শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৫ পূর্বাহ্ন
মোঃ মানিক মিয়া, জামালগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে পাকিস্তানের জাতির পিতা কায়দে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নামে ‘জিন্নাহ মেমোরিয়েল’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করার জন্য লিখিতভাবে দাবি জানানো হয়েছে। সোমবার দুপুরে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে লিখিতভাবে দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর জামালগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি আকবর হোসেন। আবেদনের অনুলিপি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য, শিক্ষা সচিব, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রদান করা হয়েছে।
লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেন, জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজার ইউনিয়নে পাকিস্তান-ভারত বিভাজনের পর ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জাতির পিতা কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নামে বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর, ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের পর মুক্তিযোদ্ধারা বিদ্যালয়ের নামটি পরিবর্তনের দাবি জানান। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ও বিগত কয়েক সরকারের শাসনামলে কার্যক্রমটি থমকে দাঁড়ায়। বর্তমানে স্বাধীনতার ৪৫তম বিজয় উৎসব পালন করবে দেশ। অথচ বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশে একটি উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখনও পাকিস্তানের জাতির পিতার নামে নামকরণ রয়েছে। বিষয়টি স্বাধীন বাঙ্গালি জাতির জন্য কলংকের। ৩০ লক্ষ শহীদ আর ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি লাল-সবুজের পতাকা। আর পরাজিত পাকিস্তানী বাহিনী জাতির পিতার নামে বিদ্যালয় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ও দেশবাসি কোনভাবেই তা মেনে নিতে পারছে না।
লিখিত আবেদনে পাকিস্তানের জাতির পিতা কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নাম পরিবর্তন করে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে অথবা ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে জামালগঞ্জের সাচনা বাজারের যুদ্ধে শহীদ বীরবিক্রম সিরাজুল ইসলামের নামে নামকরণ করার জন্য জোর দাবি জানান।
উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ভারত যুদ্ধের পর দেশ বিভাজনের সময়ে জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজার ইউনিয়নের রুপাবালী আর দক্ষিণ সুনামগঞ্জের কান্দাগাঁও গ্রামবাসির উদ্যোগে প্রথম থেকেই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে নাম নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে রুপাবালী গ্রামের ভূমিদাতা আব্দুর রাজ্জাক তৎকালীন পাকিস্তানের জাতির পিতাকে খুশি করতে তার নামে বিদ্যালয়ের নাম রাখেন ‘জিন্নাহ মেমোরিয়েল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হবার পর এক দফা উদ্যোগ গ্রহণ করেন এলাকার কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭৫ সালে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর আর বাস্তবে রূপ নেয়নি নাম পরিবর্তন করার। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় তরুণ প্রজন্মের কয়েকজন ব্যক্তি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করলে প্রশাসনের নজর কাড়ে। এলাকাবাসিসহ নতুন প্রজন্মের জোরালো দাবি দ্রুত বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে জাতির কোন শ্রেষ্ঠ সূর্য সন্তানের নামে বিদ্যালয়টি নাম করণের।