বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৬ অপরাহ্ন
সিটিজেন নিউজ ২৪ ডটকম: ঢাকা: লিটন কুমারের পুল তাতেই ৪। জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়াম আনন্দে মাতোয়ারা। ৯ উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা দ্বিতীয় জয়। সেই সঙ্গে টানা চতুর্থ সিরিজ জয়ের আনন্দ। চট্টগ্রাম থেকে এই আনন্দ ছড়িয়ে গেল পুরো বাংলাদেশে।
চট্টগ্রামের এই ভেন্যু বাংলাদেশের জন্য লাকি গ্রাউন্ড; এর প্রমাণ বার বার দিয়ে চলছে জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়াম। বুধবারের ম্যাচের আগে এই মাঠে ১৭টি একদিনের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ৯টি ম্যাচই জিতেছে টাইগাররা।
এমন সমীকরণ সামনে রেখে পয়মন্ত ভেন্যুতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। ৯ উইকেটের বিশাল এই জয়ে টানা চতুর্থ সিরিজ জিতল টাইগাররা। এই জয়ে বাংলাদেশের মাটিতে এটা ১৫তম সিরিজ জয়। সবমিলিয়ে এটা ১৯তম সিরিজ জয়।
ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং ৩ বিভাগে অতিথিদের উড়িয়ে দিয়ে ৯ উইকেটের দুর্দান্ত জয় তুলে নিয়েছে মাশরাফি বাহিনি। এর আগে মাত্র দুটি জয়ই ছিল প্রোটিয়াদের বিপক্ষে। চলতি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মিরপুর ৭ উইকেটের জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। তাতেই তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে রূপ নেয়।
উইকেট বিবেচনায় এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জয়; এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও। এর আগে কেনিয়া ও জিম্বাবুয়েকে বাংলাদেশ ৯ উইকেটে পরাজিত করেছিল।
এদিকে পয়মন্ত ভেন্যু জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে এটি বাংলাদেশের দশম জয়। টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর বিপক্ষে খেলা জিম্বাবুয়ে, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাল বাংলাদেশ। এ ছাড়া স্কটল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডকেও পরাজিত করেছে পয়মন্ত এই ভেন্যুতে।
ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে সাকিব আল হাসান বলেছিলেন ৩ বিভাগেই সেরা ক্রিকেট খেলে সিরিজ নিশ্চিত জিততে চান। যেমন কথা তেমন কাজ। বুধবার প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বৃষ্টি বিঘ্নিত কার্টেল ওভারে (৪০) সব বিভাগের সেরা ক্রিকেট খেলে ২-১ ব্যবধানে প্রথমবারের মতো সিরিজ জিতল বাংলাদেশ।
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে এর আগে বাংলাদেশ ৩টি ম্যাচে শেষ ম্যাচ জিতে সিরিজ জয় করেছেন। এই ম্যাচটি হিসেব করলে এটা বাংলাদেশের চতুর্থ সিরিজ জয়। অবশ্য খেলেছেন চলতি ম্যাচটিসহ ১০টি এমন ম্যাচ।
বৃষ্টির আগে ২৩ ওভার খেলা হয়েছে; সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪ উইকেট খুইয়ে সংগ্রহ করেছে ৭৮ রান। ৩ ঘণ্টা পরে পুনরায় খেলা শুরু হলে দক্ষিণ আফ্রিকা বাংলাদেশকে ১৭৯ রানের লক্ষ্য দেয়।
১৭৯ রানের লক্ষ্যে বিপরীতে ছুটতে গিয়ে দুই ওপেনার সৌম্য ও তামিম দুর্দান্ত শুরু করেন। দু’জনই এদিন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম উইকেট জুটিতে আগের ৪৬ রানের রেকর্ড ভেঙ্গে নিজেদের করেছেন। শুধু তাই নয়, প্রথম উইকেট জুটিতে বাংলাদেশ এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের (১৫৪) জুটি।
অভিষেক ম্যাচের দুর্দান্ত বোলিং করা রাবাদাকে নিজের করা চতুর্থ ওভারের পর পর ৩টি বাউন্ডারি মারলেন ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে নামকুড়ানো সৌম্য সরকার।
মরনে মরকেলকে মিড উইকেটের উপর দিয়ে বিশাল ছক্কা; এটাইতো বদলে যাওয়া বাংলাদেশের নতুন চেহারা। নয়তো কাইল অ্যাবটের মিডল স্ট্যাম্পের উপর দিয়ে চলে যাওয়া বলটি সৌম্য দারুণ ভাবে আইসিসির নাম দেওয়া প্যারিস্কুপ মারলেন। অবশ্য জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আউট হলেন তিনি।
