বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪২ অপরাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার : পানি উন্নয়ন বোর্ডের খামখেয়ালীপনায় অবশেষে তলিয়ে যাচ্ছে সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লা উপজেলার একের পর এক হাওর। এখন পর্যন্ত ৪০ শতাংশ বোরো ধান কাটা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দিরাই উপজেলা কৃষি অফিসের লোকজন। তারা জানান, দিরাই উপজেলার উদগল হাওরের ১ হাজার হেক্টর বোরো জমির মধ্যে ৫০ শতাংশ কাটা হয়েছে। এছাড়া বরাম হাওরের ৩ হাজার ২শত হেক্টর জমির মধ্যে ৫০ শতাংশ ও চাপতির হাওরের সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ৪৫ শতাংশ বোরো ধান কাটা হয়েছে। তবে হাওরের প্রকৃত চিত্র আরো বেশি জলে জানা গেছে।
প্রতি বছরই পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ নিয়ে নানা অভিযোগ শোনা গেলেও এর প্রকৃত কারণ এখন পর্যন্ত চিহ্নিত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়ার খবর পাওয়া যায়নি। ফলে প্রতি বছরই বাঁধ বাণিজ্যের নায়করা সরকারের কোটি কোটি টাকা পকেটস্থ করে মুচকি হাসে আর ফসল হারানোর ব্যথায় কৃষকদের বুকফাটা আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠে হাওড়ের বাতাস। গত কয়েক দিনের ব্যবধানে তুফানকাড়ি, বৈশাখী বাঁধ ভেঙ্গে ও চাতল-কলিয়ারকাপন আপারবাঁধ উপচে চাপতি হাওরের ৪ হাজার হেক্টর জমির ধান, মাছুয়া খারারপাড় বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে উদগল হাওরের ৫শত হেক্টর, ফাটাকাওরির বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে ভরাম হাওরের ভাঙ্গাডহর গ্রামের বাকি অংশটুকুও। উপজেলার কালিয়াকোটা হাওর তলিয়ে যাওয়ার আশংকায় রয়েছেন কৃষককুল।
এদিকে শাল্লা উপজেলার জোয়ারিয়া বাঁধ ভেঙ্গে শ্রীহাইল, হোসেনপুর, গোবিন্দপুর, ইছাকপুর ও শংকরপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ফসল তলিয়ে গেছে। তলিয়ে যাওয়ার আশংকায় শাল্লার বৃহৎ ছায়ার হাওরের ফসলও। শাল্লা উপজেলায় ২২ হাজার হেক্টর বোরো জমির মধ্যে ৩০ ভাগ ফসল কাটা হয়েছে বলে কৃষি অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে।
সরেজমিন হাওর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কালনী-দাড়াইন-কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে দিরাই ও শাল্লা উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্মিত সবকটি বাঁধ। কৃষির সাথে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করে বলছেন, সরকার হাওর এলাকার বাঁধ নির্মাণের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও সে টাকা সাধারণ কৃষকের কোন কাজেই আসেনি। তা পাউবোর কর্মকর্তা, ঠিকাদার, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য ও স্থানীয় সরকারদলীয় নেতাদের পকেটস্থ হয়ে গেছে। জানা গেছে, বাঁধ বাণিজ্যের নায়েকরা বাঁধ রক্ষায় কাগজে-কলমে হাজার হাজার বস্তা, বাঁশ ও শত শত শ্রমিক লাগানোর হিসেব দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে। তারা কাজের প্রকৃত ধরণ দেখেই বিল পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।