রবিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২৯ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : প্রিয় মানুষকে ভালোবেসে মানুষ কত কিছুই না উপহার দেয়। আর সেই প্রিয় মানুষটি যদি হয় দেশের প্রধানমন্ত্রী তাহলে তো উপহারটা হওয়া চাই নিখুঁত ও পরিপাটি। প্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে একটি চেয়ার তৈরি করেছেন মৌলভীবাজারের এক দিনমজুর। বঙ্গবঙ্গু কন্যার জন্য তৈরি করা চেয়ারটির ওজন দশ মণ দশ কেজি। এক নজর চেয়ারটি দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন এলাকার মানুষজন। কেউ কেউ বসতে চাইলেও কাউকে বসতে দেয়া হচ্ছে না। দিনমজুর আতিক হাসানের ভাষ্য, ‘এই চেয়ারে কেউ বসতে পারবে না। একমাত্র বঙ্গবঙ্গু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই বসবেন এই চেয়ারে।’ জানা গেছে, কুলাউড়া উপজেলার হিঙ্গাজিয়া গ্রামের এক গরীব মায়ের ছেলে আতিক হাসান। তার বয়স যখন ৮ বছর তখন সহায় সম্পদ বিক্রি করে তার বাবা সৌদি আরব পাড়ি জমান। সৌদি আরবে যাওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি তার কোনো খোঁজ মেলেনি।
জীবিকার অন্বেষণে বাধ্য হয়ে কৈশোরেই আতিক বের হন কাজের সন্ধানে। আর ভাগ্যে জুটে গ্রামেরই এক কাঠমিস্ত্রি রিপন সূত্র ধরের জোগালী/হেলপার হিসাবে। শিখতে থাকেন কাজ। এরপর এক সময় সিদ্ধান্ত নেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার জন্য একটি চেয়ার তৈরি করবেন। আর তার অদম্য ইচ্ছা শক্তির বলে নিজের চরম দারিদ্রতার মাঝেও ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে শুরু করেন চেয়ার তৈরির কাজ। আস্তে আস্তে সময় নিয়ে তৈরি করেন সাড়ে ৭ফুট উচ্চতা ও তিন ফুট ৪ ইঞ্চি প্রস্তের দৃষ্টিনন্দন একটি চেয়ার। চেয়ারের মধ্য দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, জাতীয় ফুল শাপলা ও আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা।
এ ছাড়াও বিভিন্ন জাতের ফুলের কারুকাজসহ চেয়ারটিতে রয়েছে চা গাছের কুড়ি, মাছের আঁশ, আনারসের চোখ, আঁখের গিট, শংঙ্খ মোড়া, হাতির সুর, কলসি ও মার্বেলসহ অসংখ্য প্রতীকী ডিজাইন। চেয়ারের সঙ্গে রয়েছে গোলাকৃতির একটি পা-দানিও। এর মধ্যে সোনালি ও বার্নিশ কালার ছাড়াও লাল, কালো সবুজ ও সাদাসহ বিভিন্ন রং এর সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন চেয়ারটিতে। আর কাজ শেষ করে যখন চেয়ারটি কাগজে মুড়িয়েছেন এর জন্য তাকে ৫ কেজি গেজেট/পুরাতন পেপার ব্যবহার করতে হয়েছে।
এদিকে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর চেয়ারের কাজ গত বৃহস্পতিবার শেষ হওয়ার খবর প্রচার হলে চেয়ারটি দেখতে দলে দলে লোকজন ভীড় করছেন তার দোকানে। তবে কিভাবে এ চেয়ারটি প্রধানমন্ত্রীকে দিতে হবে এ বিষয়টি এখনও জানেন না আতিক।
এদিকে, এলাকাবাসী প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি করেন, তিনি যেন এটি সংগ্রহের ব্যবস্থা নেন। হতদরিদ্র আতিকের এই চেয়ারটি প্রধানমন্ত্রী যদি গ্রহণ করেন তা হলে তার কর্মের স্বার্থকতা পাবে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। এ ব্যাপারে আতিক হাসান জানান, কাজের ফাঁকে ফাঁকে অল্প অল্প কাঠ যোগাড় করে তিনি বাড়িতে বসে চেয়ারটি তৈরি করেছেন। তবে বেশির ভাগ কাজই তিনি করেছেন রাতে।
তিনি আরও জানান, ৫ বছর আগে কারিতাস থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে এই কাজের শুরু করেন। বর্তমানে এই টাকাও ফেরত দিয়ে দিয়েছেন। চেয়ারটি তৈরি করার পর যারা জেনেছেন তারা এসে দেখে যাচ্ছেন। অনেকেই এই চেয়ারে বসে ছবি তুলতে চান কিন্তু তিনি তাদের বসতে দিচ্ছেন না।