সৌম্য আউট হওয়ার পর মাঠে নামেন লিটন কুমার। এদিন যেন সবাই নিয়ম করেই এসেছেন। দুর্দান্ত এক শট খেলে জয় আসল লিটন কুমারের ব্যাট থেকে (৫*)। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতল।
পুরো ম্যাচের কোনো অংশেই প্রোটিয়াদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। যেখানে ফিল্ডিংয়ে বিশ্বের সেরা দল ভাবা হয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। অথচ এই ম্যাচে সহজ সরল ক্যাচও যেন ফেলে দিলেন ফারহান বেহারদিনের ক্যাচটি। দক্ষিণ আফ্রিকার কফিনে পেরেক ঠুকে দেওয়া সৌম্যকে ফিরিয়ে হয়তো কিছুটা স্বস্তি নিতে পারতেন অতিথিরা। কিন্তু সেই সুযোগ বঞ্চিত হল সহজ ক্যাচ মিসে।
সৌম্য টানা বেক টু বেক হাফসেঞ্চুরি করে ৭৫ বলে ৯০ রান করে আউট হয়েছেন। ১৬ ম্যাচে সৌম্যর এটা চতুর্থ হাফসেঞ্চুরি। ৪১ বলে ৮ চারে সৌম্য দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরির দেখা পেলেন। এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র সেঞ্চুরিটি (১২৭*) পেয়েছিলেন তিনি।
চলতি সিরিজে রান খরায় ভুগতে থাকা তামিম ইকবাল নিজের মাঠে হাফসেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। এদিন খান পরিবার মাঠে বসেই খেলা দেখেছেন। ৭৭ বলে ৬১ রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন তামিম। তামিমের এটি ৩১তম হাফসেঞ্চুরি।
এর আগে টসে জিতে বিনা দ্বিধায় ব্যাটিং নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে শুরুতেই আঘাত হানেন বাংলাদেশের তরুণ পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। ডি কুক কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই দলীয় ৮ রানে সাজঘরের পথ দেখান মুস্তাফিজ।
ওয়ানডে অধিনায়ক হাশিম আমলা ও টোয়েন্টি২০ অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস মিলে বাংলাদেশের বোলারদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়তে পারেননি। ডু প্লেসিসকে (৬) সাকিব উইকেটের পেছনে মুশফিকের ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরান। দুই ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে নিজেও যেন বিভ্রান্ত হলেন হাশিম আমলা। সাকিবের দ্বিতীয় শিকার হয়েছেন তিনি। ক্রিজ ছাড়ার আগে খেলেছেন ৩৫ বলে ১৫ রানের ইনিংস।
সাকিব আমলাকে আউট করে ক্যারিয়ারের দুইশতম উইকেটে মালিক হয়েছেন এই ম্যাচেই। শুধু তাই নয়, সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে চার হাজার রানের সঙ্গে দুইশ রানের মাইলফলকে পৌঁছান তিন। শুধু তাই নয়, এদিন সাকিব হোম গ্রাউন্ডে সব ফরম্যাটের ক্রিকেট সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক হয়েছেন। এই পথে সাকিব ফারহান বেহারদিনেকে সীমানার প্রান্তে সাব্বিরের দুর্দান্ত ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরান। যাওয়ার আগে ফারহান ১৬ বলে ১২ রানের ছোটখাটো সংগ্রাম করেছেন। যদিও তার এই সংগ্রাম দলের স্কোরকে শক্তিশালী করতে পারেনি।
২৩ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার রান যখন ৭৮ তখনই নামে বৃষ্টি। যার কারণে ৩ ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকে। পুনরায় খেলা শুরু হলে ম্যাচটি ৪০ ওভারে নির্ধারিত হয়। কিন্তু শেষ ১৭ ওভারে ৯০ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। দলের এই স্কোরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন ডেভিড মিলার (৪৪) ও জেপি ডুমিনি (৫১)। মাশরাফির বলে সাব্বির দুর্দান্ত এক ক্যাচ ধরে ডেবিট মিলারকে ফেরান। এই উইকেটটি দখল নিয়ে মাশলাফিও ২০০ উইকেটের মাইলফলকে পৌঁছান।শেষ দিকে রুবেল হোসেন ও মুস্তাফিজের আক্রমণে ছতভঙ্গ হয় দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
দক্ষিণ আফ্রিকা : ১৬৮/৯, ৪০ ওভার ( ডুমিনি ৫১, মিলার ৪৪; সাকিব ৩/৩৩, মুস্তাফিজ ২/২৪, রুবেল ২/২৯)
বাংলাদেশ : ১৭০/১, ২৬.১ ওভার (সৌম্য ৯০, তামিম ৬১*, লিটন ৫*; ইমরান তাহির ১/৩৭)
ফল : বাংলাদেশ ৯ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা : সৌম্য সরকার (বাংলাদেশ)
সিরিজ সেরা : সৌম্য সরকার (বাংলাদেশ)
সিরিজ : বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী।