শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৬ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম: প্রবল স্রোত ও ভয়াবহ নদী ভাঙনের কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি সার্ভিস বেশকিছু দিন থেকেই অচলাবস্থার মধ্যে পড়েছিল এখনও তা অব্যাহত থাকায় যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরিঘাটে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অপরদিকে মাদারীপুরের কাওড়াকান্দি ঘাটে তীব্র যানজটের কারণে দক্ষিণাঞ্চলের ঘরমুখো হাজার হাজার যাত্রীদের দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে বাসে উঠতে হচ্ছে। দুটি ঘাট নিয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো রিপোর্ট আরিচা সংবাদদাতা জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে ঈদে ঘরমুখো যাত্রী ও যানবাহনের উপচে পড়া ভিড়। স্বাভাবিক ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় কর্তৃপক্ষ পারাপারে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে ঈদে বাড়ি ফিরছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। নদীতে অব্যাহত প্রবল স্রোত ও নদী ভাঙনের কারণে এ নৌ-রুটে স্বাভাবিক ফেরি চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কবে এর অবসান হবে তা বলতে পারছেন না কেউ। ফলে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটের যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে। এ দু’টি ঘাট এখন ভোগান্তির ঘাটে পরিণত হয়েছে। রবিবার সকালের দিকে যাত্রীবাহী বাস ও ছোট যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পাটুরিয়া ঘাট ছাড়িয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ১৪/১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃতি হয়ে পড়ে। যানজটের কারণে যাত্রীরা তিন/চার কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে, রিকশা ও ভ্যান যোগে ঘাটে পৌঁছে নদী পারাপার হচ্ছে। পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে আরিচা ঘাটের অদূরে ঢাকা-আরিচা মহসড়কের উপর আটকে রাখা হয়েছে। বিকেলের দিকে কিছুটা কমলেও সোমবার আবার বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, পদ্মা নদীর দৌলতদিয়া প্রান্তে স্রোত এতই বেশী যে ফেরিগুলো ঘাটে ভিড়তে ভিশন অসুবিধা হচ্ছে। যাত্রী ও যানবাহন বোঝাই করে পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে যাওয়া ফেরি দৌলতদিয়া ঘাটে ভিড়তে না পেরে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছে। এতে যাত্রীদের যেন মড়ার ওপর খড়ার ঘাঁ এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এমনিতেই ৮/১০ ঘণ্টা করে ঘাটে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। এর পর ফেরি চলাচলে বিড়ম্বনা। কে-টাইপ (ছোট) ফেরি কপোতি শনিবার দিবাগত রাত ৮টায় পাটুরিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে দৌলতদিয়া ঘাটের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। তীব্র স্রোতের বিপরীতে অভার স্পিডে চলতে গিয়ে ফেরিটি ঘাটে ভিড়ার আগেই ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। এসময় ফেরিটি দৌলতদিয়ার ভাটিতে গিয়ে নোঙর করে থাকতে বাধ্য হয়। এরপর বিআইডব্লিউটিস’র উদ্ধারকারী জাহাজ আইটি-৮, ৩৮৯ নং দিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা পর রাত ৯টায় উদ্ধার করে দৌলতদিয়া ঘাটে ভিড়ানো হয়। ফেরিটি বর্তমানে পাটুরিয়া ঘাটের ভাসমান কারখানায় মেরামতে রয়েছে। রো-রো ফেরি বীর শ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান এর মাস্টার আব্দুল হাই জানান, তার ফেরিটি যাত্রী ও যানবাহন বোঝাই করে শনিবার বেলা ১:৩০টায় পাটুরিয়া ঘাট থেকে দৌলতদিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ফেরিটি বিকেল ৩টায় দৌলতদিয়া ৪ নং ঘাটের কাছে পৌঁছালে তীব্র স্রোতের ধাক্কায় ২ কিলোমিটার ভাটিতে চলে যায়। এসময় রো-রো অপর একটি ফেরি ড. গোলাম মওলা দিয়ে উদ্ধারের চেষ্ট করেও দৌলতদিয়া ঘাটে ভিড়ানো সম্ভব হয়নি। পাঁচ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পুনরায় ফেরিটি পাটুরিয়া ঘাটে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। এরপর যাত্রী ও যানবাহন আনলোড করে অন্য ফেরিতে পার করা হয়। পানির প্রবল স্রোতের বিপরীতে চলাচল করতে না পাড়ায় বর্তমানে এ ফিরিটি পাটুরিয়া ঘাটে নিকট নোঙর করে রাখা হয়েছে। গত শনিবার নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান দৌলতদিয়া ঘাট পরিদর্শনে এসে দৌলতদিয়া ৩ নং ঘাটটি বর্তমান অবস্থান থেকে ১শ’ ফুট উপরে নিয়ে দ্রুত পুনস্থাপনে নির্দেশ দেন। কর্তৃপক্ষ মন্ত্রীর দেখিয়ে দেয়া স্থানে পুনস্থাপন করে রোববার বেলা ২টায় ৩ নং ঘাটটি চলু করে। বিআইডব্লিউটিসি’র সহকারী প্রকৌশলী সুবল চন্দ্র সরকার জানান, ঈদ উপলক্ষে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে খানজাহান আলী ও আমানত শাহ নামের আরো দু’টি ফেরি যোগ হয়ে মোট ১৯টি ফেরি রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি রো-রো, ৩ টি কে-টাইপ, ৫টি ইউটিলিটিসহ মোট ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। তীব্র স্রোতের বিপরীতে চলতে না পাড়ায় রো-রো ২টি ফেরি বীর শ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ও বীর শ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান পাটুরিয়া ঘাটেই নোঙর করে রাখা হয়েছে। আবুল হাসান সোহেল, কাওরাকান্দি ঘাট (মাদারীপুর) থেকে ফিরে: রোববার ভোর থেকেই ঘরে ফেরার প্রতিযোগিতা দেখা গেছে রাজধানী ঢাকার সাথে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের করিডোর খ্যাত মাদারীপুর জেলা শিবচরের কাওড়াকান্দি ঘাটে। লঞ্চ, স্পীডবোট, ফেরিতে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ ছিল চোখে পড়ার মত। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে কাওড়াকান্দি ঘাট এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন এই রুটে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকরা। এছাড়া পারাপারের অপেক্ষায় আটকে আছে অর্ধশত গরু ও পণ্য বোঝাই ট্রাক। অতিরিক্ত গাড়ীর চাপে অনেককেই কাওড়াকান্দি ঘাটে নেমে আড়াই কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পাঁচ্চর বাইপাস সড়কে এসে গাড়িতে উঠতে হচ্ছে। কাওড়াকান্দি ফেরিঘাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাদারীপুর জেলার শিবচরের কাওড়াকান্দি ঘাটে দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার ঘরমুখো যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। লঞ্চ-ফেরি-স্পিডবোট থেকে নেমে যাত্রীদের প্রায় আড়াই কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পরিবহনে উঠতে হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের ঘরমুখো হাজার হাজার যাত্রীকে। এছাড়াও ঘাট থেকে যে সকল পরিবহন ছাড়ছে যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে মহাসড়কে। অপরদিকে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বাড়তি ভাড়ার আদায় করছে পরিবহনগুলো। প্রশাসনের নিরব ভূমিকার কারণে মাদারীপুরের কাওড়াকান্দি ঘাটে ঘরমুখো হাজার হাজার যাত্রীর চরম দুর্ভোগ ও বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে বলে সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ। রাস্তার উপর যত্রতত্র গাড়ি রাখা ও কাউন্টার পার হওয়ার পর রাস্তার উপর থেকে যাত্রী উঠানোয় যানজটের পরিমাণ কমছে না বলে অভিযোগ করছেন অসংখ্য যাত্রীরা। এদিকে পরিবহনে বরাবরের মতো রয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। এ বিষয়ে প্রশাসনও তেমন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত চরম দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে কাওড়াকান্দি ঘাট পার হতে হচ্ছে ঘরমুখো যাত্রীদের। কাওড়াকান্দি ঘাট সংলগ্ন ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের রাস্তাজুড়ে দুই সারিতে গত ৩/৪ দিন ধরে আটকে রয়েছে পণ্যবাহী পরিবহন ও গরুবাহী ট্রাক কয়েক শত ট্রাক। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গরুবাহী ট্রাক পার করা হলেও যানজটের কবলে পরে দুই থেকে তিন দিন ধরে আটকে আছে প্রায় অর্ধশতাধিক গরুবোঝাই ট্রাক। সঠিক সময়ে গরুগুলো রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাটে উঠানো নিয়ে শংকিত রয়েছেন এ সকল গরুর ব্যবসায়ীরা। এদিকে পরিবহনে বরাবরের মতো রয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। এ বিষয়ে প্রশাসনও তেমন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। উপরন্ত যানজটের কারণে ঘাট থেকে নেমে ২ আড়াই কি.মি. পথ হেঁটে গাড়িতে উঠতে দুর্ভোগ পোহাতে যাত্রীদের। বরিশালগামী একাধিক যাত্রীদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, লঞ্চ ঘাট থেকে নেমে প্রায় আড়াই কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে গন্তব্যের পরিবহনের উঠেছেন তারা। তবে গুণতে হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়েও দ্বিগুণ, তিনগুণ ভাড়া। এদিকে স্বল্প দূরুত্বের যাত্রীরা পরেছে চরম বিপাকে। কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে শিবচর, পাঁচ্চর, আড়িয়াল খাঁ ব্রিজ ঘাট, সূর্য্যনগর, ভাঙ্গা, সদরপুর রুটের ছোট গাড়িগুলো তিনগুণেরও বেশি ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। অপরদিকে কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রতিবারের মতো দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ ভাড়া আদায় করছে কাওড়াকান্দি মাইক্রোবাস মালিক শ্রমিকরা। এর ভাড়া মাত্রা রাতের বেলা আরো বেড়ে যাবে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় প্রশাসনের সামনেই হচ্ছে বলে একাধিক যাত্রীর অভিযোগ। অন্যদিকে পদ্মায় নাব্যতা সংকটের কারণে ফেরি চলাচল সীমিত হওয়ায় এ বছর দুর্ভোগ বেড়েছে। বিআইডব্লিউটিসি’র কাওড়াকান্দি ঘাটের ব্যবস্থাপক সালাম মিয়া জানান, নৌরুটে সচল থাকা ১৩টি ফেরি ছিল। ঈদ উপলক্ষে রামশ্রী ও খানজাহান আলী নামের আরো ২টি ফেরি আনা হয়েছে। বর্তমানে এই রুটে ১৫টি ফেরি চলাচল করছে। তবে সবগুলো যাত্রীসহ যানবাহন বোঝাই কম করছে। লৌহজং টার্নিয়ে নাব্যতা সংকটের কবলে ফেরিগুলো ডুবোচরে আটকে যাচ্ছে। ফেরিগুলো এখন ও ওয়ান-ওয়ে চলাচল করছে। বর্তমানে রো-রো ফেরিগুলো চলছে তবে রাতের বেলা ফেরি চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মাদারীপুর জেলা সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আনছারউদ্দিন জানান, কাওড়াকান্দি ঘাট এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা ঘাটে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। কোন রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।