স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনকারী, ডাকসুর সাবেক ভিপি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি’র কেন্দ্রীয় সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেছেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এক পায়ে চলছে, দেশ এক ব্যক্তির শাসনাধীন, জাতীয় সংসদে বিরোধী দল নেই, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত ও চুরি হচ্ছে আর সংবিধান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন উপযোগী নয়। নিউইয়র্কে এক সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে আ স ম আব্দুর রব এসব কথা বলেন। সিটির জ্যাকসন হাইটসস্থ সাপ্তাহিক দেশ বাংলা ও বাংলা টাইমস মিলনায়তনে গত ৪ জুলাই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সাপ্তাহিক দেশবাংলা সম্পাদক ডা. চৌধুরী এস হাসান।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আ স ম আবদুর রব বলেন, আজ দেশের ১৬ কোটি মানুষ বাকরুদ্ধ। জনগণের সাংবিধানিক, রাজনৈতিক, নাগরিক, মৌলিক অধিকার নিয়ন্ত্রিত। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর ১৬ কোটি মানুষ না হয়ে আওয়ামী লীগ দেশের মালিক হওয়ায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার বিরোধ সৃষ্টি হয়। স্বাধীনতার ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধু আর জিয়ার নাম মুছে ফেলা যাবে না। আমিত্ব বিলুপ্ত ছাড়া দেশের সঠিক ইতিহাস লিখা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, লিবিয়ার সঠিক ইতিহাস লিখতে ১০০ বছর লেগেছে।
তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান, গণতন্ত্র আর জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে ‘সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। দেশের জনগণ রাজনীতিতে দুই দলের বিকল্প শক্তি চায়। আ স ম রব আবেগ-আপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘আই অ্যাম এ ডেড হর্স বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমি-আমরা দেশ দিয়েছি। আমাদের কাছে আপনারা আর চান কেন?’। তিনি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে সিরাজুল আলম খান, তোফায়েল আহমেদ, শাহজাহান সিরাজ, নূরে আলম সিদ্দিকী, শেখ কামাল, মরহুম আব্দুর রাজ্জাক, মরহুম আব্দুল কদ্দুস মাখন প্রমুখকে স্মরণ করে বলেন স্বাধীনতার পর আমাদেরকে ‘বীর অধম’-এরও মর্যাদা দেয়া হয়নি। আমার মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট নেই। আমাকে কে দেবে মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট?
সাংবাদিক সম্মেলন সঞ্চালনায় ছিলেন সাপ্তাহিক বাংলা টাইমস সম্পাদক তাসের মাহমুদ। উপস্থিত ছিলেন- জেএসডি ইউএস’র শাখার সভাপতি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন লিটন ও সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দীন আহমদ শামীমসহ এডভোকেট মুজিবুর রহমান, জাফর চৌধুরী, সারোয়ার হোসেন, আহসান মাসুদ প্রমুখ।
আ স ম আবদুর রব বলেন, প্রবাসে থেকেও দেশকে হৃদয়ে ধারণ ও দেশের উন্নয়ন আগ্রগতিতে ব্যাপক অবদান রাখার উদ্যোগী বাংলাদেশি, বাঙালী, ভাই-বোনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন ও মিলিত হতে পেরে আমি আনন্দিত এবং ঈদেও তাদের আন্তরিকতায় আমি কৃতজ্ঞ। এছাড়া ঈদের রাত থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানগুলোর নিউজ করার জন্যও আপনাদেরকে ধন্যবাদ। তিনি বলেন, আমার নিউইয়র্ক আসার উদ্দেশ্য হলো হার্টসহ শারীরিক আনুসাঙ্গিক রুটিন চেক আপ। ৬ আগস্ট বৃহস্পতিবার সর্বশেষ চেক আপ শেষ হলে ১০ আগস্ট মিউনিক (জার্মানি)-এর প্রবাসী বাঙালীদের আমন্ত্রণে একটি গেট-টুগেদার এবং সেখান থেকে প্যারিস (ফ্রান্স)-এ দুটি অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে দেশে ফিবো।
আ স ম রব বলেন, আমার জীবনে ফুলটাইম পলিটিক্স ছাড়া বৈষয়িক স্বার্থে আমি কোন ব্যবসা-বাণিজ্য-শিল্প কারখানা করাতো দূরের কথা-চিন্তাও করিনি। বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি, স্ত্রীর খামার ও একটি রাবার ফার্ম দিয়ে সংসার চলে। নেতা-কর্মীদের অনুদান ও শুভাকাঙ্খীদের সাহায্য-সহযোগিতায় দল চলে। আমার মত ফুলটাইম রাজনীতিবিদ বর্তমানে বেঁচে আছে হাতগোনা কয়েকজন মাত্র। বাকী জীবন জনগণের জন্যই কাটিয়ে দিতে চাই। তিনি বলেন, রাজনীতিকে বলা হয় ‘আর্ট অব পসিবিলিটি’। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের স্বপ্ন ছিল, একটি স্বাধীন জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। প্রয়োজনে তার জন্য জীবন দেয়া। যে রাষ্ট্রে প্রশাসন, বিচার বিভাগে উপনিবেশিক কাঠামোর পরিবর্তন ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও জনগণকে রাষ্ট্রের মালিক এবং জনগণের নিকট সরকারের জবাবদিহিতা থাকবে। কিন্তু এসব এখনও স্বপ্নই রয়ে গেল।