রবিবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৩ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : জাতীয় সমঝোতার ইতিবাচক ও ভবিষ্যৎমুখী রাজনীতির আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সমৃদ্ধ দেশ ও আলোকিত সমাজ গড়তে ‘ভিশন ২০৩০’ রূপরেখা তুলে ধরেছেন। একই সাথে তিনি প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে ভবিষ্যতমুখী এক নতুন ধারার সরকার ও রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এই ভিশনটি চূড়ান্ত হলে দেশবাসীর সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য পেশ করা হবে। এই ভিশনের আলোকেই আগামীতে বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহার রচিত হবে বলে জানান বিএনপি প্রধান। সংঘাত-সংঘর্ষ এড়াতে বেগম খালেদা জিয়া আবারো সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের জন্য। দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জেগে উঠুন, ঐক্যবদ্ধ হোন। আপনাদের যে অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে, তা ছিনিয়ে নিন। এতো জুলুম ও অস্থিরতা বাংলাদেশ বহন করতে অক্ষম। অন্ধকারের পর্দা দুলে উঠেছে। অচিরেই আলো আসবে।’ গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিল ঘিরে পুরো এলাকায় নামে লক্ষাধিক নেতা-কর্মীর ঢল। ভোরের আলো ছড়ানোর আগেই কানায় কানায় ভরে যায় কাউন্সিল চত্বর। সকাল পৌনে ১১টার দিকে খালেদা জিয়ার সাদা নিশান গাড়ি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করে। কাউন্সিলর-প্রতিনিধিসহ নেতা-কর্মীদের মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে গাড়ি থেকে নামেন হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি পরিহিত বিএনপি চেয়ারপারসন। তার যাওয়ার পথে মহিলা দল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা দুই পাশে দাঁড়িয়ে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এরপর জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন খালেদা জিয়া। বেলুন উড়ান এবং পায়রা অবমুক্ত করেন। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল তোলেন দলীয় পতাকা। মূল মঞ্চের পেছনে খালেদা জিয়ার পাশাপাশি জিয়াউর রহমান ও তারেক রহমানের ছবি রাখা হয়। মঞ্চের বাম দিকে গুম ও হত্যাকা-ের শিকার নেতাদের ছবি সম্বলিত ‘হিরোজ নেভার ডাই’ শিরোনামে বিশাল ডিজিটাল ব্যানার। সেখানে নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর ছবিও রাখা হয়। অনুষ্ঠানে মূল মঞ্চের বাম দিকে ছিল ৪২ ইঞ্চি টেলিভিশন। লন্ডনে অবস্থানরত দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভাষণের ভিডিও প্রচারের জন্য। কাউন্সিলের উদ্বোধনী পর্বে কাউন্সিলর ও ডেলিগেট ছাড়াও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও আমন্ত্রিত দেশি-বিদেশি অতিথিরা অংশ নেন। কাউন্সিলরদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় বিকেল ৫টায়। ১৯৮৯ সালের মার্চে এই ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলের তৃতীয় কাউন্সিল অধিবেশনের উদ্বোধন করেছিলেন খালেদা জিয়া। ২৭ বছর পর একই স্থানে কাউন্সিল করছে দলটি। ভিশন ২০৩০ সমৃদ্ধ দেশ এবং আলোকিত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে ‘ভিশন-২০৩০’ শিরোনামে একটি বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনার খসড়া প্রণয়ন করেছে বিএনপি। অচিরেই এই ভিশন-২০৩০ চূড়ান্ত করা হবে। কাউন্সিলে খালেদা জিয়া ‘ভিশন-২০৩০’ এর একটি সংক্ষিপ্ত রূপরেখা তুলে ধরেন। খালেদা জিয়া বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা ও সাম্য আজো বাস্তবায়িত হয়নি। সেই লক্ষ্যগুলো পূরণের জন্য বাংলাদেশের সকল ধর্ম-বিশ্বাসের মানুষ, পাহাড় ও সমতলসহ সকল অঞ্চলের মানুষ এবং প্রতিটি নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের চিন্তা-চেতনা ও আশা-আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে একটি সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তোলা বিএনপি’র লক্ষ্য। খালেদা জিয়া বলেন, আমরা এমন এক উদার গণতান্ত্রিক সমাজ গড়তে চাই, যেখানে জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে সকলের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত হবে। সকল মত ও পথকে নিয়ে এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি লালন ও পরিপুষ্ট করতে চাই, যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি ‘রেইনবো নেশনে’ পরিণত হবে। তিনি বলেন, ‘ওয়ান ডে ডেমোক্রেসিতে’ আমরা বিশ্বাসী নই। জন-আকাক্সক্ষাকে মর্যাদা দিয়ে, তাদেরকে সম্পৃক্ত করেই রাষ্ট্র পরিচালনা করবো আমরা। সুধীসমাজ, গণমাধ্যম, জনমত জরিপ, জনগণের দৈনন্দিন চাওয়া-পাওয়া, বিশেষজ্ঞ মতামত ও সবধরনের অভিজ্ঞানের নির্যাস গ্রহণ করে দেশ পরিচালনাই বিএনপি’র লক্ষ্য। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিল, সে রাষ্ট্রের মালিকানা আজ তাদের হাতে নেই। আমরা তাদের হাতেই দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে চাই। তিনটি ‘গুড’ বা ‘সু’ এর সমন্বয় ঘটাতে চাই। এগুলো হলো- গুড পলিসি, গুড গভরনেন্স এবং গুড গভর্নমেন্ট (সুনীতি, সুশাসন এবং সু-সরকার)। খালেদা জিয়া বলেন, গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক সুশাসনের জন্য নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, আইন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মতো সাংবিধানিক ও আধা-সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতি, অনিয়ম ও দলীয়করণমুক্ত করা হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ। মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার। এজন্য বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ‘ডবল ডিজিটে’ উন্নীত করার সৃজনশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সততা, দক্ষতা, দেশপ্রেম ও বিচার ক্ষমতাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রশাসন ও পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকারিতা নিশ্চিত করা হবে। সততা ও সৃজনশীলতা হবে সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনে যোগ্যতার মাপকাঠি। আইনানুগভাবে বিচার বিভাগ, প্রশাসন, পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর কর্তব্য পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে দলীয় ও অবাঞ্ছিত সব হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে। তিনি বলেন, সকল কালাকানুন বাতিল করা হবে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- এবং আটক অবস্থায় দৈহিক-মানসিক অমানবিক নির্যাতনের অবসান ঘটানো হবে। আটকাবস্থায় মৃত্যুর প্রতিটি ঘটনার জন্য তদন্তের ব্যবস্থা থাকবে। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের যোগ্যতা ও পদ্ধতি সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করবে বিএনপি। নিয়োগের জন্য বাছাই বা সুপারিশকৃতদের ব্যক্তিগততথ্য ও সম্পদবিবরণী জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা সংসদীয় সরকারের আবরণে একটি স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম দিয়েছে। এই অবস্থার অবসানকল্পে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনা হবে। জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হবে। সংসদকে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে জনগণই সকল ক্ষমতার মালিক। ‘রেফারেন্ডাম’ বা গণভোট হচ্ছে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনগণের সম্মতি গ্রহণের পন্থা। বর্তমান সরকার সংবিধান থেকে গণভোটের বিধান বাতিল করে জনগণের সেই ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছে। আমরা সংবিধানে শহীদ জিয়াউর রহমান প্রবর্তিত গণভোটের ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবো। