শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১৩ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেক্স : কথিত আছে পশ্চিমা বিশ্ব কোনো উদ্দেশ্য হাসিলের আগে গণমাধ্যমে অপপ্রচার বা মিডিয়া ক্যূ তৈরী করে। দেশবাসী এবং বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করে তাদের স্বপক্ষে জনমত তৈরী করে। তারপর হামলা। এরপর অস্ত্র বিক্রি কিংবা স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে দখলদারিত্ব স্থাপন। তবে এবার এ রকম অপকৌশল করতে গিয়ে জনপ্রিয় বৃটিশ পত্রিকা ‘দ্য সান’র হাটে হাঁড়ি ভেঙেছে। মুসলিম বিদ্বেষী একটি মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশের কারণে বৃটেনের সংবাদপত্র পর্যবেক্ষক সংস্থার কাছে পত্রিকাটির নামে দুই সহস্রাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। এছাড়া প্রকাশিত প্রতিবেদনটিকে তিরস্কার করেছেন সচেতন পাঠকেরা। গত সোমবার ‘দ্য সান’র প্রধান শিরোনাম ছিল, প্রতি ৫ জন বৃটিশ মুসলিমের মধ্যে জিহাদিদের প্রতি সমবেদনা আছে একজনের। কিন্তু দ্য সান যে জরিপের উপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে, সে জরিপ বৃটেনেই তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পরপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় শোরগোল পড়ে যায়। প্রতিবাদ আসা শুরু হয় সব মহল থেকে। প্রতিবাদে শামিল হয় অমুসলিম বৃটিশরাও। বৃটেনে #1in5muslims হ্যাশট্যাগ টুইটারের ট্রেন্ডিং লিস্টে চলে আসে। এ প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃটেনের সংবাদপত্র পর্যবেক্ষক সংস্থা ‘দ্য ইনডিপেনডেন্ট প্রেস অরগানাইজেশন’ এ এক সপ্তাহে আড়াই হাজারেরও বেশি অভিযোগ জমা পড়ে।
যে জরিপের উপর ভিত্তি করে দ্য সান প্রতিবেদনটি তৈরী করে সে সেটি করেছিল জরিপ প্রতিষ্ঠান ‘সার্ভেশন’। মূলত: তারা এক হাজার বৃটিশ মুসলিমকে ফোন করে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব জানতে চায়। তারা ফোনে যেসব প্রশ্নের জবাব চেয়েছে, তার একটি প্রশ্ন ছিল এ রকম- ‘এ তিনটি বিবৃতির মধ্যে কোনটি আপনার মতের সবচেয়ে কাছাকাছি?’
ক. সিরিয়ায় যোদ্ধাদের সাথে যোগ দেওয়া মুসলিম তরুণদের প্রতি আমার অনেক সহমর্মিতা আছে।
খ.সিরিয়ায় যোদ্ধাদের সাথে যোগ দেওয়া মুসলিম তরুণদের প্রতি আমার কিছুটা সহমর্মিতা আছে।
গ. এসব তরুণ মুসলিম যোদ্ধাদের প্রতি আমার কোনো সহমর্মিতাই নেই।
ঘ. মন্তব্য নেই
‘দ্য সান’ শিরোনামে ‘জিহাদিস্ট’ শব্দটি ব্যবহার করলেও তাদের কোনো প্রশ্নেই এ শব্দের উল্লেখ ছিল না। এ বিষয়টি দৃষ্টিকটূ ঠেকেছে অনেকের কাছে। কারণ, সিরিয়ায় যাওয়া মানেই তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএসের সাথে যোগদান বোঝায় না। তরুণ মুসলিমদের অনেকেই আইএস বিরোধী অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে। আবার প্রশ্ন করার সময় ‘জিহাদি’ উল্লেখ না করেও শিরোনামে ‘জিহাদি’ উল্লেখ করাকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না কেউই।
জরিপ প্রতিষ্ঠানের ঠান্ডা মাথায় এমন উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রশ্নের জবাবে ৪ শতাংশ মুসলিম বলেছেন, হ্যাঁ, সিরিয়ায় যাওয়া মুসলিম তরুণদের প্রতি তাদের অনেক সহমর্মিতা আছে, ১৪ শতাংশ কিছুটা সহমর্মিতার কথা জানিয়েছেন আর ১৯ শতাংশের কিছু বেশি মুসলিম জানিয়েছেন এসব তরুণ যোদ্ধাদের প্রতি তাদের কিছু না কিছু হলেও সহমর্মিতা আছে। মূলত: এটিকেই বিশাল করে শিরোনাম করে দ্য সান।
সংখ্যাঘুদের উপর জরিপ নিয়ে ম্যানচেষ্টার ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞ মারিয়া সবলোয়েস্কাতো ‘সহমর্মিতা’ শব্দটি নিয়েই আপত্তি তুলেছেন। অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশেনারির বরাতে তিনি বলেন, এ শব্দটির অর্থ হচ্ছে, কারো দুর্ভোগে বা দুঃখে তার জন্য করুণা অনুভব করা।
মারিয়া বলেন, বৃটিশ মুসলিমদের প্রতি যে চটুলভাবে প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে, তাতে বিশ্বে মুসলিমরা যেভাবে নিগৃহীত হচ্ছে বা তাদের উপর যেভাবে দিনের পর দিন যুদ্ধ চালানো হচ্ছে, তার দিকে ইঙ্গিত করেনি। আর ‘সহমর্মিতা’ শব্দটি দিয়ে অধিকাংশ বৃটিশ মুসলিমই হয়তো সেদিকেই ইঙ্গিত করেছেন।
জরিপে সাহায্য করেছেন এমন একজন তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে ‘‘আমাদের করা জরিপের উত্তরে যারা যারা ‘কিছুটা সহমর্মিতা আছে’ বা ‘অনেক সহমর্মিতা আছে বলেছেন, তাদের কাউকেই সে উত্তরের মাধ্যমে জিহাদিদের সমর্থন করেছে বলে মনে হয়নি।’’ তিনি বলেন, এক নারী বেশ সময় নিয়ে তার উত্তরগুলো দিয়েছেন। তিনি বলেন, হয়তোবা ডেভিড ক্যামেরনের সিরিয়ায় বোমা হামলা চালানোর অধিকার আছে এবং মুসলমানদেরই উচিত তাদের ধর্মকে শান্তিপূর্ণ প্রমাণ করা, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। কিন্তু তারপরও সিরিয়ায় বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সাথে যোগ দেওয়া মুসলিম তরুণদের প্রতি আমার অনেক সহমর্মিতা আছে, কারণ আমি জানি এ নিরীহ নিরপরাধ তরুণদের মগজ ধোলাই করা হয়েছে। তারপরও যদি ‘দ্য সান’র কথাকেই ধরে নেওয়া হয়, তাহলেও এ বছরের মার্চে ‘স্কাই নিউজ’র করা একই রকমের জরিপের সাথে তুলনা করলে দেখা যায়, সিরিয়ায় মুসলিম যোদ্ধাদের প্রতি বৃটিশ মুসলিমদের ‘সহমর্মিতা’ অনেকাংশেই কমেছে।