মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০২ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম: অতিরিক্ত ওজন শরীরের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত ওজন ধীরে ধীরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দিতে থাকে। এছাড়াও হার্টের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ রোগের সংক্রমণ হয়। আর তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাটা জরুরি। প্রায় প্রত্যেকেরই চা পানের অভ্যাস রয়েছে। সুতরাং ওজন কমানোর দাওয়াই যদি চা হয়, এর চেয়ে সহজ উপায় তাহলে আর কি হতে পারে। স্বাস্থ্য বিষয়ক খ্যাতনামা পত্রিকা রিডার্স ডাইজেস্ট অনলাইনের প্রতিবেদন অনুসারে জেনে নিন, ওজন কমাতে সহায়ক সেরা ১০ চা।
হোয়াইট টি : হোয়াইট টি বা সাদা চা শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য করে। এই চায়ের স্বাদ তেমন ঝাঁঝাল নয়। তবে এটি যখন আপনার শরীরের চর্বির কাছাকাছি যাবে তখন এর কার্যক্রম ভিন্ন হয়ে যায়। ২০০৯ সালে ‘নিউট্রেশন অ্যান্ড মেটাবলিজম’ নামক জার্নালে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, সাদা চায়ের নির্যাস শরীরের চর্বি স্তর কমাতে সাহায্য করে এবং ফ্যাটি টিস্যু যেন বৃদ্ধি না পেতে পারে তা প্রতিরোধ করে। এই চা পানের কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলেন, এই চা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দ্বারা সমৃদ্ধ, যাকে ইসিজিসি বলা হয়।’
গ্রিন টি : ইসিজিসি এবং ক্যাফেইনসমৃদ্ধ গ্রিন টি (সবুজ চা), যা ওজন কমানোর আরো একটি ওষুধ। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ওবেসিটি-তে ১১টি গবেষণার ফলাফল ও বিশ্লেষণ এর ওপর ভিত্তি করে এই তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, সবুজ চায়ে কালো রঙের সাধারণ চায়ের তুলনায় খুব কম ক্যাফেইন থাকে। সবুজ চা দিনের যেকোনো সময় পান করা যায় এবং এই চা রাতে ঘুমের কোনো ব্যাঘাত ঘটায় না।
ইয়ার্বা মেইট টি : পাতা এবং সহচর উদ্ভিদ থেকে তৈরি দক্ষিণ আমেরিকার ইয়ার্বা মেইট চা ৩টি রাসায়নিক উপাদান বহন করে। সেগুলো হল ক্যাফেইন, থিওফিলিন এবং অন্যটা হল থিওব্রমিন। এক গবেষণায় দেখা যায়, প্রাণীরা যে উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার খেয়ে থাকে এবং পরবর্তীতে ইয়ার্বা মেইট এর পাতা খেয়ে থাকে, ফলে তাদের রক্তের শর্করার মাত্রা কম থাকে। ২০১৫ সালে ‘বিএমসি কমপ্লিমেন্টারি অ্যান্ড অল্টারনেটিভ মেডিসিন’ নামক জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, যে সকল স্থূলকায় মানুষ ১২ সপ্তাহের বেশি ইয়ার্বা মেইট তাদের ওষুধ হিসেবে গ্রহণ করেছে তারা অন্যান্যদের তুলনায় অধিকতর মাত্রায় চর্বি কমাতে সক্ষম হয়েছে। ইয়ার্বা মেইটকে কফির বিকল্প হিসেবেও ধরা হয়ে থাকে।
অলং টি : অলং চা চর্বি কমাতে সাহায্য করে। এর পাতাগুলো আংশিকভাবে জারিত হয়ে থাকে (যেমন কালো চা, যা পুরোপুরিভাবে জারিত থাকে)। এটি দেখতে নরম হলেও এর স্বাদ অত্যন্ত ঝাঁঝাল। ২০০৯ সালের একটি চাইনিজ গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই চা মানব শরীরের চর্বি বিপাকে সাহায্য করে। স্থূলকায় এবং মাত্রাতিরিক্ত ওজনের মানুষেরা যখন প্রায় ৬ সপ্তাহের মতো এই চা পান করে, ফলাফল হিসেবে তাদের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ ২ পাউন্ড ওজন এবং ১২ শতাংশ ভুঁড়ি কমাতে সক্ষম হয়।