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, স্থানীয় পর্যায়ে সুশাসন, দক্ষ সেবা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, সরকারি বরাদ্দের অপ্রতুলতা এবং বৈষম্য নিরসন, দুর্নীতির সাথে আপোষ না করা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ‘ন্যায়পাল’-এর পদ ও কার্যালয় সক্রিয় করাসহ নানা রূপরেখা তুলে ধরেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য অনেক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করা হবে। দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা ও তদারকি নিবিড় ও শক্তিশালী করা হবে। সংকীর্ণ দলীয় মতাদর্শের ভিত্তিতে নয়, যোগ্য, সৎ ও দক্ষ ব্যক্তিদের বেসরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসমূহ পরিচালনা বোর্ডে নিয়োগ দেয়া হবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে। খালেদা জিয়া বলেন, সন্ত্রাসী ও জঙ্গী তৎপরতার বিরুদ্ধে বিএনপি সব সময় সক্রিয়। দেশের অভ্যন্তরে গড়ে উঠা জঙ্গীবাদী নাশকতাকে আমরা কঠোর হাতে দমন করেছিলাম। ভবিষ্যতে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ দমনে সেই কঠোরতা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। বিএনপি মনে করে, সন্ত্রাসবাদ সকল রাষ্ট্রের জন্যই হুমকির কারণ। এ কারণে বিএনপি বাংলাদেশের ভূ-খ-ের মধ্যে কোনরকম সন্ত্রাসবাদী তৎপরতাকে বরদাশত করবে না। বাংলাদেশের মাটি থেকে অপর কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতাও মেনে নেবে না। শিক্ষা, প্রযুক্তির প্রসার ও মানবসম্পদ উন্নয়নে জোর দেয়ার কথা বলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তিনি বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষাকে আরো আধুনিক ও যুগোপযোগী করা হবে। তাদের কারিকুলামে পেশাভিত্তিক ও বৃত্তিমূলক বিভিন্ন বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। মেয়েদের জন্য স্নাতক এবং ছেলেদের জন্য দশম শ্রেণী পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে। মেয়েদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি কার্যক্রম সম্প্রসারিত করা হবে। শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য জাতীয় টিভিতে পৃথক একটি চ্যানেল চালু করা হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বা আইসিটি-র ক্ষেত্রে বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশকে তাল মিলিয়ে চলায় সক্ষম করার লক্ষ্যে এবং প্রযুক্তি ও কৃৎকৌশলের বিষয়ে মানব সম্পদের উৎকর্ষ সাধন এবং অবকাঠামোগত সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে। সুষম ও নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করা, ভর্তুকি দিয়ে কৃষি উপকরণ সুলভ ও সহজলভ্য করা, সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা চালু করা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদা অক্ষুণœ রাখা, প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা, যুব, নারী ও শিশুদের কল্যাণ করা, পরিবেশ দূষণ রোধে জনসচেনতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কাঠামো গড়ে তোলা, পানি সম্পদের ন্যায্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ, কাক্সিক্ষত ডবল ডিজিট প্রবৃদ্ধির জন্য যথোপযুক্ত পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন, রেল ও নৌপথকে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া, নগরায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা, সকল নাগরিকের বাসস্থানের অধিকার নিশ্চিত করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, তৈরী পোশাক শিল্পের বাধাগুলো দূর করা, যাকাত ফান্ডের সু-ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, ওয়াক্ফ সম্পত্তির পরিচালনা ও ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, দেবোত্তর সম্পত্তিসমূহ হিন্দু শাস্ত্রের বিধান অনুযায়ী পরিচালনা করা, মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে উদ্যোগ নেয়া, মাদকের মারণ ছোবল থেকে কিশোর ও যুব সমাজকে রক্ষা করা, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে রাজনীতিক ও সামাজিক বিভাজনের অবসান ঘটানোসহ আর্থ সামাজিক নানা বিষয়ে দলের রূপরেখা তুলে ধরেন বিএনপি চেয়ারপারসন। খালেদা জিয়া বলেন, প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে সৃজনশীল, ইতিবাচক ও ভবিষ্যতমুখী এক নতুন ধারার সরকার ও রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি। এজন্য নতুন এক সামাজিক সমঝোতা বা চুক্তিতে উপনীত হতে বিএনপি উদ্যোগ নেবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আমাদের কাছে গণতান্ত্রিক শাসনের কোনো বিকল্প নেই। