মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩১ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেক্স : ‘ভারত মাতা কী জয়’ স্লোগান দেয়া নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র বিতর্কের মধ্যে ভারতের প্রখ্যাত ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দ জানিয়ে দিয়েছে, ‘ভারত মাতা কী জয়’ শ্লোগান দেয়া মুসলিমদের জন্য জায়েজ নয়। দারুল উলুমে করা এ সংক্রান্ত প্রশ্নকে কেন্দ্র করে ‘দারুল ইফতা’র ৮ সদস্যের মুফতির সমন্বিত একটি বেঞ্চ এ নিয়ে আলোচনায় বসে। এরপরে রেফারেন্স নম্বর ৫৪৫(বি)তে মুফতিরা বলেন, ‘কয়েক বছর আগে ‘বন্দেমাতরম’ ইস্যু উঠেছিল। স্কুলে একে হিন্দু-মুসলিম সবার জন্য পড়া আবশ্যক করা হয়েছিল, এবার ‘ভারত মাতা কী জয়’ স্লোগান মুসলিমদের জন্য আবশ্যক করা হচ্ছে। এই দুটি বিষয় একই।’ দারুল উলুমের মুফতিরা বলেন, ‘বন্দেমাতরম’ বিষয়ে এখানে বলা হয়েছে ভারত আমাদের দেশ। আমরা এবং আমাদের পূর্বপুরুষরা এখানে জন্মেছি। এটা আমাদের মাতৃভূমি। আমরা একে ভালোবাসি কিন্তু এই দেশকে আমরা মা’বুদ (উপাস্য) বলে মনে করি না। মুসলিমরা এক খোদায় বিশ্বাস রাখে। এজন্য তারা খোদা ছাড়া অন্য কাউকে উপাসনা করতে পারে না। এখন ‘ভারত মাতা কী জয়’ স্লোগান দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। আসলে একাংশের বিশ্বাস অনুযায়ী ভারত মাতা একজন ‘দেবী’, যাকে তারা পুজো করে। ভারত মাতা দেবীকে এসব লোকেরা ভারতের মালিক এবং মুখতার বলে মনে করে।
দারুল উলুম দেওবন্দের মতে, ইসলামে বিশ্বাসী মুসলিমরা কখনোই এ ধরণের স্লোগানের সঙ্গে আপস করতে পারে না। ভারতীয় সংবিধান মোতাবেক ভারতের প্রত্যেক ব্যক্তিকে ধর্মীয় স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। কোনো সম্প্রদায়কে এই অধিকার দেয়া হয়নি যে তারা আইনের বিরুদ্ধে কোনো কাজ করবে এবং অন্যদের বেআইনি কাজ করতে বাধ্য করবে। ‘ভারত মাতা কী জয়’ বলা লোকদের সামনে এর অর্থ দেশকে পুজোর শামিল। এজন্য কোনো মুসলিমদের জন্য এই স্লোগান জায়েজ নয়। দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়ায় মুফতি হাবিবুর রহমান, মুফতি মাহমুদ হাসান বুলন্দশাহরি, মুফতি জইনুল ইসলাম কাশেমি, মুফতি ফখরুল ইসলাম কাশেমি, মুফতি ওয়াকার আলী, মুফতি আসাদুল্লাহ, মুফতি নো’মান সীতাপুরি এবং মুফতি মুসআব সই করেছেন।
জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারত বিরোধী স্লোগান দেয়ার অভিযোগ ওঠাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক শুরু হলে গত ৩ মার্চ আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত বলেন, ‘সময় এসেছে নতুন প্রজন্মকে ‘ভারত মাতা কী জয়’ স্লোগান দিতে বলা।’ এ প্রসঙ্গে মিম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বিজেপি-শিবসেনা শাসিত মহারাষ্ট্রের লাতুরে এক প্রকাশ্য জনসভায় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘যদি আমার গলায় ছুরিও ধরা হয় তাহলেও ‘ভারত মাতা কী জয়’ বলব না। কী করবেন ভাগবত সাহেব?’ তিনি আরো বলেন, ‘সংবিধানে কোথাও লেখা নেই যে, ভারত মাতার স্লোগান দেয়া জরুরি। আমি সংবিধানকে সম্মান করি এবং তা করতেই থাকব।’
এ নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হলে মিম প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসির জিভ কেটে আনলে এক কোটি টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেন বিজেপির যুব নেতা ‘ভারতীয় জনতা যুব মোর্চা’ নামে সংগঠনের কাশী এলাকার আঞ্চলিক ভাইস-প্রেসিডেন্ট শ্যাম প্রকাশ দ্বিবেদী। সম্প্রতি মহারাষ্ট্র বিধানসভায় ‘মিম’ দলের বিধায়ক ওয়ারিশ পাঠান ‘ভারত মাতা কী জয়’ স্লোগান না দিতে চাওয়ায় তাকে বাজেট অধিবেশন থেকে বহিষ্কার করা হয়। কয়েকদিন আগে এ সংক্রান্ত এক বিবাদের জেরে দিল্লিতে তিন মাদ্রাসা ছাত্রকে বেধড়ক মারধর করে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা।
এদিকে, মুসলিমদের পাশাপাশি শিখদের শিরোমণি অকালি দল (অমৃতসর) নেতা সিমরনজিৎ সিং মান বলেছেন, ‘শিখরা ‘ভারত মাতা কী জয়’ স্লোগান দিতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘শিখরা নারীদের কোনোভাবেই পুজো করে না, এজন্য তারা ‘ভারত মাতা কী জয়’ বলবে না। সিমরনজিৎ সিং মান বলেন, ‘শিখরা স্রেফ ‘ওয়াহে গুরুজি কী খালসা’ এবং ‘ওয়াহে গুরুজি কী ফতেহ’ বলতে পারে। তারা মায়ের সম্মান করেন। কিন্তু পুজো করেন না।’ যদি শিখরা ‘ভারত মাতা কী জয়’ বলে তাহলে তারা হিন্দুদের মধ্যে শামিল হবে।’ শিখ নেতা মান অবশ্য এখানেই থেমে থাকেননি। তিনি একধাপ এগিয়ে বলেন, ‘বিজেপির জানা উচিত, শিখরা ‘বন্দেমাতরম’ও বলতে পারে না।’ সূত্র: এনডিটিভি