বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৫ অপরাহ্ন
জাকির হোসেন জুহান, স্টাফ রিপোর্টার:
স্বাধীনতার ৫৩ বছরে ও সরকারের গেজেটভূক্ত না হওয়ায় গত ৫২ বছর ধরে স্থানীয়ভাবে পেশিশক্তির জোরে স্বাধীনতা বিরোধী কুখ্যাত রাজাকার ও পরবর্তী তার সন্তান বর্তমান সরমঙ্গল ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এই জলমহালটি শুকিয়ে মৎস্য আহরণ ও বাজারজাত করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হলেও দেখার কেউ নেই।
এমন অভিযোগ এনে গত ২০২৩ সালের ১৩ই নভেম্বর দিরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ইউনিয়নের জারলিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল মনিরের ছেলে দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি মোঃ জাকির হোসেন।
ঘটনাটি ঘটেছে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার সরমঙ্গল ইউনিয়নের নিম্ন তপশীল বর্ণিত জবানিয়া মৌজার জেএল নং-৩৬, খতিয়ান নং-০১, সাবেক দাগ নম্বর ১৯১ এবং বর্তমান ২৫০ হাল দাগের ৪.৬০ একর ছিছরাপুর জলমহালটি দীর্ঘ ৫২ বছর ধরে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে স্বাধীনতা বিরোধী জারলিয়া গ্রামের স্বাধীনতা বিরোধী মৃত আব্দুল মতলিব ও বর্তমানে তার ছেলে সরমঙ্গল ইউপি চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন জুয়েল ও তার আপন চাচা পরিষদের ইউপি সদস্য আব্দুল কাত্তার মিয়া। গত দুদিন ধরে বিলে দুটি পাওয়ার পাম্প (মেশিন) বসিয়ে বিলের তলা শুকিয়ে মৎস্য আহরণ ও বাজারজাত করার চেষ্টা করছেন।
প্রতিবছর এই মৌসুমে যেখানে বিলের চতুর্দিকে ৪০০ শত একর (১২০০ কেদার) বোরো জমিন আবাদের কাজ শুরু করেন জরালিয়া গ্রামসহ আশপাশের শত শত কৃষকরা। এই মৌসুমে বোরো জমিতে পানি সেচের একমাত্র অবলম্বন এই ছিছরাপুর জলমহালটি। কিন্তু কোন লিজ ও মৎস্য আহরণ আইন না মেনেই প্রতিবছর সরকারকে ৩/৪ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পেশিশক্তির জোরে লাটিয়াল বাহিনী নিয়ে এই পৌষ মাসের শেষের দিকে জলমহালটি শুকিয়ে মৎস্য আহরণ করেন। এতে প্রতিবছর বিল থেকে ৮-১০ লাখ টাকার দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির বোয়াল, রুই, গাগট (আইর), শোলসহ মাছ বিক্রি করে গত ৫২ বছরে এই বিল থেকেই কেবল প্রায় আড়াই কোটি টাকা ইনকাম করেই রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে গলাগাছ বনে গেছেন চেয়ারম্যান জুয়েল ও তার পরিবারের সদস্যরা।
অথচ কৃষকরা বোরো এই মৌসুমে জমিতে পানি সেচ দিতে না পারার আহাজারি যেন কারো কানে পৌছেনি। মৎস্য নীতিমালা আইনে কোন জলমহাল লিজ নিলে ও ভাসমান অবস্থায় মৎস্য আহরণের কথা বলা রয়েছে। কিন্ত তারা লিজ না নিয়েও কিভাবে বিল শুকিয়ে মৎস্য আহরণের চেষ্টা করছেন এমন অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের। বিলের চতুর্দিকে কৃষকরা বোরো জমি আবাদ করে এই বিল থেকে পানি সেচ করতে কেউ সাহস পাচ্ছেন না। কিন্তু সরমঙ্গল ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন জুয়েল ও তার আপন চাচা ইউপি সদস্য আব্দুল কাত্তার মিয়া এতই ক্ষমতাবান যে, তারা শত শত কৃষকদের স্বার্থকে বির্সজন দিয়ে অবৈধভাবে এই ছিছরাপুর জলমহালটি শুকিয়ে মৎস্য আহরণ করে লাখ লাখ টাকা কামানোর ধান্দায় ব্যস্ত থাকলেও তাদের ভয়ে কোন কৃষক মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