ব্ল্যাক টি : ব্ল্যাক টি চর্বি শোষণ রোধে সক্ষম। এই চায়ের সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। এই চা ডায়াবেটিস এর প্রতিরোধক হিসেবেও বিবেচিত। গবেষকরা প্রাণীদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তে সম্মত হন যে, অতি উচ্চ মাত্রার চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণের পর হজমের সময় ব্ল্যাক টি চর্বি শোষণে বাধা দিয়ে ওজন বৃদ্ধি রোধ করে। যদিও এই গবেষণা প্রারম্ভিক পর্যায়ের কিন্তু ব্ল্যাক টি পলিফেনলস, থিয়াফ্ল্যাভিনস, থিয়ারুবিগানস নামক তিনটি উপাদান দ্বারা সমৃদ্ধ যা মূলত খাবারের চর্বি শরীরে প্রবেশ হতে বাধা দেয়।
পিপারমিন্ট টি : পিপারমিন্ট টি বা মেন্থল চায়ের ঘ্রাণ ক্ষুধা নিবারণ করতে পারে! এই চা পানের সময় একটু লম্বা শ্বাস নিয়ে তবেই পান করা ভালো। হুইলিংজেসুইট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় বলা হয়, যেসকল মানুষ দুই ঘণ্টা পর পর টানা ৫ দিন এই তাজা গন্ধের চা গ্রহণ করেছে তাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ এবং ক্যালরি কম ছিল। এটাও বিশ্বাস করা হয় যে, এই চায়ের ঘ্রাণ অনেক শক্তিশালী এবং ক্ষুধা দূর করতে খুবই কার্যকর উপায়।
মেতচা টি : মেতচা চা সবুজ চা পাতা থেকে তৈরি। এতে ইসিজিসি এর পরিমাণ অনেক। পানিতে ফুটিয়ে খাওয়ার কারণে আমরা এই চা পাতার প্রায় পুরো অংশের উপাদানই পেয়ে থাকি এবং এতে ইসিজিসি রাসায়নিক উপাদানের মাত্রা বেশি থাকে। কলোরাডো স্প্রিংস এর ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো কর্তৃক পরিচালিত এক গবেষণা তথ্য থেকে জানা যায়, গ্রিন টি থেকে মেতচা টি ১৩৭ গুণ বেশি ইসিজিসি প্রদানে সক্ষম, যা আমাদের বিপাক প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।
জিনজার টি : জিনজার টি বা আদা চা ক্ষুধা নিবারণে সহায়ক এবং এটি অল্প খাদ্যে পরিতৃপ্তি লাভের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যখন আপনি কোনো উদ্যমী কাজ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখন এক কাপ আদা চা পান করে যান। প্রদাহ কমাতে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে এই চা পান স্বাস্থ্যকর এবং কার্যকরী। ‘মেটাবলজিম’ নামক জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, যেসকল ব্যক্তি সকালের নাস্তার সঙ্গে আদা চা পান করে তাদের ক্ষুধার হার কমে যায় এবং অল্প খেয়ে সন্তুষ্ট হওয়ার ক্ষমতা বাড়ে।
ফেনেল টি : ফেনেল টি বা মৌরি চা ঘুমের মধ্যে চর্বি কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। মৌরি চায়ের মতো কিছু খাবার মানব শরীরে ‘মেলাটনিন’ নামক হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। যা পরবর্তীতে রাত্রে ঘুমাতে সাহায্য করে। ইউনিভার্সিটি অব গ্রানাডার এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৌরি চা ওজন বৃদ্ধি হ্রাস করে এবং স্থূলকায় মানুষের হৃদরোগ হবার সম্ভাবনা কমায়।
ক্যামোমিল টি : উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তায় যারা নিমজ্জিত তাদের জন্য ক্যামোমিল চা আদর্শ। এই চা উদ্বেগ দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্য করে। আর এই কারণেই ঘুম বিশেষজ্ঞরা ঘুমাতে যাওয়ার আগে এই চা পানের কিছু কারণ নির্ধারণ করেছেন। প্রথমত, এই চা রাতে আপনার শ্বাস প্রশ্বাসের গতিবিধি স্বাভাবিক করে, যা আপনাকে ঘুমোতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করে তোলে। দ্বিতীয়ত, এর নির্যাস ক্যাফেইন মুক্ত। যার কারণে এই চা পানে রাতে ঘুম না আসার বা জেগে থাকার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিবে। তৃতীয়ত, ক্যামোমিল চায়ে ফ্ল্যাভোনয়েডস জাত এপিজেনিন নামক একটি ঔষধি গুণ রয়েছে, যা আপনার স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করবে এবং ঘুমোতে যেতে সাহায্য করবে। পরিপূর্ণ ঘুম স্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় বলে, ক্যামোমিল চা পানের অভ্যাসকে নিত্যদিনের সঙ্গী করাটা ভালো।