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৩৭ বছরে বিএনপি তা প্রমাণ করেছে। ১৯৭৫-এ একদলীয় শাসনের পর বহুদলীয় গণতান্ত্রিক শাসন বিএনপিই ফিরিয়ে আনে। এরশাদের স্বৈরশাসনের অধীনে কোনো নির্বাচনেই বিএনপি অংশ নেয়নি। মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের জরুরি সরকারকেও জরুরি অবস্থা তুলে নির্বাচন দিতে বাধ্য করে বিএনপিই। অবশ্য এর সুফল ভোগ করে আওয়ামী লীগ। তারা ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য গণতন্ত্রের পথে না থেকে অতীতের স্বৈরশাসকদের পদাংক অনুসরণ করে বর্তমানে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে। তিনি বলেন, এই স্বেচ্ছাচারী ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে এবং জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে বিএনপি আন্দোলন করছে। সেই আন্দোলনগুলোতে সারাদেশে আমাদের তৃণমূলের নেতা-কর্মী, ছাত্র-তরুণ ও মেয়েরাও অংশ নিয়েছে। সেই আন্দোলনে গ্রামে-শহরে কোথাও শাসক দলের কোনো গণভিত্তি নেই। তিনি বলেন, বিএনপির আন্দোলন ছিল সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক। এই আন্দোলনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দেখে শাসকেরা ভীত হয়ে এক নোংরা পথ বেছে নেয়। এই আন্দোলনে তারাই নাশকতা ও অন্তর্ঘাত সৃষ্টি করে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, দেশজুড়ে এখনো সেই ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলছে। অসংখ্য পরিবারে স্বজন হারানো কান্নার রোল এখনো থামেনি। অনেকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। বয়োবৃদ্ধ প্রবীণ নেতা থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলের তরুণ কর্মী-সমর্থক পর্যন্ত প্রায় সকলেই অসংখ্য মামলায় জর্জরিত। তিনি বলেন, এই চরম দুঃখের দিন কেটে যাবে। কারণ, এই জুলুম ও অস্থিরতা বাংলাদেশ বহন করতে অক্ষম। নেতা-কর্র্মীদের মতো তিনি নিজেও চরম দুঃখ সহ্য করছেন উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, আমি পরিবারের সদস্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন। আমার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো বিদেশ-বিভূঁইয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করেছে। দীর্ঘ ৭ বছর পর সে আমার কাছে লাশ হয়ে ফিরেছে। আমার বড় ছেলে তারেক রহমানকে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল। চরম নির্যাতনে পঙ্গু হয়ে এখনও দূরদেশে সে চিকিৎসাধীন। এই কঠিন সংগ্রামে আল্লাহর রহমত এবং আপনাদের সহযোগিতাই আমার পাথেয়। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বিএনপির জন্য এটা কঠিন সময় হলেও অতীতের মতোই বিএনপি আবারো জেগে উঠেছে। গ্রিক উপকথার সেই ফিনিক্স পাখির মতো ভস্মস্তূপ থেকেই বার বার আপন শক্তিতে বলীয়ান হয়ে নতুন উদ্যমে জেগে ওঠে বিএনপি। তিনি বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিএনপি ও বিরোধী দলগুলোকে নির্মূল করা, হামলা-মামলায় বিরোধী রাজনীতিকদের হেনস্থা করা এবং আদালতসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও পন্থাকে কাজে লাগিয়ে শহীদ জিয়ার স্মৃতিকে মুছে ফেলার অপচেষ্টাই শুধু করা হচ্ছে না। জবাবদিহিতাহীন স্বেচ্ছাচারী শাসনে দেশ ও জনগণের অবস্থাও আজ শোচনীয়। তিনি বলেন, জনগণের রায়ের প্রতি সরকারের কোনো শ্রদ্ধা নেই। ভোট ছাড়া নিজেরা ক্ষমতাসীন হয়ে তারা সকল পর্যায়ে নির্বাচনী ব্যবস্থাকেই প্রহসনে পরিণত করেছে। বিজয়ী সিটি ও পৌর মেয়র এবং উপজেলা চেয়ারম্যানসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তারা মিথ্যা মামলা দিয়ে অপসারণ করে অনুগত লোকদের বসিয়ে দিচ্ছে। খালেদা জিয়া বলেন, সন্ত্রাস-দুর্নীতি-লুটপাট আজ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। শেয়ার বাজার লুট হয়েছে। ব্যাংকগুলো লুন্ঠিত হচ্ছে। এখন বিদেশী হ্যাকাররা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থ লুন্ঠনের প্রক্রিয়ায় যোগ দিয়েছে। এই অযোগ্য ও দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের আমলে ব্যাংক, এটিএম বুথ, এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকেও জনগণের অর্থ নিরাপদ নয়। স্বাধীন সাংবাদিকতা, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার আজ পুরোপুরি ভূলুন্ঠিত ও বিপন্ন। তিনি বলেন, দুর্নীতি, অনাচার ও অপশাসনে লিপ্ত ক্ষমতাসীন সরকার নানা অপকৌশলে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করছে। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকাসহ বহু সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বন্ধ করে রাখা হয়েছে চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভি। সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদকে মিথ্যা মামলায় আটক করে রাখা হয়েছে। জোর করে জাতীয় প্রেসক্লাব দখল করে নেয়া হয়েছে। এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে দেশ এক অকার্যকর রাষ্ট্রের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা কি কেবলই ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করবো? আমরা কি কেবল এক পক্ষ আরেক পক্ষকে হেনস্থা ও ধ্বংস করে দিতে চাইবো? রাজনীতি তো দেশের জন্য, মানুষের জন্য। সেই দেশকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে মানুষের উপর জবরদস্তির শাসন চালিয়ে কী লাভ? এই দূষিত রাজনীতির চক্র থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। খালেদা জিয়া বলেন, কোনো মত, পথ ও দলকে কখনো নিশ্চিহ্ন করা যায় না। সে ধরনের অপচেষ্টার পরিণাম কারো জন্য কখনো শুভ হয়না। সকলকে তিনি সংযমী ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন হওয়ার আহবান জানান। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সকলেই বাংলাদেশে একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক সরকার চায়। এর জন্য যত দ্রুত সম্ভব সকলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন প্রয়োজন। কিভাবে সকলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হতে পারে, সে ব্যাপারে সকলের আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটা সমাধানে পৌঁছাতে চাই। তাহলেই দ্বন্দ্ব-সংঘাত থাকবে না। আন্দোলনেরও কোনো প্রয়োজন হবে না। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা আলোচনা অস্বীকার করে শুধুমাত্র বলপ্রয়োগের পথ খোলা রেখে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিচ্ছেনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকা ও না থাকার মধ্যে বেহেশ্ত ও দোজখের মতো দুস্তর ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে। স্বর্গচ্যুত হয়ে নরকযন্ত্রণা ভোগের ভয়ে তাই অনেকে ক্ষমতা ছাড়তে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এবং ক্ষমতায় টিকে থাকতে কিংবা ক্ষমতায় যেতে মরিয়া হয়ে সব রকমের অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে থাকে। তিনি সকলকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, আগামীতে জনগণের সমর্থনে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে কাউকেই অহেতুক হেনস্থার শিকার হতে হবে না। আমরা কারো প্রতি অবিচার করবো না। সরকার ও বিরোধী দলকে মর্যাদা ও অধিকারের দিক থেকে আমরা যাতে আরো কাছাকাছি আনতে পারি, তার জন্য আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে একটা পন্থা ও প্রক্রিয়াও উদ্ভাবন করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা কেবল ক্ষমতার যাবার উদ্দেশ্যে একটি নির্বাচন বা সংলাপ চাইছি না। আমাদের উদ্দেশ্য, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা; জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে একটি জবাবদিহিতামূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা; জনগণ ভোটের যে অধিকার হারিয়েছে, তা ফিরিয়ে আনা; কারা দেশ পরিচালনা করবে তা নির্ধারণের অধিকার জনগণকে দেয়া; রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; এবং অস্থিরতা ও সংকট থেকে মুক্ত হয়ে একটি স্থিতিশীল ও সমঝোতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি করা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অসহায় ও হতাশ জনগণ আমাদের এই কাউন্সিলের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা দিক-নির্দেশনা ও আলোর দিশা চায়। আমাদের শক্তির উৎস তারাই। সমস্যা-সংকট-দুঃশাসনে নুয়ে পড়া এ দেশের মানুষেরা ঐক্যবদ্ধ হলে বজ্রের মতো কঠিন হয়ে আঘাত হানতে জানে। কাউন্সিলর ও আগত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা এই কাউন্সিল শেষে দিক-নির্দেশনা নিয়ে সারা দেশে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বেন, তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করবেন। তাহলেই আমরা অজেয় শক্তিতে পরিণত হবো। কাউন্সিলের মঞ্চে খালেদা জিয়ার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, মাহবুবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, আ স ম হান্নান শাহ, জমিরউদ্দিন সরকার, আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান। মঞ্চের বাম পাশে অতিথি আসনে বাসা ছিলেন, প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাংবাদিক শফিক রেহমান, মাহফুজউল্লাহ, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, ইসমাইল জবিউল্লাহ, কবি আল মুজাহিদী, সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতা রুহুল আমিন গাজী, এম এ আজিজ, এম আবদুল্লাহ, সৈয়দ আবদাল আহমেদ। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্থায়ী কমিটির সদস্য চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীও অনুষ্ঠানে যোগ দেন। বিদেশি অতিথিদের মধ্যে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে বিরোধী লেবার পার্টির সদস্য সিমন ডান্স জাক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডেমোক্রেটিক পার্টির এমপি সাইমুন ব্যাঞ্জক, প্রতিনিধি ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সাবেক সদস্য ফিল বেনিওনর, ব্রিটিশ হাইকমিশনের পলিটিক্যাল প্রতিনিধি অ্যাডড্রিন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া পাকিস্তান, ভারত, রাশিয়া, কুয়েতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে যোগ দেন। তাদের কয়েকজন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে ছিলেন, অলি আহমদ, জামায়তের মাওলানা আব্দুল হালিম, সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম, আন্দালিব রহমান পার্থ, শফিউল আলম প্রধান, মোস্তফা জামাল হায়দার, খন্দকার গোলাম মূর্তজা, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জেবেল রহমান গানি, মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, রেদোয়ান আহমেদ, মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, আহমেদ আবদুল কাদের, সাহাদাত হোসেন সেলিম, খন্দকার লুৎফর রহমান, গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা। বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, এম মোরশেদ খান, রাবেয়া চৌধুরী, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, হারুন আল রশীদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, মাহমুদুল হাসান, ওসমান ফারুক, আবদুল মান্নান, মীর নাসিরউদ্দিন, এ জে মোহাম্মদ আলী, মুশফিকুর রহমান, আবদুল হালিম, রুহুল আলম চৌধুরী, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আমীনুল হক, আবদুল কাইয়ুম, জয়নাল আবেদীন, এজেডএম জাহিদ হোসেন, জহুরুল ইসলাম, আহমেদ আজম খান, মিজানুর রহমান মিনু, মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কবির রিজভী, আসাদুল হাবিব দুলু, ফজলুল হক মিলন, মশিউর রহমান, মজিবুর রহমান সারোয়ার, গোলাম আকবর খন্দকার, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, আসাদুজ্জামান রিপন, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুস সালাম, জিএম ফজলুল হক, কাজী আসাদুজ্জামান, সৈয়দ মোয়জ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবীর খোকন, নাজিমউদ্দিন আলম, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, নিতাই রায় চৌধুরী, কারাবন্দি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, শামা ওবায়েদ।