রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ অপরাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার: আর মাত্র কয়েক দিন পরই পবিত্র ঈদুল ফিতরকে উপলক্ষে করে ব্যবসায়িরা দোকানে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে মালামাল উঠালেও বিক্রি এখন পর্যন্ত জমে ওঠেনি। ঈদকে সামনে রেখে দোকানকে সাজিয়েছেন অপরূপ সাজে। কিন্তু ক্রেতা কম থাকায় তারা অনেকটা হতাশায় রয়েছেন। এমন চিত্র দেখা গেছে দিরাই পৌরসভার বেশ কয়েকটি বিপনী বিতাণ ও মার্কেট ঘুরে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সুনামগঞ্জের অন্যতম ব্যবসাকেন্দ্র দিরাই বাজারের হেপি বস্ত্রালয়ে স্বাভাবিক ব্যবসার চেয়েও মন্দাভাব চলছে। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার নির্মল রায় জানান, গত ঈদের মতো তো নয়ই, বরং আগের স্বাভাবিক ব্যবসার মতোও নয় এই ঈদে। এতে আমাদের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। বেশি দামের কোন মালামাল বিক্রি হচ্ছেনা। শুধুমাত্র মাঝারি ও কম মূল্যের ঈদ কাপড় বিক্রি হচ্ছে। কারণ, ঈদ উপলক্ষে আমরা স্বাভাবিক সময়ে চেয়ে কর্মচারী বেশি রাখি, মালামালও বেশি আনা হয়। কিন্তু তুলনামূলক ব্যবসা হচ্ছে কম। তার মতে, ধানের দাম কম হওয়াতে এ বছর লোকজনের হাতে টাকা কম থাকায় ও বিদেশি টাকাও আগের মতো আসছেনা। তিনি আরো জানান, নারী ও শিশুদের কাপড় চলছে বেশি, এখন পর্যন্ত পুরুষের ঈদ কাপড় তেমন বিক্রি হচ্ছেনা।
দিরাই বাজারের ইনডোর মার্কেট সেন মার্কেটের ব্যবসায়ি রুহুল ফ্যাশনের রুহুল আমীন জানান, এবারের ঈদ বাজার গত বছরের তুলনায় বিক্রি কম হচ্ছে। তার একমাত্র কারণ হচ্ছে ধানের দাম কম হওয়া বলেও তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, তার দোকানে ভারতীয় সাকারা, লেহেঙ্গা পাওয়া যায়। এছাড়া দেশি লং ড্রেস, লং ফ্রক পাওয়া যায়।
একই মার্কেটের মনি ফ্যাশনের স্বত্ত্বাধিকারি ও মার্কেট কমিটির সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন সরদার জানান, এ বছর গতবারের মতো বিক্রি হচ্ছেনা, তাছাড়া সম্প্রতি মার্কেটে একটি চুরির ঘটনায় আমাদের ব্যবসায় প্রভাব পড়েছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের এলাকার লোকজন বেশিরভাগই হচ্ছে কৃষি নির্ভর, কিন্তু এ বছর ধানের দাম কম থাকায়ও আমাদের ব্যবসা ঠিকমতো হচ্ছেনা। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আয়ের সাথে ব্যয়ের তাল মিলাতে পারছেন না বলেই তারা ঈদের আনন্দ থেকে অনেকেই বঞ্চিত।
সেন মার্কেটের অন্যতম ব্যবসায়ি ফ্যাশন ওয়ার্ল্ডের মালিক রুবেল আহমদ তালুকদার জানান, এ বছরের বিক্রি অন্য বছরের মতো হলে একেবারে খারাপ না, কিন্তু টার্গেটের চেয়ে অনেক কম। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে ধানের দাম কম থাকা, তাছাড়া অনেক ক্রেতা এসেছেন তাদের হাতে টাকা কম। কারণ, অনেকেই ঈদের লম্বা ছুটিতে যে ব্যাংকও বন্ধ তা বুঝতে পারেন নি বলেই বড় ধরণের বিক্রি হচ্ছেনা। এছাড়া এ বছর ভারতীয় ‘সাকারা’ ছাড়া বিদেশি তেমন কোন কাপড় বাজারজাত হয়নি। বেশিরভাগ কাপড়ই এবার দেশি হওয়ায় অধিকাংশই নারীদের কাপড় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে দিরাই বাজারের রুজি গার্মেন্টস এন্ড সু স্টোরের মালিক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, এবারের ব্যবসা মোটামুটি ভালো, তবে অন্য বছরের তুলনায় অনেক কম।
একই কথা বলেন পাথারিয়া গ্রামের ভ্রাম্যমাণ কসমেটিকস ব্যবসায়ি জুয়েল মিয়া। তিনি বিভিন্ন কোম্পানী থেকে মাল এনে মৌসুমি ব্যবসা করেন। তার মতে, অন্য বছরের তুলনায় ব্যবসা অনেক কম।
রমজান মাসকে কেন্দ্র করে আরেক মৌসুমি ব্যবসায়ি মারজান আতর হাউসের স্বত্ত্বাধিকারি মাওলানা সুজাত আহমদ। তিনি জানান, গত বছরের মতো এ বছর আতর ও টুপি বিক্রি কম হচ্ছে। মানুষের চাহিদার তুলনায় আয় কম বলেই, তাছাড়া এ বছর ধানের দাম কম থাকায় এর প্রভাবও লক্ষ্যণীয় মনে হচ্ছে।