করেন। জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে উত্তরাধিকার সনদপত্র (স্মারক নং-৮৩/২০২১) দেয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা তারা বলেন, সুবেন্দু কুমার দাসের ভাই জহরলাল দাসের দেয়া মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে তাকে মৃত দেখানো হয়েছে। তার আলোকেই আমরা উত্তরাধিকারী সনদপত্র প্রদান করেছি।
এদিকে সুবেন্দু কুমার দাস জানান, বিগত ১৯৮৩ সালে ধর্মান্তরিত হয়ে আমি ইসলাম ধর্মগ্রহণ করি। বর্তমানে আমি বাবুল মিয়া নামে সকলের কাছেই পরিচিত। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাওয়ার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও আজ পর্যন্ত কোন সুরাহা পাইনি। তাই পেটের তাগিদে আমি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করছি। বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পাই যে, আমার বড় ভাই জহরলাল দাস আমাকে মৃত দেখিয়ে জন্ম-মৃত্যু, উত্তরাধিকার সনদ বানিয়ে আমার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন করেছে। তাছাড়া আমার ভিটেমাটি ও জমিজমা ভোগদখল করার জন্য পায়তারাও করছে। এ খবর পেয়ে এলাকায় আসলে তারাও হতবাক হয়ে যায়, তাদের ধারণা ছিল আমি মরে গেছি। এরপর আমি বিভিন্ন প্রমাণাদি সংগ্রহ করি। তিনি আরও জানান, জীবিকার তাগিদে বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় চলে যাই, এটা আমার ভাই জহরলালও জানে। ঢাকায় আমার সাথে সে কয়েকবার দেখাও করেছে। হঠাৎ একদিন জানতে পারলাম, জহরলাল আমাকে মৃত দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নিয়মিত তুলে নিচ্ছে। তিনি সরকারের কাছে নিজের ভাতা ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ইতিমধ্যে তিনি দিরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একটি দরখাস্ত পেশ করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে জহরলালের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, প্রায় ৪০ বছর আগে আমার ভাই সুবেন্দু কুমার দাস মারা গেছে, তাকে আমি নিজ হাতে শ্বশানে দাহও করেছি।