খবর পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দুটি মেশিন লাগিয়ে জলমহজালটি শুকানোর চেষ্টা করছিলেন সেই দৃশ্যই চোখে পড়ে। গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে শ্রমিকসহ চেয়ারম্যান ও তার চাচা পালিয়ে যান। খবর পেয়ে সন্ধ্যায় দিরাই উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার (এসিল্যান্ড) ঘটনাস্থলে গিয়ে জলমহালটি শুকানোর তথ্য প্রমাণ পেয়ে অবৈধভাবে বিলটি না শুকানো এবং মৎস্য আহরণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করলেও রাতেই চলছে দুটি মেশিন দিয়ে বিল শুকানোর মহোৎসব। মৎস্য আইনে এই জলমহালটি প্রতিবছর কমপক্ষে ৪ লাখ টাকায় সরকার থেকে লিজ নিয়ে ভাসমান অবস্থান মাছ ধরার কথা। কিন্তু কথায় আছে না চোর না শুনে ধর্মের কাহিনী। পেশিশক্তির জোরে মৃত আব্দুল মতলিবের আমল এবং তার ছেলে সরমঙ্গল ইউপি চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন জুয়েল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা গত ৫২ বছর ধরে জোর-জবরধস্তি করে সরকারকে ২ কোটি ৮ লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত করে বিল রোপনকৃত জমির তলা শুকিয়ে ফেটে গেলেও এই বিল থেকে জমিতে পানি সেচের কোন সাহস পায়নি। তারা তাদের অপকর্মের জন্য সরকারের কাছে বিচার চান।
এ ব্যাপারে সরমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য ও জারলিয়া গ্রামের মোঃ তেরাব আলী, কৃষক সুবল দাস ও সঞ্জিত দাস জানান, এই চেয়ারম্যান জুয়েল গত ৫২ বছর ধরে এই ছিছরাপুর বিল ও আরেকটি ছ্টো বিল ক্ষমতার দাপটে লিজ ছাড়াই ভোগদখল করে আসছেন। এ বছর অবশ্যে ছোট বিলটি অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছেন এবং ছিছরাপুর বিলের তলা শুকিয়ে মাছ ধরতে দুইটি মেশিন বিলে লাগিয়ে বিল শুকানোর কাজ চলছে। তবে বিলের চারদিকে কৃষকরা বোরো জমিন আবাদেও কাজ করছেন। কয়দিন পর কৃষকদের জমি যখন শুকিয়ে যাবে তখন জমিতে কোথা থেকে পানি দিবেন সেটা কারো জানা নেই। তিনি সরকার ও প্রশাসনের কাছে এই জলমহালটি রক্ষা করে কৃষকদের জমিতে পানি সেচের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবী জানান।
এ ব্যাপারে জলমহালটি ভোগদখলকারী চেয়ারম্যানের আপন চাচা বর্তমান ইউপি মোঃ আব্দুল কাত্তার মিয়ার সাথে সরাসরি বিলের পাড়ে দেখা হলে দুটি মেশিন লাগানোর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, জমিতে পানি সেচ দিচ্ছেন বলে দাবী করেন।
সরমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জোরপূর্বক জলমহালটি সেচকারী মোয়াজ্জেম হোসেন জুয়েলের মোবাইলে একাধিকবার যোগযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
দিরাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জনি রায় জানান, চেয়ারম্যান ও তার চাচা সরকার থেকে লিজ না নিয়ে কৃষকদের স্বার্থকে বির্সজন দিয়ে জলমহালটি শুকিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করছেন, তা সম্পূর্ণভাবে আইন পরিপন্থি। তিনি তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন আজকের পর যদি এই বিলটি অবৈধভাবে শুকিয়ে মৎস্য আহরণের চেষ্টা করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারী দেন।