বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৩ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১
বজ্রপাতে দুই দিনে ৫৭ জনের মৃত্যু

বজ্রপাতে দুই দিনে ৫৭ জনের মৃত্যু

amarsurma.com

bojropat-1আমার সুরমা ডটকম বজ্রপাতে গত দুই দিনে সারা দেশে ৫৭ জন মারা গেছেন। প্রাকৃতিক কারণে দুই দিনে দেশে এত লোকের মৃত্যুর নজির সাম্প্রতিক সময়ে নেই। বজ্রপাতের বা এ ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে একক কোনো কারণ বলছেন না বিশেষজ্ঞরা। তবে তাঁরা বলছেন, প্রকৃতিকে বৈরী করে তোলার পাশাপাশি মুঠোফোনের ব্যবহারসহ জীবনযাত্রার পরিবর্তন এর জন্য দায়ী।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, নদী শুকিয়ে যাওয়া, জলাভূমি ভরাট হওয়া আর গাছ ধ্বংস হওয়ায় দেশে অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা এক থেকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। বিশেষ করে বর্ষা আসার আগের মে মাসে তাপমাত্রা বেশি হারে বাড়ছে। এতে এই সময়ে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর থেকে ভেসে আসা আর্দ্র বায়ু আর উত্তরে হিমালয় থেকে আসা শুষ্ক বায়ুর মিলনে বজ্রঝড় সৃষ্টি হচ্ছে। বেসরকারিভাবে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যার হিসাব রাখা হলেও সরকারিভাবে একে দুর্যোগ হিসেবেই স্বীকার করা হয় না। ফলে কোনো হিসাবও নেই।
তবে সরকারি সংস্থা আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, মে মাসে নিয়মিতভাবে বজ্রপাতের পরিমাণ বাড়ছে। সংস্থাটির হিসাবে ১৯৮১ সালে মে মাসে গড়ে নয় দিন বজ্রপাত হতো। ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে গড়ে বজ্রপাত হয়েছে এমন দিনের সংখ্যা বেড়ে ১২ দিনে দাঁড়িয়েছে। আর হিসাবটা মৃত্যুর সংখ্যায় ধরা হলে ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১ হাজার ৪৭৬ জন।
বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একসময় দেশের বেশির ভাগ গ্রাম এলাকায় বড় গাছ থাকত। তাল, নারিকেল, বটসহ নানা ধরনের বড় গাছ বজ্রপাতের আঘাত নিজের শরীরে নিয়ে নিত। ফলে মানুষের আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা কমত।
বজ্রপাত-বিষয়ক গবেষকেরা বলছেন, এ ছাড়া দেশের বেশির ভাগ মানুষের কাছে এখন মুঠোফোন থাকছে। দেশের অধিকাংশ এলাকায় মুঠোফোন ও বৈদ্যুতিক টাওয়ার রয়েছে। দেশের কৃষিতেও যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। তা ছাড়া, সন্ধ্যার পরে মানুষের ঘরের বাইরে অবস্থান বাড়ছে। আর বেশির ভাগ বজ্রপাতই হয় সন্ধ্যার দিকে। আকাশে সৃষ্টি হওয়া বজ্র মাটিতে কোনো ধাতব বস্তু পেলে তার দিকে আকর্ষিত হচ্ছে।
এদিকে বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, উন্মুক্ত স্থানে, বিশেষ করে ফসলের খেতে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে কৃষিতে বেশি মাত্রায় যন্ত্রাংশ ব্যবহারের একটি কারণ। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আমানত উল্লাহ বলেন, যন্ত্রাংশ বজ্রকে আকর্ষণ বেশি করে। এসব মৃত্যুর কারণ যদি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করা যায়, তবেই যন্ত্রাংশ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে এ মৃত্যুর সংযোগ খোঁজা সহজ হবে। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, বড় কারণের মধ্যে আছে গ্রামে বড় গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া, নদীর শুষ্কতা, জলাভূমি ভরাট, মুঠোফোনের ব্যবহার বৃদ্ধি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিসের গবেষক সমরেন্দ্র কর্মকার বলেন, মার্চ ও এপ্রিলে দেশে বজ্রপাতের পরিমাণ কমছে। আর মে মাসে বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি একটু সচেতন হয়ে বিদ্যুৎ চমকানো দেখলে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিই, তাহলেই মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমে যাবে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তর সারা দেশের ৩৫টি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে পরিমাপ করে দেখেছে, খুলনা জেলার কিছু এলাকা ছাড়া সারা দেশেই বজ্রপাত আঘাত হেনেছে। এমন বিস্তৃত বজ্রসহ ঝড় হওয়ার ঘটনাও আবহাওয়ার বিচারে বেশ ব্যতিক্রমী ঘটনাই বলছেন আবহাওয়াবিদেরা।
ছয় বছরে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনার মধ্যে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন বেশির ভাগ মৃত্যুই হয়েছে উন্মুক্ত জায়গায়। ফসলের খেতে কাজ করতে গিয়ে বা নৌকায় থাকা অনেকে নিহত হয়েছেন। আবার মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় আছে শিশুরা। ঝড়-বৃষ্টি চলাকালে খেলার মাঠে তাদের মৃত্যু হয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com